নিবন্ধন চাইছে বাকশাল

বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ-বাকশাল নামে একটি রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের আবেদন জমা পড়েছে নির্বাচন কমিশনে।

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনের উদ্যোগের মধ্যে যখন বাকশাল নামটি বিএনপির বয়ানে আলোচনায় উঠে আসছে, তখনি এই নামে নিবন্ধনের আবেদন হল।

বিচারপতিদের সরানোর ক্ষমতা আইন প্রণেতাদের হাতে ফিরিয়ে নিতে সংবিধান সংশোধনের উদ্যোগের সমালোচনা করে বিএনপি বলছে, এর মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ ‘বাকশালী শাসন’ আনতে চাইছে।

সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনের পর ১৯৭৫ সালের জানুয়ারিতে সব দল নিষিদ্ধ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাকশাল গঠন করেন।

ওই বছরের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে বাকশালের বিলোপ ঘটলেও আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রাজ্জাক ১৯৮৩ সালে দলটি পুনরুজ্জীবিত করেন। তবে ১৯৯১ সালে দলটি পুনরায় আওয়ামী লীগে একীভূত হয়।

বঙ্গবন্ধুর সময় বাকশালের সাধারণ সম্পাদক রাজ্জাক ইতোমধ্যে মারা গেছেন। ১৯৯১ সালের বাকশাল আওয়ামী লীগে অবলুপ্ত হলেও এর একটি অংশের ওই নামে সক্রিয় হয়ে ওঠার চেষ্টা দেখা গিয়েছিল।

তারপর থেকে বাকশাল নামে কোনো দলের সক্রিয়তা দেখা না গেলেও দুই দশক পর নতুন করে এই নামে সক্রিয় হওয়ার প্রয়াসের দেখা মিলল।

নিজেকে বাকশালের মহাসচিব দাবি করে কাজী মো. জহিরুল কাইয়ুম সম্প্রতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের কাছে নিবন্ধনের আবেদন করেছেন।

ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রোববার ইসি সচিবালয়ের নিবন্ধন যাচাই-বাছাই কমিটির কাছে তা পাঠিয়েছেন সিইসি।

বাংলাদেশের বর্তমান আইনে নির্বাচনে অংশ নিতে হলে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত হতে হয়। নিবন্ধন না করলে দল হিসেবে সক্রিয় থাকা গেলেও ভোটে অংশ নেওয়া যায় না। বর্তমানে নিবন্ধিত দলের সংখ্যা ৪০টি।

নিজেদের বঙ্গবন্ধুর অনুসারী দাবি করে কাজী জহিরুল বলেন, “বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লবের পুনঃজাগরণের জন্যই আমরা রাজনীতি করি। বঙ্গবন্ধুর বাকশালের ধারাহিকতায় আমাদের এ দল।

“মাঝধানে শুধু আব্দুর রাজ্জাক সাহেব তরীতে পার হয়ে গিয়েছিল। নতুন বিপ্লবের জন্যই আমরা ইসিতে নিবন্ধনের আবেদন করেছি।”

তিনি দাবি করেন, ২০০৮ সালে রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরুর প্রথমভাগে বাকশাল আবেদন করলেও এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন তৎকালীন কমিশন বেআইনিভাবে তাদের নিবন্ধন দেয়নি।

ইসির নিবন্ধন বাছাই কমিটির উপ সচিব পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ২০০৮ সালেও বাকশাল নামে একটি দল নিবন্ধনের আবেদন করেছিল। নিবন্ধন শর্ত পূরণ করতে না পারায় দলটি নিবন্ধন পায়নি।

নিবন্ধনের সব শর্ত পূরণ করেছেন দাবি করে কাজী জহিরুল আশা করছেন, নিবন্ধনও তারা পাবেন।

সিইসি’র কাছে করা আবেদনে ১৯৮৬ সালে রাজ্জাকের নেতৃত্বে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাকশালের তিনজন এবং ১৯৯১ সালে ৫ জন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার তথ্যও তুলে ধরেছেন তিনি।

বর্তমানে ফরিদপুর থেকে বাকশালের কার্যক্রম চলছে বলে জানান কাজী জহিরুল। তিনি বলেন, ১৫ সদস্যের কমিটির মধ্যে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন শরীফ মো. মনীরুজ্জামান।

হাতে কাস্তে ও হাতুড়ির প্রতীক নিয়ে বাকশালের লাল-সবুজ ও চার তারকার পতাকার বাম পাশে রয়েছে-জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু, আর ডানপাশে জয় হোক মেহনতি জনতার।

বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে বর্তমান বাকশালের কোনো দ্বন্দ্বের সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেন কাজী জহিরুল।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, বাকশালের আবেদন যাচাই-বাছাই শেষে কমিশন বিষয়টি বিবেচনা করবে নিবন্ধনযোগ্য কি না।

কয়েক বছর আগে জিয়ার আদর্শের অনুসারী দাবি করে বিএনএফ নিবন্ধন দাবি করলে বিএনপির বিরোধিতার মুখে পড়ে।

তবে শেষ পর্যন্ত বিএনএফ নিবন্ধন পেয়েছে, দশম সংসদে একজন দলটির প্রতিনিধিত্বও করছেন।



মন্তব্য চালু নেই