নাজিরহাট থেকে মোহরা ৪৮ কিলোমিটার পর্যন্ত নদীতে সারা বছর মাছ শিকার নিষিদ্ধ
নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে হালদায় চলছে মা মাছ শিকার
প্রাকৃতিক মৎস প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে চলছে মা মাছ শিকার। নদীতে হাতজাল দিয়ে মা মাছ শিকার করার সময়ে স্থানীয় কমিনিউটি পুলিশিং কমিটির সদস্যরা মাছ শিকারীর কাছ থেকে সাড়ে নয় কেজি ওজনের ডিম ওয়ালা মা মাছ উদ্বার করে রাউজান উপজেলা মৎস অফিসার নাজিম উদ্দিনের কাছে হস্তান্তর করেন।
গতকাল সকাল আটটার সময় রাউজান উপজেলার পশ্চিম ফতেহনগর সবুর চেয়ারম্যানের ঘাটায় হালদা নদীতে হাত জাল দিয়ে একটি সাড়ে নয় কেজি ওজনের ডিম ওয়ালা মা মাছ শিকার করে রাউজানের নোয়াজিশপুর ইউনিয়নের পশ্চিম ফতেহনগর এলাকার মৃত দানা মিয়ার পুত্র রফিক (৪৫)।
এসময়ে কমিনিউটি পুলিশিং কমিটির সভাপতি বেলাল হোসেন মানিক, সাধারণ স¤পাদক দৌলত, সহ-সভাপতি মোরশেদ মা মাছ শিকারী রফিককে ধরতে চাইলে রফিক সাড়ে নয় কেজি ওজনের ডিম ওয়ালা মা মাছটিসহ হাত জাল ফেলে দৌড়ে পালিয়ে যায়।
স্থানীয় কমিনিউটি পুলিশিং কমিটির কর্মকর্তারা মোবাইল ফোনে বিষয়টি রাউজান উপজেলা মৎস অফিসার নাজিম উদ্দিনকে জানালে উপজেলা মৎস অফিসার নাজিম উদ্দিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে মা মাছটি উদ্বার করে। ঘটনার পর পর সংবাদ পেয়ে রাউজান উপজেলা নির্বাহী অফিসার কুল প্রদীপ চাকমার নির্দেশে মা মাছ শিকারী রফিককে ধরতে থানা পুলিশকে নির্দেশ প্রদান করেন। রাউজান থানার এ.এস.আই মুরাদের নেতৃত্বে একদল পুলিশ গতকাল দুপুরে মা মাছ শিকারী রফিককে ধরতে তার বাড়ী ও এলাকায় অভিযান চালায়। মা মাছ শিকারী রফিক পালিয়ে যাওয়ায় তাকে পুলিশ গ্রেফতার করতে পারেনি বলে উপজেলা মৎস অফিসার নাজিম উদ্দিন জানান।
রাউজান উপজেলা মৎস অফিসার নাজিম উদ্দিন বাদী হয়ে মা মাছ শিকারী রফিকের বিরুদ্ধে রাউজান থানায় মামলা করেছেন বলে জানান। মা মাছ শিকারী মোঃ রফিকের কাছ থেকে উদ্বার করা মা মাছটি হিমাগারে রাখা হয়।
গতকাল মা মাছ শিকারী রফিকের কাছ থেকে উদ্ধার করা সাড়ে নয় কেজি ওজনের ডিম ওয়ালা মৃগেল মাছটির কাছ থেকে এক কেজি ডিম নদীতে ছাড়তো। ঐডিম ফুটিয়ে আধা কেজি রেনু উৎপাদন হতো। আধা কেজি রেনু থেকে দেড় লাখ মাছের পোনা উৎপাদন হতো। আর এই দেড় লাখ পোনা থেকে কয়েকশত শত মেট্রিকটন মাছ উৎপাদন হতো বলে উপজেলা মৎস অফিসার জানান। প্রাকৃতিক মৎস প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে প্রতি বৎসর চৈত্র মাস থেকে শ্রাবণ মাস পর্যন্ত সময়ে রুই, কাতলা, মৃগেল, কালীবাউস মাছ ডিম ছাড়েন। হালদা নদীর মা মাছের ডিম সংগ্রহ করে এলাকার ডিম সংগ্রহকারীরা ডিম ফুটিয়ে রেনু উৎপাদন করেন। ডিম সংগ্রহকারীদের কাছ থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকার মাছ চাষী ও মৎস খামারীরা রেনু ক্রয় করে নিয়ে গিয়ে মাছ চাষ করেন। হালদা নদীতে অবাধে মাছ শিকার, ও বাক কেটে ফেলা, যান্ত্রিক নৌযান চলাচল, অবাধে বালু উত্তোলনের ফলে মা মাছ ডিম ছাড়া ক্রমান্বয়ে হৃাস পেয়ে আসছে।
গত ২০ এপ্রিল হালদা নদীতে মা মাছ মৌসুমের শুরুতেই প্রথমবার ডিম ছাড়েন। হালদা নদী থেকে ডিম সংগ্রহকারীরা একহাজার আটশত কেজি ডিম সংগ্রহ করেন। একহাজার আটশত ডিম ফুটিয়ে উন্নিশ কেজি পাচঁশত গ্রাম রেনু উৎপাদিত করেন ডিম সংগ্রহকারীরা। প্রতি কেজি রেনু পাচঁষট্টি হাজার টাকা করে বিক্রয় করেন বলে জানান ডিম সংগ্রহকারীরা। হালদা নদীকে মা মাছের অভয়শ্রাম গড়ে তোলার লক্ষ্যে চৌদ্দ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রাকৃতিক মৎস প্রজনন ক্ষেত্র পুনরুদ্ধার প্রকল্পের আওতায় হ্যাচারী নির্মাণ, নদীতে বড় আকারের মাছ অবমুক্ত, হালদা নদীর উপকারভোগীদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য স্বল্প সুদে ঋণপ্রদান, ভিজিএফ কার্ডের মাধ্যেমে উপকারভোগীদের মধ্যে খাদ্যশষ্য বিতরন, মৎসজীবি ও জেলেদের নিবন্ধন করার কাজ করা হয়।
হালদা নদীকে মা মাছের অভয়শ্রাম গড়ে তোলার লক্ষ্যে হালদা নদীর নাজির হাট থেকে নগরীর মোহরা পর্যন্ত ৪৮ কিলোমিটার দৈঘ্য নদীতে সারা বৎসর মাছ শিকার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। হালদা নদীর সাথে সংযুক্ত খালগুলোতে মা মাছ ডিম ছাড়ার মৌসুমে ছয়মাস মাছ শিকার নিষিদ্ধ করা হয়। মা মাছ ডিম ছাড়ার মৌসুমে নাজির হাট থেকে কালুরঘাট ব্রীজ পর্যন্ত হালদা নদীতে যান্ত্রিক নৌযান চলাচল নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারী করেন মৎস মন্ত্রনালয়। নিষেধাজ্ঞাকে অমান্য করে হালদা নদীতে বিভিন্ন এলাকায় জালঁ ও বড়শী দিয়ে চলছে মা মাছ শিকার।
নিষেধাজ্ঞাকে অমান্য করে হালদা নদীতে প্রতিনিয়ত চলছে শত শত বালু ভর্তি, ইটভর্তি, পাথরভর্তি, ড্রেজার, যান্ত্রিক নৌযান। এতে হালদা নদীতে মা মাছের প্রজনন ক্ষমতা দিন দিন কমে আসছে বলে অভিমত প্রকাশ করছেন হালদা পাড়ের বাসিন্ধা ডিম সংগ্রহকারী মাহাবুবুল আলম মেম্বার ও বিতান বড়–য়া।
মন্তব্য চালু নেই