‘নীরব’ বিএনপি : জনরোষের অপেক্ষায় খালেদা

টানা দুই বার সরকার পতন আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে সক্রিয় কর্মসূচি থেকে অনেকটাই দূরে বিএনপি। চলমান পরিস্থিতিতে অনেকটাই ‘নীরব’ দলটি।

দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দলটির হঠাৎ এ নীরবতা নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বর্তমান সরকারের ‘গুড গভার্নেন্স’-এর ব্যাপারে ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। সুশাসন নিশ্চিত করতে না পারলে জনগণের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হবে এটা স্বাভাবিক। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার কারণে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল তৈরী হচ্ছে। এ ছাড়া নিজেরা নিজেরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন সময়। নারী লাঞ্ছনা, শিক্ষকদের ওপর নির্যাতনের মতো ঘটনা ঘটেই চলেছে, এর ফলে সরকার জনরোষে পড়বে। আর সেই অপেক্ষায় আছেন খালেদা জিয়া ও তার দল বিএনপি।

তবে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের দাবি, সরকার জনরোষে পড়েই আছে। দল পুনর্গঠন প্রক্রিয়া চলছে। চূড়ান্ত দাবি আদায়ে একটু সময় লাগতে পারে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, ‘সরকার জনরোষে পড়ে আছে। কাল নিরপেক্ষ ভোট হলেই তা প্রমাণ হয়ে যাবে। নিরপেক্ষতা আদায় করতে হলে তো সময় সুযোগ লাগবে। সেটার জন্যই অপেক্ষা করছি।’

বিএনপির সক্রিয়হীনতা সম্পর্কে জমির উদ্দিন সরকার বলেন, ‘নো, বিএনপি নীরব বসে নেই। সম্প্রতি ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে মিটিং করেছেন।’

সরকার পতনের কার্যকর কর্মসূচি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘দাবি আদায়ের ব্যাপারটা লং টাইম বা শর্ট টাইমও হতে পারে। সরকার আমাদের সভা-সমাবেশ করতে দিচ্ছে না। এখন কি মারামারি করবেন! সব জায়গাতেই কাজ হচ্ছে, মুভমেন্ট হচ্ছে। দেখছেনই তো দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবসহ এতগুলো নেতাকর্মী জেলে পড়ে আছেন। অন্যদের মোবিলাইজ (একত্রিত) করে সরকারকে দাবি আদায়ে বাধ্য করা হবে। বিএনপি বসে নেই, নিয়মিতই কাজ করছে।’

এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ১২ মে রাতে গুলশানে নিজ কার্যালয়ে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় বলেন, ‘সত্যের জয় হবেই হবে। ন্যায়ের জয় হবেই হবে, হয়ত একটু সময় লাগবে।’

একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের জীবদ্দশায় এদের (ক্ষমতাশীন দলের) করুণ পরিণতি দেখে যেতে পারব’— বিএনপি প্রধানের এমন বক্তব্যেও কেউ কেউ বলছেন, সরকার পতন আন্দোলনে সক্রিয় কর্মসূচিতে যেতে বিএনপির একটু সময় লাগতে পারে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. মিজানুর রহমান শেলী বলেন, ‘বর্তমানে বিএনপির নীরবতা তাদের ভবিষ্যৎ যে কর্তব্য তারই একটা প্রস্তুতি। সেই জন্য একটা বিরতি দরকার। তবে তারা নীরব আছেন এটা বলা যাবে না, থাকলেও সেই বাইরে।’

তিনি আরও বলেন, ‘খালেদা জিয়া সরকারের যৌক্তিক বা করুণ পরিণতির কথা বলছেন, এটা রাজনৈতিক নেতা হিসেবে, বিরোধী পক্ষের নেতা হিসেবে তার চিন্তার প্রতিফলন। এর মানে এই নয় যে, অতি শিগগিরই একটা কিছু ঘটবে। আবার তার মানে এও নয়, খালেদা জিয়াকে যদি দীর্ঘদিন বেঁচে থাকতে হয়, তাহলে সেই দীর্ঘকালই লাগবে এই বিবর্তন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে।’

মিজানুর রহমান শেলী বলেন, ‘কোনো শক্তির যদি সংঘবদ্ধ হয় সরকারে পতন ঘটাতে পারে, তাহলে ফল তারা ভোগ করবেন। তবে এই মুহূর্তে সরকার সব পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। খালেদা জিয়া পারবেন না এটা বলা যাচ্ছে না। জনগণ এখন সংগঠিত শক্তি নন। যারা জনগণকে সংগঠিত করতে পারে তারাই শক্তি, তারা প্রবল শক্তি।’

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘বিএনপির ঐতিহ্য ও আদর্শিক রূপ আছে। বিএনপি ঘুরে দাঁড়াবে। অতীতেও আমরা সফলতা পেয়েছি, ভবিষ্যতেও সফলতা অর্জন করব।’

মাহবুবুর রহমান আরও বলেন, ‘বিএনপি আদর্শিক দল হিসেবে গণতন্ত্রের জন্য কাজ করে বলেই জনগণ আমাদের সঙ্গে থাকে। হয়ত কিছু ভুলভ্রান্তি থাকতে পারে। আমরা বদ্ধপরিকর সামনের দিকে এগিয়ে যাবই।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাইরে থেকে বিএনপিকে নীবর মনে হচ্ছে। কিন্তু দলের মধ্যে কথা হচ্ছে, আলোচনা হচ্ছে, বিশ্লেষণ হচ্ছে। অতীতে যদি কোনো ভুল হয়ে থাকে সেখান থেকে শিক্ষাগ্রহণ হচ্ছে। এখন আমাদের দল গুছানোর সময়, পুনর্গঠনের সময়।’

তিনি আরও বলেন, ‘তৃণমূল থেকে শীর্ষ পর্যন্ত নবীন-প্রবীণদের সমন্বয়ে দল গঠন করা হবে। যারা দক্ষ, প্রজ্ঞাবান, দলের জন্য নিবেদিত প্রাণ তাদের যথাযথ জায়গায় রাখা হবে।’

প্রসঙ্গত, ৫ জানুয়ারি ২০১৪ সালে জাতীয় নির্বাচন বর্জন করলেও রাজপথে সক্রিয় কর্মসূচি ডাক দিয়েও কোনো ধরনের প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি বিএনপি। গত ৫ জানুয়ারি ওই নির্বাচনের বর্ষপূর্তিকে কেন্দ্র করে আবার ও আন্দোলনের ক্ষেত্র পেয়ে যায় দলটি এবারও ব্যর্থ। খালেদা জিয়া নিজ কার্যালয়ে টানা ৯২ দিন ‘অবরুদ্ধ’ থাকার পর শূন্য হাতে ঘরে ফিরেন। সর্বশেষ বিতর্কিত তিন সিটি নির্বাচনের পরও সক্রিয় কর্মসূচি দিতে পারেনি খালেদা জিয়া। দ্য রিপোর্ট



মন্তব্য চালু নেই