নায়েক রাজ্জাককে অপহরণের নেপথ্য কারণ ইয়াবা!
ইয়াবা উৎপাদন ও পাচারে মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় বাহিনী জড়িত থাকায় ইয়াবা চোরাচালান রোধ করা যাচ্ছে না বলে মনে করছেন বাংলাদেশের আইন শৃঙ্খলা-বাহিনীর কর্মকর্তারা।
গত ১৭ জুন টেকনাফের নাফনদীতে বাংলাদেশের জলসীমায় অনুপ্রবেশ করে গোলাগুলির পর বিজিবির নায়েক রাজ্জাককে ধরে নিয়ে যাওয়ার পিছনেও রয়েছে ইয়াবার চালান আটকের ঘটনা। অনুসন্ধানে এমনটিই জানা যায়।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সূত্র জানিয়েছে, গত ১৭ জুন টেকনাফের নাফনদীতে বাংলাদেশের জলসীমায় অনুপ্রবেশ করে গোলাগুলির পর বিজিবির নায়েক রাজ্জাককে ধরে নিয়ে যায় মিয়ানমারের বিজিপি। এতে বিপ্লব নামে একজন বিজিবি সদস্য গুলিবিদ্ধও হন। এ সময় বাংলাদেশের দু জেলেকেও রাজ্জাকের সঙ্গে ধরে নিয়ে গিয়েছিল মিয়ানমারের বিজিপি।
এ দুজন হলো, টেকনাফের নীলা ইউনিয়নের জলদাশ পাড়ার নিলা কান্তি দাশের পুত্র লাল মোহন দাশ (২৮) ও রামপদ দাশের পুত্র জীবন দাশ (১২)। তারা দুই জন সম্পর্কে মামা-ভাগিনা।
গত ১৭ জুন এ দুজন একটি নৌকা নিয়ে প্রতিদিনের মত মাছ ধরতে নামে নাফনদীতে। বিজিবির তিন সদস্যের একটি ট্রলার তল্লাশী করতে যায় তাদের নৌকা। আর তখনই সাদা পোষাকধারী মিয়ানমারের বিজিপির একটি দল অনুপ্রবেশ করে হামলা চালায় বিজিবিকে লক্ষ্য করে। গোলাগুলির পর নায়েক রাজ্জাকের সঙ্গে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় লাল মোহন দাশ ও জীবন দাশকে।
এ জেলে দুজনের কাছ থেকেই নায়েক রাজ্জাককে বিজিপির নির্যাতনের বিষয়টি জানা যায়। তারা জানিয়েছে, মিয়ানমারের ক্যাম্পে বিজিবির নায়েককে নগ্ন করে নির্যাতন করা হয়। নায়েক রাজ্জাক যে লুঙ্গি পরিধান করেছে তা জেলে লাল মোহনের।
লাল মোহন দাশ বলেন, ক্যাম্পে নিয়ে রাজ্জাককে হাত কড়া পরিয়ে আমার কাছে জানতে চাওয়া হয় নায়েক রাজ্জাকের নাম লুৎফুর কিনা। আমি উত্তরে না বলি। তখন বিজিপির দুসদস্যকে একে অপরকে বলতে শুনেছি হাবিলদার লুৎফুর তাদের অনেক ইয়াবার চালান আটক করেছে। যদি লুৎফুরকে পাওয়া যায় তা হলে তাকে হত্যা করা হবে।
লাল মোহনের দাবি লুৎফুর মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে প্রবেশের সময় বিপুল পরিমাণ ইয়াবা আটক করেছে। এতে ক্ষুব্দ মিয়ানমারের বিজিপি।
বিজিবির টেকনাফস্থ ৪২ ব্যাটেলিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল আবুজার আল জাহিদ জানান, ইয়াবাসহ যে লোকগুলোকে বিজিবি আটক করে তাদের সঙ্গে কথা-বার্তা বলে ইয়াবা পাচারের সঙ্গে মিয়ানমারের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া যায়। ইয়াবা আটকের ঘটনায় বিজিপি ক্ষুব্দ। নায়েক রাজ্জাক অপহরণ তারই ক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়া।
তিনি জানান, বাংলাদেশ-মিয়ানমারের আগের পতাকা বৈঠকগুলোতে ইয়াবা পাচারে মিয়ানমার বাহিনীর জড়িত থাকার বিষয়টি বিজিবি তুলে ধরে। কিন্তু পাচার বন্ধে মিয়ানমার বারবার আশ্বাস দিলেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
বিজিবির এ কর্মকর্তা জানান, বিজিবির হাবিলদার লুৎফুর ইয়াবা আটকের জন্য পুরষ্কৃত হয়েছেন। তার উপর বিজিপি যে ক্ষুব্দ তা তারা জানেন।
পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি শফিকুল ইসলাম বলেন, যেভাবে সীমান্তের কাছাকাছি ইয়াবা উৎপাদনের কারখানা তৈরি করেছে তাতে বোঝা যাচ্ছে কারো পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া এভাবে প্রকাশ্যে মাদক কারখানা গড়ে তোলা সম্ভব না। আমাদের বিজিবির পক্ষ থেকে তাদের সমস্ত কারখানা কারা চালাচ্ছে সেখানে কী উৎপাদন হচ্ছে সমস্ত তথ্য দেয়া হয়েছে। তারা কথাও দিয়েছেন এগুলো বন্ধ করে দেবেন। কিন্তু এই ধরনের কোনো তৎপরতা এখন পর্যন্ত আমরা লক্ষ্য করছি না।
এ অবস্থায় ইয়াবা পাচার বন্ধের জন্য মিয়ানমারের ওপর কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টির কথা বলছেন মিয়ানমারে দায়িত্বপালনকারী প্রাক্তন কূটনীতিক মেজর অব. এমদাদুল ইসলাম। তিনি বলেন, মিয়ানমারকে কূটনৈতিকভাবে চাপ প্রয়োগ করতে হবে। আমাদের বলতে হবে যে, তোমাদের এই বিষয়টাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছি না, এটাকে নেতিবাচক হিসেবে দেখছি।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, গত দেড় বছরে বিজিবি ৪৫ লাখ পিস, আর গত ৬ মাসে র্যাব ২২ লাখ পিস ও নৌ-বাহিনী ১৫ লাখ পিস ইয়াবা উদ্ধার করেছে।
মন্তব্য চালু নেই