নৌমন্ত্রীর ওপর খেপেছেন আ.লীগের অনেক নেতা
আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের ডাকা ধর্মঘটে জনভোগান্তির ঘটনায় নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানকে দায়ী করছেন আওয়ামী লীগ বেশ কয়েকজন নেতা। তাঁরা বলছেন, শাজাহান খানের প্রত্যক্ষ মদদে সারা দেশে এই ধর্মঘট ছড়িয়েছে। জনভোগান্তি চরমে উঠেছে। এতে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। বিরোধী পক্ষ এটা নিয়ে রাজনীতি করার সুযোগ পাচ্ছে।
আওয়ামী লীগের আটজন নেতার সঙ্গে টেলিফোনে আলাপকালে তাঁরা দাবি করেছেন, খুলনা বিভাগের পরিবহন ধর্মঘট একমাত্র শাজাহান খানের ইন্ধনে সারা দেশে ছড়িয়েছে। এছাড়া ধর্মঘটের নামে অ্যাম্বুলেন্সসহ জরুরি পরিবহনের ওপর আক্রমণ এবং বিভিন্ন স্থানে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। তাঁদের মতে, দেশে যখন শান্তি বিরাজ করছে, তখন গাবতলীতে রাতভর সহিংসতা হয়েছে। শুধু রাজধানীতে নয়, দেশের বিভিন্ন স্থানেও অরাজকতা হয়েছে। সরকারের একজন মন্ত্রীর ইন্ধনে এ ধরনের জনবিরোধী কর্মকাণ্ড মেনে নেওয়া যায় না।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মঙ্গলবার ঢাকায় এক আলোচনা সভায় বলেন, ‘আদালত রায় দিয়েছেন, জনগণ দেয়নি। তাহলে জনগণকে কেন দুর্ভোগ পোহাতে হবে। তাই যাঁরা এ ধর্মঘট ডেকেছেন, তাঁদের উদ্দেশে আমি বলতে চাই, যত দ্রুত সম্ভব এ অযৌক্তিক ধর্মঘট প্রত্যাহার করা উচিত।’
আজ সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের ধর্মঘট প্রসঙ্গে বলেন, ‘এ নিয়ে জনদুর্ভোগ দেখছি। মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। এ-সম্পর্কিত মন্ত্রী হিসেবে আমি দায় এড়াতে পারি না।’
ধর্মঘটের কারণে মানুষের দুর্ভোগে পড়ায় দুঃখ প্রকাশ করে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘এই অযৌক্তিক ধর্মঘট কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি (শাজাহান খান) একই সঙ্গে মন্ত্রী এবং শ্রমিকনেতা। তাই শ্রমিকদের বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু শ্রমিকেরা যে সহিংসতা করছেন, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তাই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যারা জড়িত থাকুক, এটা সমর্থনযোগ্য নয়।’
দলটির সম্পাদকমণ্ডলীর একজন সদস্য বলছেন, দেশের কয়েকটি বিমানবন্দর, পর্যটন এলাকা ও রেলস্টেশনে মানুষ আটকা পড়েছে। তিনি বলেন, একটি বিমানবন্দরে তাঁর আত্মীয়স্বজনও দীর্ঘক্ষণ আটকে ছিল।
আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং দলটির মুখপাত্র হাছান মাহমুদ বলেন, ‘এই ধর্মঘট অযৌক্তিক এবং আদালত অবমাননা। বিশেষ কারও জন্য ভিন্ন আইন রাষ্ট্র করতে পারে না।’
আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা এ ধর্মঘটের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন ফোরামে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।
শাজাহান খানকে উদ্দেশ করে ফেসবুকে ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম লিখেছেন, ‘আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতা-কর্মীর রক্তের দাগ আপনার হাতে এক সময় ছিল মাননীয় মন্ত্রী। আমরা সবাই ভুলে যাচ্ছিলাম। আপনি আবার শেখ হাসিনার শান্তির দেশে অবরোধ ডেকে মনে করিয়ে দিলেন আপনার অতীত।’
ছাত্রলীগের সহসভাপতি আহসান হাবিব তাঁর ফেসবুকের পাতায় লেখেন, ‘শেখ হাসিনার হাতে দেশ দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, ঠিক তখন দালাল শ্রেণির শ্রমিকনেতারা দেশকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য ব্যস্ত। ওই সব দালাল শ্রমিকনেতাদের বলছি, দেশের পরিবেশ খারাপ করবেন না।’
শাজাহান খানকে মন্ত্রিপরিষদ থেকে বাদ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন যুবলীগের কেন্দ্রীয় সহসম্পাদক রফিকুল ইসলাম। ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, ‘শাজাহান খানকে মন্ত্রিপরিষদ থেকে বাদ দেওয়া হোক। আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হোক। তাহলে বাংলাদেশে এ ধরনের অবৈধ আন্দোলন ও ধর্মঘট বন্ধ হবে।’
এদিকে আজ মিরপুর স্টাফ কলেজে এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘এ ধরনের পরিস্থিতি তো আমরা চলতে দিতে পারি না। যাতে রাজপথগুলো পরিষ্কার থাকে, সে ব্যবস্থা আমরা অবশ্যই নেব। আমরা এখন দেখছি। মামলা হবে না কেন? পুলিশের একটা রেকার ভেঙে ফেলেছে। আজকে একটা জিপের ওপর আক্রমণ করতে গিয়েছে। সেই সময় আপনারা দেখেছেন একজন শ্রমিক আহত হয়েছে। আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী চরম ধৈর্যের সঙ্গে মোকাবিলা করছে।’খবর প্রথম আলো’র।
মন্তব্য চালু নেই