প্রধানমন্ত্রীকে খালেদা :
নিজের দুর্নীতির মামলা তুলে নিলেন কেন?
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার নামে হওয়া দুর্নীতির মামলাগুলোতে আদালতের মুখোমুখি না হয়ে কেন তা তুলে নিয়েছেন, সে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, ‘আপনার নামে ১৫টি মামলা ছিল। আমি জানতে চাই, এই মামলাগুলো কেন উঠিয়ে নিলেন। নিরপেক্ষ কোর্টের মাধ্যমে ফেস করতেন, দেখতাম কতো সাহস। সে জন্য তো মঈনউদ্দিন-ফখরুদ্দিনের পা ধরেছেন।’
মিগ-২৯ দুর্র্নীতির মামলায় প্রধানমন্ত্রী সাজা হতো, এ দাবি করে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মিগ-২৯ নিয়ে তিনি জালিয়াতি করেছেন। নতুন যুদ্ধবিমান না কিনে পুরোনো আর জোড়াতালি দেওয়া জিনিস বেশি দামে কিনেছেন।’
বিএনপি প্রধান বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের নামে ৮ হাজার এবং হাসিনার নামে ১৫টি মামলা ছিল। এসব মামলা উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে। আর বিএনপির নেতা-কর্মীদের নামে নতুন নুতন মামলা দেওয়া হয়েছে। এম কে আনোয়ারের মতো বয়স্ক নেতাদের নামে গাড়ি পোড়ানোর মামলা দেওয়া হয়েছে।’
এবার আন্দোলনের সামনে থাকবেন খালেদা :
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, এবার আন্দোলন সংগ্রামে তিনি রাজপথে মিছিলের সামনে থেকে নেতৃত্ব দেবেন।
তিনি বলেছেন, ‘এবার আন্দোলনে আমরা আগে থাকবো, দেখি পুলিশ কী করে গুলি করে। গুলি করে গদি রক্ষা করা যাবে না।’
শনিবার কুমিল্লার টাউন হল মাঠে ২০ দলীয় জোটের জনসমাবেশে এ কথা বলেন তিনি।
সাধারণ মানুষের গুলিবর্ষণকারী পুলিশদের সমালোচনা করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমি বিদেশিদের বলবো আপনারা গুলি দেন অপরাধীদের ধরার জন্য। কিন্তু নিরীহ মানুষের ওপর গুলি চালাচ্ছে। বিদেশিদের কাছে আমাদের আহ্বান, আপনারা গুলি, টিয়ারগ্যাস দেবেন না, যারা মানুষ খুন করছে তাদের প্রশিক্ষণ দেবেন না।’
নেতাকর্মী উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আন্দোলনের ডাক দিবো, সুদিনের জন্য কিছুটা কষ্ট করতে হবে।’
এর আগে জনসভায় বক্তব্যের শুরুতেই স্মৃতিচারণ করেন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার পর জিয়াউর রহমানের প্রথম পোস্টিং কুমিল্লাতে হয়েছিল। তাই কুমিল্লাকে নিজের শহর মনে হয়।’
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কড়া সমালোচনা করে ২০ দলীয় জোট নেত্রী বলেন, ‘এটা দুর্নীতি দমন কমিশন নয়, এটা হলো দায় মুক্তি কমিশন। এর মাধ্যমে সরকারি লোকেরা একের পর এক দুর্নীতি করে চলছে। আর এরা তাদের দায় মুক্তি দিচ্ছে। ’
৫ জানুয়ারির দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রক্রিয়া নিয়ে আওয়ামী লীগ এবং নির্বাচন কমিশনের কঠোর সমালোচনা করে বিএনপি নেত্রী বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন হলো আওয়ামী লীগে পা চাটা, আজ্ঞাবহ।’
খালেদা জিয়া বলেন, ‘বর্তমান সংসদ অবৈধ। এখান থেকে আইন পাস করার অধিকার নেই। তারা ক্ষমতার জোরে যা-ই করুক না কেন তা টিকবে না। পার্লামেন্ট এখন তাদের নিজেদের ঘর হয়ে গেছে।’
সম্প্রচার নীতিমালা, বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদে ফিরিয়ে দেয়ার আইন নিয়েও সরকারের সমালোচনা করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘জজ সাহেবদের হাত বেঁধে দিয়েছে আওয়ামী লীগ।’
খালেদা জিয়া বলেন, ‘এইচটি ইমাম ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে যে কথা বলেছেন তার পর এইচটি ইমাম এবং আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় থাকা ঠিক না।’
তিনি বলেন, ‘এইচ টি ইমামের মাথায় শয়তানি এবং কুবুদ্ধি রয়েছে। পাকিস্তানের সময় দুর্নীতির কারণে তার চাকরি গিয়েছিল। খন্দকার মোশতাকের সময় কেবিনেট সচিব ছিল।’
আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে দাবি করে ২০ দলীয় জোট নেত্রী বলেন, ‘ছাত্রলীগ-যুবলীগসহ ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বিভিন্ন জায়গায় সন্ত্রাস করছে। ছাত্রলীগ-যুবলীগের অস্ত্রধারীদের নামে মামলা দিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করতে হবে।’
খালেদা জিয়া অভিযোগ করে বলেন, ‘খুনি চোরদের জেল খানা থেকে আওয়ামী লীগ ছেড়ে দিচ্ছে। একজন শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী এমপিকে জামিন দেয়া হয়েছে। অথচ খন্দকার মোশাররফকে জামিন দেয়া হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপি সরকারের সময় ভালো কাজের জন্য র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ান-র্যাব গঠন করা হলেও তারা এখন খুনি। নারায়ণগঞ্জে আলোচিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় র্যাবের শীর্ষ কর্মকর্তা কর্নেল জিয়া জড়িত ছিল। অবিলম্বে তাকে চাকরি থেকে বহিষ্কার করে আইনের আওতায় আনতে হবে।’
অবিলম্বে র্যাবের বিলুপ্তি দাবি করেন খালেদা জিয়া।
শনিবার বিকেল সোয়া ৪টায় বক্তব্য শুরু করেন খালেদা। এরআগে শনিবার বিকেল ৩টা ১০ মিনিটে জনসভামঞ্চে ওঠেন তিনি।
শনিবার সকাল ১০টা ২২ মিনিটে গুলশানের বাসভবন থেকে রওনা হয়ে দুপুর ২টার দিকে তিনি কুমিল্লা সার্কিট হাউজে পৌঁছান। সেখানে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে জনসভাস্থলে যান তিনি।
নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচনের দাবিতে এই জনসমাবেশের আয়োজন করা হয়।
কুমিল্লা টাউন হল মাঠে জেলা দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি বেগম রাবেয়া চৌধুরী সভাপতিত্বে দুপুর ১টায় আনুষ্ঠানিকভাবে জনসভা শুরু হয়।
জনসভা প্রসঙ্গে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক মনিরুল হক সাক্কু জানিয়েছেন, মহাসমাবেশে নেত্রীর বক্তব্য শুনতে যাতে জনগণের কষ্ট না হয় সেজন্য নগরীর বিভিন্ন স্থানে ২২৬টি মাইক দেয়া হয়েছে। আর বড় প্রজেক্টর রাখা হয়েছে নগরীর ৬টি স্থানে। সেগুলো ঈদগাহ মোড়, পুলিশ লাইন মোড়, রানীর দিঘিরপাড়, হোটেল সালাউদ্দিন মোড়, রানীর বাজার মোড় ও রাজগঞ্জ মোড়ে বসানো হয়েছে।
খালেদা জিয়ার জনসভা উপলক্ষে অর্ধলাখ ব্যানার ফেস্টুন আর সাত শতাধিক তোরণে মুড়ে ফেলা হয়েছে কুমিল্লা জেলাকে।
৫০ লাখ পুলিশও আন্দোলন থামাতে পারবে না : মির্জা আব্বাস
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী গতকাল বলেছেন, মামলার ভয়ে বেগম খালেদা জিয়া পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। বেগম জিয়া পালিয়ে বেড়াচ্ছেন না তিনি সারা দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছেন না। আর এ কারণে ভয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ৫০ হাজার পুলিশ নিয়োগ দেয়া হবে।’
মির্জা আব্বাস বলেন, ‘৫০ হাজার নয় ৫০ লাখ পুলিশও আমাদের আন্দোলন থামাতে পারবে না। আন্দোলন অব্যাহত থাকবে, দুর্বার আন্দোলন হবে।’
শনিবার বিকেলে কুমিল্লা টাউন হল মাঠে ২০ দলীয় জোট আয়োজিত জনসভায় এসব কথা বলেন আব্বাস। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচনের দাবিতে এই জনসমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে।
জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত আছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। ৩টা ১০ মিনিটে জনসভামঞ্চে ওঠেন তিনি।
এরআগে শনিবার সকাল সকাল ১০ টা ২২ মিনিটে গুলশানের বাসভবন কুমিল্লার উদ্দেশ্যে রওনা হন বেগম জিয়া।
মন্তব্য চালু নেই