নীতিহীন রাজনীতির খল নায়কদের হটকারীতা!
শিরোনামটি ঠিক করে রেখেছিলাম বহু আগে-কিন্তু লিখাটা আর হয়ে উঠছিলো না। অন্যসব কলাম লেখকগন কেমন করে লিখেন তা আমি জানিনা। তবে আমার ক্ষুদ্র বুদ্ধিতে যতটুকু বুঝি তাতে মনে হয় বেশির ভাগ লেখকই হুট হাট করে লিখে ফেলেন । আমি আবার ওমন করে পারিনা। আমি প্রথমে প্রেক্ষাপট চিন্তা করি-তারপর বিষয় বস্তুকে পাঠক গনের নিকট নির্ভরযোগ্য এবং বিশ্বাসযোগ্য করে উপস্থাপনের জন্যে তথ্য উপাত্ত সন্নিবেশ করি। এরপর একটি শিরোনাম ঠিক করে ফেলি। কখনো সখনো আবার উল্টোটাও করে বসি- অর্থাৎ শিরোনাম দিয়ে পরে বাকী কাজ শুরু করি। আজ থেকে মাস তিনেক আগে উপরোক্ত শিরোনামটি ঠিক করে অনেক গুলো প্রেক্ষাপট মনে মনে গুছিয়ে রেখেছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত লিখাটা আর হয়ে উঠছিলো না। আমার লিখার ফাইলে শিরোনাম টি সংরক্ষন করেছিলাম বটে কিন্তু সৃজিত প্রেক্ষাপট ভুলে গিয়েছিলাম।
ইতিমধ্যে ২/১ বার লিখতে বসে বাংলাদেশের রাজনীতির জীবিত কিংবা মৃত খল নায়কদেরকে চিন্তা করতে করতে কার প্রসঙ্গ আগে আনবো তা নির্ধারন করতে পারছিলাম না। আজ এতোদিন পর আমার সেই সমস্যা দুর হয়ে গিয়েছে- আমার শিরোনামের প্রধান চরিত্রের সন্ধান পেয়ে গেছি । বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর পিতার মতো ভাই কিংবা তার মায়ের মতো বোনের শ্রদ্ধেয় পাগল সোনা লতিফ সিদ্দিকীই আজকের শিরোনামের প্রধান চরিত্র।
জনাব লতিফ সিদ্দিকী সম্পর্কে কি লিখবো? জননেত্রী বলেছেন পাগলের বংশ। তিনি ঠিকই বলেছেন কারন পাগল না হলে কেউ কোনদিন বড় ভাই হয়ে ছোট ভাইদের বিরুদ্ধে লাগে? কিংবা যে ডালে বসে থাকে সেই ডাল কাটে? অথবা সোনার ডিম পাড়া হাঁসটিকে জবাই করে ফেলে? লোকটি সম্পর্কে আমি কি লিখবো কিংবা কিভাবে তার বক্তব্যের নিন্দা জ্ঞাপন করবো? তিনি যদি ভদ্রলোক কিংবা ভদ্র বংশের সন্তান হতেন তাহলে আমি হয়তো এই বলে লিখাটি এখানে শেষ করতে পারতাম- এই বদ্ধ উন্মাদ লোকটি সম্পর্কে আমার কলম দিয়ে কোন কিছু লিখতেই আমার রুচিতে বাঁধছে- তাই আজকের লিখাটি এখানেই শেষ করলাম। এরপর নীচের বেশ খানিকটা যায়গা কালো রং দিয়ে লেপটে দিতাম। কিন্তু তা হবার নয় কারন জনাব সিদ্দিকীর প্রভাব প্রতিপত্তি, অত্যাচার, অনাচার, দূর্নীতি-অনিয়ম ইত্যাদি নিয়ে বহু কথা হয়তো বলা যাবে। কিন্তু তিনি ভদ্রলোক -একথা তার শত্রু-মিত্র তো দুরের কথা তার একান্ত নিকটজনও বিশ্বাস করেনা।
আমার সঙ্গে তার পরিচয়ের ঘনিষ্ঠতা দীর্ঘদিনের নয়। ৯ম সংসদে আমরা একত্রে ছিলাম পাঁচটি বছর। ইতিপূর্বে আমি তাকে নামে চিনতাম অন্যদিকে তিনি হয়তো আমাকে আদৌ চিনতেন না। বয়সে নবীন এমপিদেরকে সিনিয়র এমপিগন খুব কমই চিনতেন। আর পাত্তা দিতেন তার চেয়েও ক্ষীন থেকে ক্ষীনতর ভাবে। কিন্তু আল্লাহর মেহেরবানীতে আমাকে কেনো যেনো সবাই চিনে ফেলেছিলো-৯ম সংসদ আরম্ভ হওয়ার অল্প কয়দিনের মধ্যেই। সেভাবে জনাব সিদ্দিকীও চিনতেন। মাঝে মধ্যে নিজের কাছে ডেকে নিতেন। লবিতে বসে আমার সঙ্গে নানা বিষয়ে আলাপ করতেন। বিশেষ করে আমার লিখা কলাম গুলোতে কি কি বিষয় সংযোজিত বা বিয়োজিত হওয়া উচিত সে বিষয়ে তার মতামত জানাতেন। লিখা পড়ে ভালো লাগলে ফোন করতেন আবার খারাপ লাগলে তাও জানাতেন। এভাবেই চলছিলো বেশ- আমার এমপি বন্ধুরা বলতো-উনার সঙ্গে তোমার এতো খাতির কিসের? আমি শুধু হাসতাম কিছু বলতাম না।
জনাব সিদ্দিকী সাহিত্যের মানুষ। লিখার হাত ও চমৎকার। চাল চলনে আয়েসী এবং আলাপনে দিল খোলা। আমার মতো নবীনের সঙ্গে তিনি অত্যন্ত খোলা মেলা ভাবে প্রেম-পরিনয়, যৌনতা কিংবা পরকিয়া নিয়ে আলোচনা করতেন। কিন্তু ধর্ম কর্ম নিয়ে কোন দিন কোন কালে তিনি কোন আলোচনায় যেতেন না। আমি নিয়মিত নামাজ পড়ি। অধিবেশন চলাকালে সব সময়ই নামাজের বিরতির সময় আমি মসজিদে যেতাম। জনাব সিদ্দিকী মসজিদে যেতেন না। কিন্তু যারা যেতেন তাদের সম্পর্কে কোন বিরুপ মন্তব্য করতে শুনিনি। আমি জানতাম তিনি সেক্যুলার মানষিকতার কিন্তু তিনি যে ইসলাম বিরোধী কিংবা আল্লাহ-রাসুল বিরোধী মনোভাব পোষন করেন তা স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি। তাই অতি সম্প্রতি নিউইয়র্কের একটি ঘরোয়া অনুষ্ঠানে তার তাল-বেতাল প্রলাপ শুনে যারপর নাই আশ্চর্য হয়েছি।
এবার তার রাজনীতি এবং শিক্ষাদীক্ষা নিয়ে আমার ব্যক্তিগত অনুভূতির কথা বলে নেই। আমার মতে জনাব সিদ্দিকী আওয়ামীলীগের আরো অনেক মন্ত্রী এমপির মতো জেলা পর্যায়ের একজন নেতা। তাকে সবাই চিনে কাদের সিদ্দিকীর বড় ভাই হিসেবে। বিগত দিনে তার মন্ত্রী হবার পেছনে দু’টো নেয়ামক ওষুধ হিসেবে কাজ করেছে। প্রথমত কাদের সিদ্দিকীকে জননেত্রী কেনো যেনো দু’চক্ষে দেখতে পারেননা। সেক্ষেত্রে বড় ভাইকে দিয়ে ছোট ভাইকে দমন করার জন্য জনাব সিদ্দিকীকে একটি যুৎসই মুগুর বানিয়ে সিদ্দিকী পরিবারের সবকিছু তছনছ করে দেয়া হয়েছে। খুব বেশী মোটা মাথার লোক না হলে মানুষ সাধারনত আপন ভাই বোনের বিরুদ্ধে অন্যের মুগুর, গদা কিংবা খোনতা- কুড়ালের মতো হাতিয়ার হয়ে ব্যবহৃত হয়না। কিন্তু জনাব সিদ্দিকী ব্যবহৃত হয়েছেন। তার শিক্ষা জীবনের সার্টিফিকেট সম্পর্কে আমার তেমন কিছু জানা নেই- তবে তিনি যে ভালো মানের ছাত্র ছিলেন না তা আমি হলফ করে বলতে পারি।
তো যা বলছিলাম- জনাব সিদ্দিকীর মন্ত্রী হবার দ্বিতীয় কারন ১/১১ এর সময়ে হঠাৎ করেই তার কিছু ভূমিকা। একদিন টেলিভিশনে দেখলাম জনাব সিদ্দিকী এসে হাজির। সুধা সদনের সামনে দাঁড়িয়ে জননেত্রীর পক্ষে কি যেনো বলছেন। সময়টা ছিলো তখন খুবই খারাপ। আওয়ামীলীগের ইদানিংকালের ভয়ংকর সব বীর পুরুষ ১/১১ র নায়কদের ভয়ে গর্তে ঢুকেছেন। কেউ কেউ দেশের প্রধানমন্ত্রী, দলের সভাপতি কিংবা নিদেন পক্ষে মন্ত্রী হবার জন্যে ক্ষমতাসীনদের দরবারে লাইন দিয়েছেন। বাকীরা সব পালিয়ে গিয়েছেন দেশ বিদেশের সুবিধাজনক স্থানে। তখন জননেত্রীর কাছে কেউ যেতেননা। তিনি ফোন করেও অনেককে সুধা সদনের সামনের রাস্তায় নিতে পারতেন না। পরিস্থিতি এমন হলো যে-৮/১০ দিন যাবৎ কাউকে দেখা গেলো না দলের পক্ষ হয়ে কিছু বলার জন্য সাংবাদিকদের মুখোমুখি হতে। এরই মধ্যে হঠাৎ একদিন দেখা মিললো জনাব সিদ্দিকী কথা বলছেন টেলিভিশনে। আমরা অনুমান করলাম- হয়তো জননেত্রীই তাকে ফোন করে ডেকে এনেছেন কিছু বলার জন্য।
৯ম সংসদ গঠিত হলো আমরা দেখলাম তিনি মন্ত্রী হয়েছেন। তিনিও খুব খুশী- মনের আনন্দে- অদ্ভুত অদ্ভুত রংয়ের বাহারী পাঞ্জাবী এবং কটি গায়ে দিয়ে তিনি সংসদে আসতেন এবং খোলা মনে সকলের সঙ্গে কথাবার্তা বলতেন। ঠিক ঐ সময়টাতেই তার সঙ্গে আমার সম্পর্ক স্থাপিত হয়। ২০১২ সনের শেষ দিকে হঠাৎ একদিন দেখলাম তার মন খুব ভারী। আমাকে কাছে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন- টক শো কেমন চলছে? আমি বললাম- ভালো। তিনি বললেন আগে টকশোতে যেতে বেশ আগ্রহ ছিলো- ইদানিং সেই আগ্রহ আর নেই। ওখানে যাবো আর ইচ্ছে মতো কথা বলতে পারবো না – সেটাতো হয়না। তিনি আমাকে উৎসাহ দিতে গিয়ে বললেন- তোমার যে বয়স তাতে বিদ্রোহ করা বা উচিৎ কথা মানায়- অন্যদিকে নেত্রী ডেকে যদি মন্দ কথা বলেন তাতেও কিছু আসে যায় না কারন সে তোমার মায়ের মতো। কিন্তু আমার যে বয়স-তাতে অপমানিত হতে আর ভালো লাগে না। তাই সত্য বলে বকা খাওয়ার চেয়ে চুপ চাপ থাকাই ভালো মনে করি। আমি তার বিষন্ন মনের অভিব্যক্তি, বিবর্ন মুখশ্রী এবং ক্লান্ত শরীর দেখে বুঝলাম-দিনকাল ভালো যাচ্ছে না।
জনাব সিদ্দিকী সাহেব সম্পর্কে আমার কমবেশী ধারনা থাকার দরুন আমি প্রথম দিকে খুবই আহত হলাম নিউইর্য়কে প্রদত্ত তার বক্তব্য শোনার পর। সারা দেশে তার বিরুদ্ধে ক্ষোভ বিক্ষোভের ঝড়ের সময় তিনি যখন পুনরায় বললেন- তিনি বক্তব্য প্রত্যাহর করবেন না- তখন বেশ প্রমাদ গুনলাম। কারন ইসলাম ধর্ম এবং সজীব ওয়াজেদ জয়কে নিয়ে তিনি যেসব কথা বলেছেন তা খুবই আপত্তিকর এবং স্পর্শ কাতর। আমি নিজে বিভিন্ন সময়ে সরকারের খুটি নাটি ভুল ভ্রান্তি নিয়ে অনেক কথা বলেছি। কিন্তু বঙ্গবন্ধু পরিবারের মান মর্যাদা নিয়ে বরাবর সচেতন থাকার চেষ্টা করেছি। আমার মনে হয় প্রতিটি মানুষেরই উচিত শ্রদ্ধা, ভালোবাসা এবং আস্থার যায়গাটি অক্ষুন্ন রাখা। জনাব সিদ্দিকীও সেটা জানেন কিন্তু তারপর কেনো তিনি এসব কথা বললেন?
প্রধানমন্ত্রীর তথ্য বিষয়ক উপদেষ্টা এবং বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্রকে জাতীয় নেতা বানানোর জন্যে আওয়ামীলীগ করেনি এহেন কর্ম নেই। তার শিক্ষা, দীক্ষা, সততা, নম্রতা ইত্যাদি সুকুমার বৃত্তিকে জনগনের মাঝে ফুটিয়ে তোলার জন্য- সরকার সমর্থক গনমাধ্যম এবং জয়ের ঘনিষ্টজনেরা চেষ্টা করে আসছিলো প্রথম দিন থেকে। অন্যদিকে তারা জয়ের কথিত প্রতিদ্বন্দ্বী তারেক রহমানের নানাবিধ বদনাম দশমুখে প্রচার করে আসছিলো। ২০০৯ সাল থেকে আজ অবধি সরকারের পক্ষ থেকে প্রচার চালানো হচ্ছে যে, জয় হলেন বিশ্ববিখ্যাত তথ্য প্রযুক্তিবীদ। তিনি বাংলাদেশকে একটি আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর ডিজিটাল দেশ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য প্রধান মন্ত্রীকে পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তিনি মুলত সপরিবারে আমেরিকা থাকেন এবং সময় সুযোগ মতো বাংলাদেশে এসে তার মায়ের সঙ্গে গনভবনে বাস করেন। তার কোন সরকারী পদ, পদবী, অফিস বা নিয়োগ পত্র আছে বলে দেশবাসী জানেনা। সবার ধারনা- তিনি হয়তো প্রধানমন্ত্রীকে উপদেশ দেন এবং মাঝে মধ্যে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গিয়ে বক্তব্য রাখেন। এসব বিষয় নিয়ে জনগনের সামান্যতম মাথা ব্যাথা ছিলোনা। তাদের একমাত্র আগ্রহ ছিলো জয়ের রাজনীতি নিয়ে।
লতিফ সিদ্দিকীর একটি বক্তব্য জয় সম্পর্কে সকল হিসাব নিকাশ উলোট পালোট করে দিয়েছে। তিনি বলেছেন- জয় কে? আবার একথাও নাকি বলেছেন-জয় তার মন্ত্রনালয় থেকে মাসে এক কোটি ষাট লাখ টাকা বেতন গ্রহন করেন । পৃথিবীর ক্ষমতাধর ১০টি দেশের সরকার প্রধানের মাসিক বেতন যোগ করলেও এককোটি ষাট লাখ টাকা হবে না। এত্তোবড় একটি বদনাম হজম করা সরকার বা আওয়ামীলীগের পক্ষে কোনদিন সম্ভব হবে না। কারন মানুষ সব সময় কুকথার পেছনে ছুটে। শেখ কামালের বিরুদ্ধে তৎকালীন জাসদ গংয়েরা প্রচার করে ছিলো যে বাংলাদেশ ব্যাংক ডাকাতি করতে গিয়ে তার পায়ে গুলি লেগেছে। বহু বছর ধরে শত চেষ্টা করেও আওয়ামীলীগ জাসদের সেই অপপ্রচারের বিরুদ্ধে জয়ী হয়ে শেখ কামালের একটি ক্লিন ইমেজ গড়ে তুলতে পারেনি।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে জয়ের বিরুদ্ধে জনাব সিদ্দিকী যা বলেছেন তা থেকে জনগনের মন মানষিকতা কিছুতেই ঘোরানো যাবে না। জনগন ইতিমধ্যেই হিসেব কষে ফেলেছে যে মাসে এককোটি ষাট লাখ হলে সাত বছরে মোট কত টাকা হয়! অন্যদিকে হেফাজতের ঘটনা এবং গন জাগরন মঞ্চ সম্পর্কে সরকারী দলের অতি উৎসাহ এদেশের ধর্মপ্রান মুসলমানগন স্বাভাবিক ভাবে মেনে নিতে পারেননি। আওয়ামীলীগের ভারত প্রীতি; ৫ই জানুয়ারীর নির্বাচন নির্বাচন খেলা এবং পরবর্তী আওয়ামীলীগ নেতাদের ঔদ্ধত্যমুলক বক্তৃতা বিবৃতির কারনে শান্তি প্রিয় মানুষজন রাগে-ক্ষোভে ফুসছে । কিন্তু তাদের সেই ক্ষোভ প্রকাশের কোন ওছিলা খুঁজে না পাওয়ার জন্য জনগন রাস্তায় নামতে পারছে না। জনাব সিদ্দিকী জনগনকে সেই সুযোগটি করে দিলেন। ইতিপূর্বে দাউদ হায়দার কিংবা তছলিমা নাসরিনের ক্ষেত্রে জনগন যে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলো জনাব সিদ্দিকের বিরুদ্ধে জনরোষের মাত্রা তার চেয়েও অনেক বেশি হবে বলেই আমার আশংকা।
জনাব আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী হঠাৎ করেই কেনো খলনায়কের ভূমিকায় অবতীর্ন হয়ে এমন তান্ডব শুরু করলেন । আমার মনে হচ্ছে তিনি ইচ্ছে করেই করেছেন। কারন গত সরকারের আমলে তার মন্ত্রনালয়ের দূর্নীতি এবং অনিয়ম নিয়ে সরকার খুবই বিব্রত। তার বিরুদ্ধে অনেকগুলো তদন্ত চলছে এবং কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে সাপ বেরিয়ে আসছে। এই অবস্থায় তাকে মন্ত্রী পরিষদ থেকে বাদ দিয়ে আইনের হাতে তুলে দেয়া ছাড়া সরকারের কোনো উপায় ছিলো না। বিষয়টি আঁচ করতে পেরেই তিনি হয়তো আরো নীতিহীন কর্মের মতো সাম্প্রতিক তান্ডবটি চালালেন। এতে করে তার আপাতত দুইটি লাভ হলো। প্রথমতঃ জয়ের বিরুদ্ধে মুখ খুলে তিনি দেশবাসীকে বিশ্বাস করাতে চেষ্টা করলেন যে- সরকারের গোপন যায়গায় হাত দেওয়াতেই তার বিরুদ্ধে তদন্ত ফদন্ত হচ্ছে। দ্বিতীয়তঃ মুসলমানদের ধর্ম নিয়ে মারাত্মক সব আপত্তিকর মন্তব্য করে তিনি পুরো দেশকে উত্তাল করে দিয়ে সরকারকে বাধ্য করবেন যেনো কর্তৃপক্ষ তাকে অনুনয় বিনয় করে বলে দেশে না ফেরার জন্য। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তিনি নির্বিঘ্ন যেকোন দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় লাভের যোগ্যতা অর্জন করলেন।
স্বাভাবিক ভাবেই এই প্রশ্ন অনেকেই রাখবেন যে কেনো তিনি একাজ করতে গেলেন? এটা করে তার কি লাভ ? কিংবা এই কাজের ফলে সরকারের কি কি ক্ষতি হতে পারে ? আমার মতে নিজের মধ্যকার কোন হতাসা, সরকারী মহলের সঙ্গে তার ক্রমাগত দুরত্ব, স্থানীয় এবং জাতীয় রাজনীতিতে ক্রমাগত অপাংক্তেয় হয়ে পড়ার কারনে জনাব সিদ্দিকী সম্ভবত রাজনীতি থেকে নিরাপদে সরে যেতে চাইছিলেন। কিন্তু একের পর এক দূর্নীতির মামলার ভয়ে তিনি বাংলাদেশে থাকাটা নিরাপদ মনে করছিলেননা। তাই বিদেশে আশ্রয় লাভের মোক্ষম সুযোগ সৃষ্টির জন্যই তিনি নীতিহীন গর্হিত কাজটি করেছেন । এটা করে তিনি যেমন একদিকে নিজেকে রক্ষা করলেন অন্যদিকে সরকারকে একহাত দেখে নেয়ার স্বাদ আশ্বাদন করলেন ।
জনাব লতিফ সিদ্দিকীর কারনে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ কতগুলো সুদুর প্রসারী সমস্যায় পড়লো। দলটির ভবিষ্যৎ নেতার ক্লিন ইমেজটি আর থাকলো না। এখন বিরোধী শিবিরের লোকজন বঙ্গবন্ধু পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরকে নিয়েও সমালোচনার সুযোগ পেয়ে গেলো। লতিফ সিদ্দিকীর পথ ধরে আরো কয়েকজন অভিযুক্ত মন্ত্রী, এমপি হয়তো বিদেশে গিয়ে হঠাৎ করেই ভোল পাল্টিয়ে ফেলতে পারেন। আর এমনটি যদি হয় তবে সরকারের পতন কেবল সময়ের ব্যাপার মাত্র। অন্যদিকে ইসলাম পন্থীরা যদি রাজপথ গরম করে ফেলতে পারেন তবে সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোও মাঠে নেমে পড়বে। ফলে সরকারকে পড়তে হবে এক মারাত্মক পরিস্থিতিতে। আর এসব কিছুই হতে যাচ্ছে একজন নীতিহীন রাজনীতির খলনায়কের হটকারিতার জন্য।
(এই পোষ্টটি দৈনিক আমাদের সময়ে প্রথম প্রকাশিত হয়েছে)
(এই বিভাগে প্রকাশিত মতামতের জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নহে )
মন্তব্য চালু নেই