না.গঞ্জ পুলিশ কর্মকর্তার ‘জননেত্রী’ প্রেম
নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ওপেন হাউজ ডে’র একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে সরকার ও আওয়ামী লীগের বন্দনায় তোপের মুখে পড়েছেন জেলা পুলিশের অতিরিক্ত সহকারী পুলিশ সুপার সুব্রত কুমার হালদার। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হয়েও তিনি তার বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘জননেত্রী’ বলে আখ্যায়িত করেন।
অনুষ্ঠানটি পুলিশের সঙ্গে সাধারণ মানুষের মতবিনিময়ের হলেও এখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘জননেত্রী’ বলায় বিষয়টি রাজনৈতিক পর্যায়ে যাচ্ছে এমন মন্তব্য করে প্রতিবাদ জানান কয়েকজন সাংবাদিক। তবে এ ঘটনায় সুব্রত কুমার হালদার লজ্জিত হলেও ফুঁসে উঠেন এক সহকারী পুলিশ সুপার। পরে ওসি মঞ্জুর কাদের সবাইকে শান্ত করেন।
মঙ্গলবার বিকেলে ওপেন হাউজ ডে আয়োজন করে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানা পুলিশ। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা পুলিশ সুপার ড. খন্দকার মহিদউদ্দিন খন্দকার। এতে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি সমাজের বিভিন্ন স্তরের লোকজনও উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যের আগে তাকে আমন্ত্রণ জানাতে মাইক হাতে নেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুব্রত কুমার হালদার। এসময় তিনি সরকারের বিভিন্ন প্রশংসা করতে থাকেন। বক্তব্যের মাঝে হঠাৎ করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কয়েকবার ‘জননেত্রী’ বলে আখ্যায়িত করেন তিনি। এতে করে উপস্থিত লোকজনদের মধ্যে নানা ধরনের গুঞ্জন শুরু হয়।
ওই সময় একজন সিনিয়র সাংবাদিকসহ আরো কয়েকজন সুব্রত কুমার হালদারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ‘আপনি একজন পুলিশ কর্মকর্তা ও প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হয়ে এ ধরনের রাজনৈতিক সম্বোধন ও বক্তব্য দিতে পারেন কি না?’
তখন সুব্রত কুমার হালদার বিষয়টিতে অনেকটাই লজ্জা পেয়ে মুখ অন্যদিকে ফিরিয়ে নিলেও ওই সাংবাদিকদের দিকে চোখ রাঙান জেলা পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) মোহাম্মদ বশির উদ্দিন আহম্মেদ। তিনি সাংবাদিকদের ‘চুপ থাকেন’ বলেও কয়েকবার ধমকের সুরে কথা বলেন।
পরে সাংবাদিক এবং ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তার মধ্যে কয়েকবার তর্কাতর্কির একপর্যায়ে থানার ওসি মঞ্জুর কাদের তাদেরকে নিবৃত্ত করেন।
ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত একাধিক ব্যক্তি জানান, পুলিশের একজন সদস্য এভাবে বক্তব্য দিতে পারেন না। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার দেশের অনেক উন্নয়ন করলেও তাকে সাধারণত ‘জননেত্রী’ হিসেবে আখ্যা দেন দলের নেতাকর্মীরা। কিন্তু পুলিশ প্রশংসা করতে গিয়ে রাজনৈতিকের আচরণ করেছেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার ড. খন্দাকার মহিদউদ্দিন বলেছেন, ‘সামাজের অপরাধ নির্মূল করতে হলে নিজেদের এগিয়ে আসতে হবে। ব্যবসা-বাণিজ্য সহয়তা করা আমাদের কাজ, বাধাগ্রস্ত করা নয়।’
তিনি বলেন, ‘মাদকের কারণে সমাজে ছিনতাই, রাহাজানিসহ বহু অপরাধ সংগঠিত হয়। তাই মাদকের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। রুখে না দাঁড়াতে পারলে একদিন আপনার পরিবার ও সমাজ ধ্বংসের মুখে পড়বে।’
অনুষ্ঠানে সভাপত্বি করেন জেলা কমিউনিটি পুলিশিংয়ের সভাপতি কুতুবউদ্দিন আহম্মেদ আকসির। অনুষ্ঠান পরিচালা করেন নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্ত এসএম মঞ্জুর কাদের পিপিএম।
এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতি সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন খান, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি শাহনেওয়াজ চৌধুরী প্রমুখ।
মন্তব্য চালু নেই