নারী নির্যাতনের পেছনে কিছু কারণ…

এই একবিংশ শতাব্দীতে উন্নয়নের সমান অংশীদার যেখানে নারী, সেখানে স্বীকৃতি পায়নি ভারতীয় উপমহাদেশের নারীরা। তাদের দিনলিপিতে মিশে গেছে নির্যাতনের নানা চিত্র। যেন পুরুষ নিয়ন্ত্রিত একটা বইয়ের পাতায় লেখা একেক নারীর নির্যাতনের গল্প লেখা। এই যুগে যেখানে মেয়েদের সব রকম স্বাধীনতা পাওয়ার অধিকার স্বীকৃত সেখানে অধিকাংশ নারীরা নিভৃতে সহ্য করে যাচ্ছে অত্যাচার। অথচ ভালোবাসার প্রতিশ্রুতিতেই সম্পন্ন হয় বিয়ে। তার মধ্যে স্ত্রীকে দেখভাল করা, নিরাপত্তা দান, মানসিক প্রশান্তির বিষয়ও থাকে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় স্বামী তার বউকে দাসীতে পরিণত করেছে। মানসিক, শারীরিক নির্যাতন আর অপমান এসে জুটে তার ভাগ্যে। গবেষণায় দেখা যায়, সন্ত্রাসের চর্চা মূলত পরিবার থেকে এভাবে শুরু হয়ে শেষে বর্তায় সমাজের ওপর। ভারতের জাতীয় ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর রিপোর্ট অনুযায়ী প্রতি তিন মিনিটে একজন নারী নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। এই নির্যাতনের পেছনে কিছু কারণ দায়ি করা হয়েছে। তা হল-

পরকীয়া

কোনো সম্পর্কে জড়িত থাকা অবস্থায় বাড়ির চাপাচাপিতে অন্য জায়গায় বিয়ের কারণে স্ত্রীর ওপর হতে পারে নির্যাতন। বিয়ের পরেও যদি বউ মনের মতো না হয় অনেক স্বামীর পরকীয়ায় মজে যান। তখন দেখা যায় সংসার বা স্ত্রীর কোনো মূল্যই তার কাছে নেই। মূল্যহীন সম্পর্কে থেকে তার মেজাজও অনেক সময় খিটখিটে হয়ে যায়। পরিবারের দায়িত্বে অবহেলা শুরু হয়। এক সময় দেখা যায় এসব নিয়ে বউয়ের সঙ্গে ঝগড়া বাধে। পরবর্তীতে নির্যাতনের শিকার হয় কমজোর স্ত্রী।

সন্দেহ

বিয়ের প্রথম দিকে সিনেমার মতো রঙিন। কিছুদিন যেতে না যেতেই স্ত্রীর বন্ধু বা কাজিনদের আচরণে মনের মাঝে খটকা লেগে বসতে পারে। আর তখনি হয়তো স্বামীর মনে সন্দেহের ঘুণ পোকার বসতি গড়ে ওঠে। সেই ঘুণ পোকার অবসান না হওয়া পর্যন্ত মনে মনে আগ্নেয়গিরির তোলপাড়া শুরু হয়। একটা সময় পর নিছক সন্দেহে বউয়ের ওপর হয় নির্যাতন।

দৈহিক মিলনে অনীহা

অনেক নারীর দৈহিক মিলনে ভীতি বা নিপুণতার অভাবে বেশ অনীহা থাকে। কিন্তু পুরুষটি তার অনীহাকে দুর্বলতা ভাবে। মানসিক বোঝাপড়া না করেই স্ত্রীর ওপর চড়াও হয়। নিজের শারীরিক চাহিদা পুরণে নারীর ওপর নেমে আসে তুফান। প্রকারান্তে নারীটি তার স্বামীর কাছে যৌন হয়রানির শিকার হতে থাকে দিনের পর দিন। এতে এক সময় সে অসুস্থও হয়ে পড়তে পারে।

নেশাগ্রস্ত

অনেক ছেলের নেশা করার বদ অভ্যাস থাকে। নেশাগ্রস্ত স্বামী বিনা কারণেই স্ত্রীর ওপর চড়াও হতে পারে। তাকে গালমন্দ, মারধোর, ঘরের জিনিস নষ্ট করাসহ জীবননাশের কারণ হতে পারে।

যৌতুক

Nari2আমাদের সমাজের একটা কলঙ্কিত অধ্যায় হল বিয়ের জন্য যৌতুক প্রদান। অভাবী বাবা মা যৌতুকের আশ্বাস দিয়ে মেয়ে বিয়ে দিলেও দারিদ্রতার কারণে তা অনেক সময় পরিশোধ করা সম্ভব হয় না। আর তখনই কথায়, কাজে এবং আঘাতের মাধ্যমে শ্বশুর বাড়িতে মেয়েকে নির্যাতিত হতে হয়।

শাশুড়ি-ননদের চাহিদা

নতুন বউ ঘরে এলে শাশুড়ি-ননদের ধারণা, বিনা পয়সায় কাজের মেয়ে পেলাম। তারা নানা আবদারে তাকে চরকার মতো ঘুরাতে থাকে। কোনো কাজে ভুল হলেই নানা কথা শুনিয়ে দেয়। শারীরিক নির্যাতন করতেও অনেক শাশুড়ি-ননদ বাদ রাখেন না।

বন্ধ্যাত্ব

ছেলের বিয়ে দেয়া মানেই সন্তান সন্তুতির জন্ম, বংশ রক্ষা। অনেক সময় শারীরিক সামান্য সমস্যার কারণে বাচ্চা হতে দেরি হলে তাকে চিকিৎসা না করিয়ে উল্টো বকাঝকা করা হয়। ছেলেকে দ্বিতীয় বিয়ে দেয়া হয়। এমনকি তালাক পর্যন্তও হতে পারে।

মেয়ে সন্তান জন্মদান

ছেলে বা মেয়ে সন্তান জন্মানো নির্ভর করে বাবার ওপর। কিন্তু কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজ এখনো মেয়েদেরকেই দায়ি করে। তাছাড়া আমাদের সমাজে এখনো মেয়েদেরকে শুধু বোঝায় মনে করা হয়। তাই সংসারে মেয়ে বাচ্চা এলে মায়ের ওপর হয় অত্যাচার।



মন্তব্য চালু নেই