নিজের বাল্যবিয়ে নিজেই ঠেকাল টাঙ্গাইলের স্কুলছাত্রী কল্পনা
বাল্যবিয়ে বিরুদ্ধে যতই সামাজিক সচেতনতা গড়ে তোলা হোক, দেশে বিভিন্ন অঞ্চলে এখনো ঘটে চলেছে বাল্যবিয়ের ঘটনা। অসংখ্য কিশোরী মেয়ের কাঁধে অকালেই চাপছে সংসারের বোঝা। বাবা-মা ও আত্মীয় স্বজনের চাপে মুখ বুজে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয় তাদের। তবে টাঙ্গাইলের বাসাইলের কল্পনা শীল নামক এক স্কুল ছাত্রী সেই পথে হাঁটেনি। প্রশাসনের সাহায্য নিয়ে নিজের বাল্যবিয়ে ঠেকিয়ে দিয়েছে সে।
কল্পনা শীলের বয়স আনুমানিক ১৪ বছর বলে জানা গেছে। সে বাসাইল পৌর শহরের পূর্বপাড়ার শ্রীভাস চন্দ্র শীলের কন্যা ও বাসাইল পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী।
ঘটনায় প্রকাশ, কিশোরী কল্পনার অমতে তাকে বিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিল তার পরিবারের সদস্যরা। সোমবার (২১ নভেম্বর) সেই বিয়ে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কল্পনা তার মা-বাবাকে জানিয়েছিল যে ১৮ বছর পূর্ণ না হওয়ার পর্যন্ত বিয়ে করবে না সে। কিন্তু কল্পনার মা-বাবা কিংবা আত্মীয়-স্বজনরা তার কথায় কর্ণপাত করেনি। কল্পনাকে বাল্যবিয়ে দেওয়ার সব আয়োজনই সম্পন্ন করে ফেলেছিল তারা।
নিরুপায় কল্পনা নিজের বাল্যবিয়ে ঠেকাতে শেষ পর্যন্ত প্রশাসনের দারস্থ হয়। রবিবার (২০ নভেম্বর) নবম শ্রেণির ভোকেশনাল পরীক্ষা শেষ করে দুই বান্ধবীকে নিয়ে কল্পনা হাজির হয় উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাজমুল আহসানের কার্যালয়ে। তার অমতে পরিবার কর্তৃক জোরপূর্বক বিয়ে দেওয়ার বিষয়টি নাজমুল আহসানকে জানায় সে এবং এ বিয়ে ঠেকাতে তার সাহায্য কামনা করে। সব ঘটনা শুনে কল্পনার বাবা-মাকে ডেকে পাঠান উপজেলা সহকারী কমিশনার।
১৮ বছরের আগে মেয়েকে বিয়ে দেবে না মর্মে কল্পনার মা-বাবার কাছ থেকে মুচলেকা আদায় করেন নাজমুল আহসান। সেই মুচলেকা দেওয়ার পর মেয়েকে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার অনুমতি পান শ্রীভাস চন্দ্র শীল ও তার স্ত্রী। শুধু মুচলেকা নয়, আইন অমান্য করে মেয়েকে বাল্যবিয়ে দিতে উদ্যোগী হওয়ায় কল্পনার বাবাকে ১ হাজার টাকা জরিমানা (অনাদায়ে ৭ দিনের জেল) করা হয়।
এ সময় উপজেলা সহকারী কমিশনারের কার্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মাহমুদা খাতুন, বাসাইল পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেমসহ প্রমূখ।
নিজের বাল্যবিয়ে ঠেকানো প্রসঙ্গে কল্পনা বলেছে, ‘বাল্য ও শিশু বিবাহের বিভিন্ন কুফল ও আইনের বাধ্যবাধকতা সম্পর্কে সচেতন হয়েই আমি প্রতিজ্ঞা করি ১৮ বছরের আগে বিয়ে করব না। তাই স্যারের (এসিল্যান্ড) শরণাপন্ন হয়েছি।’
এ বিষয়ে উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাজমুল আহসান বলেছেন, ‘আমরা উপজেলার বিভিন্ন স্কুল-কলেজে ও উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে ও সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে মতবিনিময় করছি। মানুষ সচেতন হচ্ছে। কল্পনা শীল তারই প্রমাণ।’
মন্তব্য চালু নেই