নিজ দেশে নির্বাসনের কষ্ট এখনও পোড়ায় হাতুরুসিংহেকে

যিশুর ধর্মীয় প্রবাদে আছে, ‘নবীর মাতৃভূমিতে তাকে কেউ নবী বলে স্বীকার করে না।’ ঠিক এমনটাই হয়েছে সাবেক শ্রীলঙ্কান টেস্ট ওপেনার ও বাংলাদেশ জাতীয় দলের বর্তমান প্রধান কোচ চান্দিকা হাতুরুসিংহের সঙ্গে। আট বছর আগে নিজ দেশে নিষিদ্ধ হয়েছিলেন তিনি। এরপর আর পাকাপাকিভাবে ফেরেননি লঙ্কাভূমিতে।

১৯৯১ সালে শ্রীলঙ্কা জাতীয় দলে অভিষেকের পর খেলেছেন ২৬ টেস্ট ও ৩৫ ওয়ানডে। ক্রিকেটার হিসেবে যতটুকু না নাম করেছেন, তার চেয়ে নিজেকে শতগুণ এগিয়ে নিয়েছেন কোচিংয়ে। শুরুটা হয়েছিল শ্রীলঙ্কা ‘এ’ দলের হয়ে। অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস, দীনেশ চান্দিমালদের শিখিয়েছেন তরুণ বয়স থেকেই। জাতীয় দল থেকে বাদ পড়ার পর ‘এ’ দলে জায়গা করে নিয়েছিলেন ‘জ্যৈষ্ঠ’ ক্রিকেটার থিলান সামারাবিরা, রাসেল আর্নল্ডরা। তারাও হাতুরুসিংহের কারণেই নতুন করে ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবতে শুরু করেছিলেন।

এরপর ২০০৯ সালে জাতীয় দলের কোচিং করানোর সুযোগ আসে। নিয়োগ পান প্রধান কোচ ট্রেভর বেলিসের সহযোগী হিসেবে। ভালই চলছিল সবকিছু। এমন সময়ে জিম্বাবুয়ে পড়ে শ্রীলঙ্কা জাতীয় দলের। কোচিংয়ের লেভেল থ্রি’র পরীক্ষাও সামনে চলে আসে হাতুরুসিংহের। তাই ছুটি নিয়ে উড়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ায়। বলে গিয়েছিলেন বেলিসকে।

তাতেই চটেছিলেন ওই সময়কার শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটের সভাপতি ডি এস ডি সিলভা। জিম্বাবুয়ে সফর থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে কেন হাতুরুসিংহে সিলভার অনুমতি নেননি সেটাকেই অপরাধ হিসেবে সামনে আনা হয়। হাতুরুসিংহে অস্ট্রেলিয়া থাকা অবস্থাতেই জানতে পেরেছিলেন চাকরি হারিয়েছেন।

একই সঙ্গে দুই বছরের নিষেধাজ্ঞা। অভিমানে আর ফেরেননি। অস্ট্রেলিয়াতেই অভিবাসী হয়ে যান। সেখানেই শুরু করেন কোচিংয়ের কাজ। পরবর্তীতে ইংল্যান্ডের কাউন্টি ক্লাব ও ইংলিশ জাতীয় দলের হয়ে কাজ করে অনেকখানি জনপ্রিয় হয়েছিলেন কোচ হিসেবে।

এরপর ২০১৪ সালে বাংলাদেশের কোচ হিসেবে নিয়োগ পান। তার হাতে আমূল পরিবর্তন হতে থাকে এশিয়ার দলটির। ধারাবাহিক সাফল্য এনে দেওয়ার পথে এখনও কোচ হিসেবে রয়েছেন এই লঙ্কান কোচ। এবার তার মিশন নিজের মাতৃভূমি শ্রীলঙ্কা।

আট বছর পর আবারও ঘরে ফিরলেন সফল এই কোচ। সিরিজের আগে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে জানালেন আক্ষেপের কথা। ২০০৯ সালের সেই দুঃসহ স্মৃতি ভুলতে পারেননি এখনও সেটাও মনে করিয়ে দিলেন।

হাতুরুসিংহে বলেন, ‘২০০৯ সালের ওই ঘটনার পর আমি চলে গিয়েছিলাম। দুঃস্বপ্নটা এখনও পোড়ায়। আরও বেশি পোড়ায় দেশের ক্রিকেটের জন্য কিছু করতে না পারার কষ্ট। তবে আমি তখন যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম তার জন্য আমি সন্তুষ্ট।’

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুই টেস্টের পাশাপাশি তিনটি ওয়ানডে ও দুটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। নিজের দেশের মোকাবেলা করতেই মাতৃভূমিতে ফিরতে হয়েছে হাতুরুসিংহেকে। আক্ষেপ নয়, এর মধ্যে সুখ খুঁজে নিয়েছেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলছি বলে খুশি। অন্তত এটা আমার মাতৃভূমিকে দেখার সুযোগ করে দিয়েছে। এখান থেকে আমি অনেক সমর্থন পেয়েছি, উৎসাহ আর প্রেরণা পেয়েছি।’

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) হয়ে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটকে (এসএলসি) বার্তাটাও পৌঁছে দিলেন এই লঙ্কান কোচ। ধন্যবাদ জানিয়ে বিসিবির পক্ষ থেকে বললেন, ‘এখানে খেলতে আসার সুযোগ দেওয়ার জন্য এসএলসিকে বিসিবির পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমাদের (বাংলাদেশ) বিপক্ষে লঙ্কান দল সবচেয়ে বেশি টেস্ট খেলেছে। দুই বোর্ড সবসময় একে অপরের জন্য কাজ করেছে। সমর্থকদেরকেও ধন্যবাদ।’



মন্তব্য চালু নেই