নিত্য নতুন চাপে বিএনপি !
সিটি করপোরেশন নির্বাচনের দিন যত ঘনিয়ে আসছে বিএনপিও তত বেশি চাপে পড়ছে। শুরুতে বাধা দিলেও ইতোমধ্যে দলের চেয়ারপারসনের গাড়িবহরে হামলা হয়েছে কয়েকদফা। একের পর এক গ্রেপ্তার হচ্ছেন কাউন্সিলর প্রার্থী। পোলিং এজেন্টদের বাড়িতে বাড়িতে তল্লাশির অভিযোগ তো আছেই। অন্যদিকে নির্বাচনে সেনাবাহিনীর বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তও দলটির মনোপুত হয়নি।
এমন অবস্থায় ভোটের দিনে তিন সিটি করপোরেশনের পরিস্থিতি কেমন হয় তা নিয়ে মহাচিন্তায় আছে দলটির হাইকমান্ড।
যদিও দলটির শীর্ষ নেতারা বলছেন, পরিস্থিতি যাই হোক বিএনপি শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত নির্বাচনে থাকবে। তারা আওয়ামী লীগকে খালি মাঠে গোল দিতে দেবে না।
একইসঙ্গে তাদের বিশ্বাস, জনগণ ভোট দিতে পারলে এবং ‘মোটামুটি’ সুষ্ঠু নির্বাচন হলে মেয়র পদে তিন সিটিতেই বিএনপির প্রার্থী জয়ী হবে।
আগামী ২৮ এপ্রিল ঢাকা দক্ষিণ, উত্তর ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) বেধে দেয়া সময় অনুযায়ী ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত প্রার্থীর পক্ষে প্রচার প্রচারণা চালানো যাবে।
তবে ফৌজদারি মামলায় জামিন না মেলায় ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে মাঠে নামা হয়নি বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী মির্জা আব্বাসের। গোটা সময়জুড়ে তার পক্ষে গণসংযোগ করছেন তার স্ত্রী আফরোজা আব্বাস।
আর বিএনপি সমর্থিত অন্য মেয়রপ্রার্থী তাবিথ আউয়াল অনেকটা একাই চষে বেড়িয়েছেন ঢাকা উত্তরের অলিগলি।
তবে কোথাও কোথাও বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরাও নিজ উদ্যোগে মেয়রপ্রার্থীদের পক্ষে প্রচার চালিয়েছেন। কিন্তু দলটির শীর্ষ নেতাদের মধ্যে হাতেগোনা দুই একজন ছাড়া কেউ মাঠে নামেননি। এমনকি মধ্যম সারির নেতাদেরও তেমন একটা দেখা যায়নি।
এর কারণ হিসেবে দলটির নেতারা মামলার অজুহাত দেখাচ্ছেন। বলছেন, রাস্তায় নামলেই পুলিশ গ্রেপ্তার করবে। হয়রাণিমূলক মামলায় জেলে পুড়বে। তাই নিরাপদে অবস্থান করে সাধ্যমত প্রচার চালাচ্ছেন।
অবশ্য বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়া ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটির মেয়রপ্রার্থীদের পক্ষে ছয়দিন প্রচার চালিয়েছেন। তবে এরমধ্যে দুইদিন মোটামুটি নির্বিঘ্নে প্রচার চালাতে পারলেও বাকি দিনগুলোতে তার গাড়িবহরে হামলার ঘটনা ঘটেছে।
আর এটাকে দলের জন্য সবচেয়ে বড় চাপ হিসেবে দেখছেন দলটির শীর্ষ থেকে মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। তারা বলছেন, শুধু নির্বাচনে ভীতির সৃষ্টির জন্যই নয়, একের পর এক হামলা অন্য কিছুর ইঙ্গিত দেয়। তাই বিষয়টি নিয়ে এখনই ভাবতে হবে।
সে কারণে শুক্রবার প্রচার চলাকালে সিএসএফের পাশাপাশি বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা খালেদা জিয়াকে ঘিরে ছিলেন।
এদিকে এই ঘটনার পর থেকে দলটির সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মধ্যে চাপা আতঙ্ক লক্ষ্য করা গেছে। এখানেই শেষ নয়। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ দেয়া হয় নির্বাচন কমিশনে। যা আমলে নিয়ে ইতিমধ্যে কমিশন গাড়িবহর নিয়ে তার (খালেদা) প্রচার বন্ধের জন্য রিটার্নিং কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছে। সে হিসেবে আর হয়তো প্রচারে বের হতে পারছেন না সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।
অন্যদিকে বিএনপিতে গ্রেপ্তার আতঙ্ক এখন চরমে। কারণ ইতোমধ্যে ঢাকাতে বিএনপি সমর্থিত বেশ কয়েকজন কাউন্সিলর প্রার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, বিএনপি প্রার্থীদের পোলিং এজেন্টদের গ্রেপ্তার, ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ আছে।
সবশেষ শুক্রবার আফরোজা আব্বাসের সঙ্গে গণসংযোগকালে একজন কাউন্সিলর প্রার্থীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এছাড়াও শুরু থেকে সিটি নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরীর পাশাপাশি বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে সেনা মোতায়েনের দাবি ছিল বিএনপির। নির্বাচন কমিশন সার্বিক দিক বিবেচনায় সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিলেও পরে অবস্থান পাল্টায়। বলা হয়, সেনাবাহিনী নিবাসেই থাকবে। রিটার্নিং কর্মকর্তারা ডাকলে তারা বাইরে আসবে।
কমিশনের এমন সিদ্ধান্তকে বিএনপির পক্ষ থেকে ভেলকিবাজী বলা হয়েছে। একইসঙ্গে নির্বাচন নিয়ে তাদের যে আশঙ্কা তা আরো প্রকট হয়েছে বলে জানা গেছে। দলটির নেতাদের ধারণা ছিল সেনাবাহিনী থাকলে কেন্দ্র দখলসহ কারচুপির সম্ভাবনা কম থাকবে।
তবে এতো আশঙ্কার পরও দলটির নেতারা বলছেন, ভোটগ্রহণ থেকে শুরু করে ফলাফল ঘোষণা পর্যন্ত তাদের কর্মীরা কেন্দ্র পাহারা দেবেন।
শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আ স ম হান্নান শাহ বলেছেন, “যদি নির্বাচন নিয়ে তালবাহানা করা হয় তাহলে তা প্রতিহত করা হবে।”
অন্যদিকে ২৮ এপ্রিল সবাইকে ‘সকাল সকাল’ কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেছেন, “আমি স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, ভোটকেন্দ্রে ক্ষমতাসীনরা অন্য কিছু করলে আপনারা এর জবাব দেবেন।”
একইসঙ্গে ভোটের প্রচারের সময় গাড়িবহরের হামলার ঘটনা তুলে ধরে তিনি বলেছেন, “আমার প্রাণনাশের চেষ্টা হয়েছে। আমার নিরাপত্তাকর্মীদের আহত করা হয়েছে। এভাবে গুলি চালিয়ে, হামলা করে আমার চলার পথ বন্ধ করতে পারবে না। কারণ আমার সঙ্গে জনগণ আছে। মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ আছেন।”
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য জমির উদ্দিন সরকার বলেন, ‘আওয়ামী লীগ অগণতান্ত্রিক দল। তারা জানে কিভাবে কারচুপি করে ভোটে জিততে হয়। তবে দেশের জনগণ তাদের এই ষড়যন্ত্র রুখে দেবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের দিন আমাদের নেতাকর্মীরা মাঠে থাকবেন। পরিস্থিতি পর্যাবেক্ষণ করে ব্যবস্থা নেবে দল।’
মন্তব্য চালু নেই