নাসিরনগরে কাটছে আতঙ্ক, গ্রামে ফিরছেন মানুষ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলা সদর ও হরিপুর ইউনিয়নে হিন্দুপল্লিতে হামলা চালিয়ে মন্দির ও ঘরবাড়ি ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনায় গ্রেফতার আতঙ্কে পালিয়ে বেড়ানো সাধারণ মানুষজন দলে দলে গ্রামে ফিরছেন।

নিরপরাধ কোনো মানুষকে গ্রেফতার না করার ব্যাপারে গ্রামে-গ্রামে পুলিশের করা মাইকিংয়ের পর থেকেই মানুষজন গ্রামে ফিরতে শুরু করেছেন। পাশাপাশি পুলিশের ভূমিকায় সন্তুষ্ট হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনদের মধ্যে ফের হামলার শিকার হওয়ার ভয়ও দূর হচ্ছে ধীরে ধীরে।

সরকারি-বেসরকারি সহায়তায় ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছেন নাসিরনগরের হিন্দুপল্লির ক্ষতিগ্রস্তরা।

সরেজমিন নাসিরনগরে গিয়ে দেখা যায়, বাংলাদেশের অন্য আর পাঁচটা উপজেলা সদরের মতোই নাসিরনগর উপজেলা সদরের চিত্র। হাট-বাজারসহ সব স্থানেই ছিল সাধারণ মানুষের সরব উপস্থিতি। উপজেলা সদরের বিভিন্ন চায়ের দোকানগুলোতে বসে খোশ-গল্পে মত্ত ছিলেন এলাকার বয়োজেষ্ঠ্যরা। এমন চিত্র ছিল উপজেলা সদরের পাশের গ্রামগুলোতেও।

এছাড়া সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষজনদের নিরাপত্তায় উপজেলা সদরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে অর্ধশতাধিক ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। পাশাপাশি এখনো টহলে রয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

এদিকে, সরকারি-বেসরকারি ত্রাণ সহায়তায় ঘুড়ে দাঁড়াচ্ছেন হিন্দুপল্লির ক্ষতিগ্রস্তরা। প্রশাসনের দেয়া নতুন টিনে জোড়া লাগছে ভাঙা ঘর। সংস্কার করা হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত মন্দিরগুলোও।

এছাড়া নাসিরনগরে সব সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যকার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে জেলা পুলিশ। প্রতিদিনই উপজেলার বিভিন্ন ওয়ার্ড ও গ্রামে সাধারণ মানুষদের নিয়ে উঠান বৈঠক ও সম্প্রীতি সমাবেশ করছে পুলিশ। এসব সমাবেশ থেকে সাধারণ মানুষকে তাদের মনে লুকিয়ে থাকা ভয়-ভীতি দূর করার পাশাপাশি সবসময় তাদের পাশে থাকারও আশ্বাস দেয়া হচ্ছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোসাইন বলেন, নাসিরনগরের আগের সেই শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। হিন্দুপল্লির বাসিন্দাদের মধ্যে যে আতঙ্ক বিরাজ করছিল, সেটাও কেটে যাচ্ছে। পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক বললেই চলে।

আমরা নিয়মিত সব সম্প্রদায়ের মানুষদের নিয়ে উঠান বৈঠক ও সম্প্রীতি সমাবেশ করছি। নতুন করে নাসিরনগরে আর কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবে না বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

উল্লেখ্য, গত ২৯ অক্টোবর ফেসবুকে পবিত্র কাবা শরিফ নিয়ে ব্যঙ্গচিত্র করে পোস্ট দেয়ার অভিযোগে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) মামলায় গ্রেফতার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের হরিণবেড় গ্রামের জগন্নাথ দাসের ছেলে রসরাজ (৩০) দাসের ফাঁসির দাবিতে উত্তাল হয়ে ওঠে নাসিরনগর উপজেলা।

পর দিন (৩০ অক্টোবর) মাইকিং করে সমাবেশ ডাকে দুটি ইসলামী সংগঠন। সমাবেশ শেষ হওয়ার পরপরই দুষ্কৃতকারীরা নাসিরনগর উপজেলা সদরে তাণ্ডব চালায়। এ সময় দুষ্কৃতকারীরা উপজেলার অন্তত ১০টি মন্দির ও শতাধিক ঘরবাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করে।

এরপর ৪ নভেম্বর ভোরে ও ১৩ নভেম্বর ভোরে দুষ্কৃতকারীরা আবারও উপজেলা সদরে হিন্দু সম্প্রদায়েরর অন্তত ছয়টি ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। এসব ঘটনায় নাসিরনগর থানায় পৃথক সাতটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় এখন পর্যন্ত ভিডিও ফুটেজ দেখে ৮৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।



মন্তব্য চালু নেই