পথশিশু থেকে রহস্যময় ভাবে হয়ে গেলেন খ্যাতনামা চিত্রশিল্পী!
স্পেনের একজন সফল চিত্রশিল্পী হিসেবে বিশ্বের অনেক দেশেই সুনাম থাকলেও নিজ খুব একটা পরিচিত নন লিতা ক্যাবেলাত। ইতিমধ্যে তার আঁকা চিত্রের মূল্য ছয় অঙ্ক অতিক্রম করেছে। অথচ নামী এই শিল্পীকে তার বাল্যকাল কাটাতে হয়েছে রাস্তায় রাস্তায়। আর পাঁচটা পথশিশুর মতোই বেড়ে উঠেছেন তিনি।
নিজের স্টুডিওতে লিতা
স্পেনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় গ্রাম অরাগনে ১৯৬১ সালে জন্ম নেন লিতা। ছোটবেলায়ই গ্রাম ছেড়ে মায়ের সঙ্গে চলে এসেছিলেন স্পেনীয় শহর বার্সেলোনাতে। সেখানে একটি যৌনপল্লী চালাতেন লিতার মা। আর লিতা থাকতেন তার নানির কাছে। তবে বেশিরভাগ সময়টা তার কাটাতে হতো রাস্তায়।
জীবনে কখনোই স্কুলে যাওয়ার সুযোগ হয়নি লিতার। এমনকি কোনোদিন চিন্তাও করেননি একদিন সফল চিত্রশিল্পী হবেন তিনি। ২০১৪-১৫ সালে চিত্রশিল্প বিষয়ক সংগঠন আর্টপিস’র প্রতিবেদন অনুসারে শিল্পকর্ম বিক্রির দিক থেকে স্পেনীয় চিত্রশিল্পীদের মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিলেন লিতা। ১ লাখ ডলার পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে তার আঁকা চিত্র।
১০ বছর বয়সে নিজের নানিকে হারিয়ে শেষ পর্যন্ত লিতার আশ্রয় হয় বার্সেলোনার একটি এতিমখানায়। তার বয়স যখন ১২ তখন সেখান থেকে তাকে দত্তক নেয় ক্যাটালনের একটি পরিবার। তাদের মাধ্যমেই প্রথম চিত্রশিল্পের সঙ্গে পরিচয় ঘটে লিতার।
এই ছবিটি দেখেই চিত্র শিল্পে অনুপ্রাণিত হন লিতা
তার বয়স যখন ১৩ তখন একদিন তার দত্তক নেয়া মা-বাবার সঙ্গে রাজধানী মাদ্রিদের প্রাডো জাদুঘরে একটি চিত্র প্রদর্শনী দেখতে যান। সেখানে গিয়ে দেখেন স্পেনীয় চিত্রশিল্পী ফ্রান্সিসকো গয়ার ‘পিলগ্রিমেজ টু স্যান ইসিরডো’ নামের একটি চিত্র। এটা আঁকা হয়েছিল ১৮২০ থেকে ১৮২৩ সালের মধ্যে। সেখান থেকেই চিত্রকর্মের প্রতি অনুপ্রাণিত হন লিতা।
১৩ বছরের একটি মেয়ের জন্য নিঃসন্দেহে শুরুটা অত্যন্ত কঠিন ছিল। তবে তাতে হার মানেনি লিতা। পরে স্কুলে ভর্তি হলেও সেখানে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে তাকে। ধীরে ধীরে উন্নতি ঘটতে শুরু করে তার। লিতার ভাষায়, লিখতে শেখাটা তার জন্য অত্যন্ত কঠিন ছিল।
শেষ পর্যন্ত সফলতার শিখরে উঠতে পেরেছেন লিতা। গ্রাজুয়েশন শেষ করার পর থেকে নেদারল্যান্ডসে বসবাস করছেন তিনি। তবে একজন স্পেনীয় হিসেবেই পরিচয়টা দেন লিতা। তার ভাষায়, ‘আমি একজন স্পেনীয় এবং সারাজীবন স্পেনীয় থাকবো।’ নিজের মা সম্পর্কে বলতে গিয়ে লিতা বলেন, ‘আমাকে রাস্তায় ফেলে যাওয়ার জন্য আমি তাকে ক্ষমা করে দিয়েছি।’
মন্তব্য চালু নেই