নিজের বইয়েই স্ববিরোধী সুবিদ আলী!
জিয়াউর রহমানকে বাংলাদেশের ‘প্রথম রাষ্ট্রপতি’ দাবি করে বিতর্কিত হওয়া সরকারদলীয় সংসদ সদস্য সুবিদ আলী তার লেখা দুটি বইয়েও স্ববিরোধী বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন। বই দুটিতে ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চের ঘটনা প্রবাহের বর্ণনায় স্ববিরোধীতা লক্ষ করা গেছে। কোথাও জিয়াউর রহমান বেতারে নিজেকে ‘হেড অব দি স্টেট’ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন বলা হয়েছে। আবার কোথাও বঙ্গবন্ধুর পক্ষেই জিয়াউর রহমান প্রথম স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন বলে দাবি করেছেন সুবিদ আলী।
গত বুধবার সরকারি প্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির এক বৈঠকে সুবিদ আলী জিয়াউর রহমানকে প্রথম রাষ্ট্রপতি বলেন মর্মে অভিযোগ করেন কমিটির অন্য সদস্যরা। যদিও পরদিন তা অস্বীকার করে সুবিদ আলী বলেন, জিয়া তার ঘোষণায় নিজেকে রাষ্ট্রপতি বলে মন্তব্য করেন, পরে যা সংশোধন করা হয়েছিল; সে বিষয়টিই তিনি বলেছিলেন।
১৯৭২ সালের জুনে আহমদ পাবলিশিং হাউস থেকে সুবিদ আলীর ‘মুক্তিযুদ্ধে নয় মাস’ গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়। ওই গ্রন্থে তিনি উল্লেখ করেছেন, প্রথমে জিয়াউর রহমান নিজেকে ‘হেড অব দি স্টেট’ অর্থাৎ রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবেই ঘোষণা দেন। পরে তা সংশোধন করে বঙ্গবন্ধুর নামে ঘোষণা দেন।
একই প্রকাশনা সংস্থা থেকে ২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত লেখা নিয়ে ‘আমি কেন স্বাধীনতার ঘোষক নই’ বইটি প্রকাশ করেন সুবিদ আলী। এই গ্রন্থের প্রথম প্রবন্ধেই কার্যত আগের দাবি থেকে সরে আসেন তিনি। ইতিহাস বিকৃতির সমালোচনা করে ওই লেখাটির উদ্দেশ্য ছিল হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্র’ বইয়ের ৩য় খণ্ডে ‘মেজর জিয়ার প্রথম স্বাধীনতা ঘোষণা’ অংশটিকে মিথ্যা প্রমাণ করা। কারণ, বইটির ওই অংশে জিয়াউর রহমান নিজেকে ‘প্রভিশনাল প্রেসিডেন্ট’ দাবি করে বেতারে ঘোষণা দিয়েছিলেন বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। এর ভিত্তিতেই তারেক রহমানসহ বিএনপির কয়েকজন নেতা জিয়াউর রহমানকে বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি বলে বিতর্ক করেছেন। যদিও ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে স্পষ্ট করে বঙ্গবন্ধুকে বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে সুবিদ আলী ‘আমি কেন স্বাধীনতার ঘোষক নই’ বইটিতে জিয়াউর রহমানের ‘প্রথম স্বাধীনতার ঘোষণা’র দাবিটি ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তার লেখা অনুযায়ী, জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর নামেই প্রথম ঘোষণা দিয়েছিলেন। ‘প্রভিশনাল প্রেসিডেন্ট’ হিসেবে জিয়া ঘোষণা দিয়েছিলেন বলে যে দাবি করা হচ্ছে, সেটি ২৫ মার্চ সেনা দরবারে সৈন্যদের উদ্দেশে তার মোটিভেশনমূলক ভাষণ ছিল বলে তিনি দাবি করেছেন। এছাড়া গ্রন্থটির ‘ঘোষক এবং ঘোষণা, এই বিতর্কের শেষ কোথায়’ প্রবন্ধেও ২৭ মার্চ জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর নামে প্রথম ঘোষণা দেন বলে দাবি করেন সুবিদ। তার মতে, জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর নামে ঘোষণার আগে ‘প্রথম স্বাধীনতার ঘোষণা’ দিয়েছিলেন বলে যেটি প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা চলছে তা ভিত্তিহীন। এ দুটি বক্তব্য সঠিক হলে সুবিদ আলীর ‘মুক্তিযুদ্ধে নয় মাস’ গ্রন্থের বক্তব্য মিথ্যে হয়ে যাবে।
অন্যদিকে ‘আমি কেন স্বাধীনতার ঘোষক নই’ বইয়ে ‘ঘোষণা দিয়ে মার্শাল ল জারি করা যায়, দেশ স্বাধীন করা যায় না’ প্রবন্ধে আবার ‘মুক্তিযুদ্ধে নয় মাস’ প্রবন্ধের বক্তব্যই তুলে ধরেন তিনি। ২৭ মার্চ জিয়াউর রহমান প্রথম দিনের ঘোষণায় ‘হেড অব দি স্টেট’ হিসেবে ঘোষণা দেন বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি লিখেন, পরদিন তা সংশোধন করে বঙ্গবন্ধুর নামে একে ‘পলিটিক্যাল কালার’ দেওয়া হয়।
এদিকে আইন করে ইতিহাস বিকৃতিকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন বিশিষ্টজনরা। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবীর বলেন, ইতিহাস বিকৃতি রোধে মুক্তিযুদ্ধ অস্বীকার আইন প্রণয়ন করা উচিৎ। যাতে করে কেউ জ্ঞাতে বা অজ্ঞাতে ইতিহাস বিকৃতি করলে তাকে শাস্তি প্রদান করা যায়।
তিনি বলেন, এটি না করলে যেমন খুশি তেমন সাজোর মতো ‘যেমন খুশি তেমন বলো’ এর প্রবণতা থামানো যাবে না।
সুবিদ আলীর বক্তব্য জানার জন্য শনিবার দুপুরে তাকে ফোন করলে ব্যক্তিগত কর্মকর্তা জানান, তিনি এখন গোসল করছেন পরে ফোন করেন।
আধাঘণ্টা পরে আবার ফোন করলে সুবিদ আলীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা বলেন, দুই ঘণ্টা পরে ফোন করেন।-পরিবর্তন
মন্তব্য চালু নেই