নারীরা যৌন হয়রানির শিকার কীভাবে হয়? জেনে নিন এর রকমফের…
আপনার ডিভোর্স হয়ে গিয়েছে, ছোট্ট মেয়েটিকে নিয়ে একাই লড়ে যাচ্ছেন নিজের জীবন নিয়ে। অফিসে সিনিয়র কলিগের সাথে কথাপ্রসঙ্গে উঠে এল আপনার ছাড়াছাড়ির ব্যাপারটি।
প্রথমে সিমপ্যাথি দেখিয়ে কথা চলছিল, এক পর্যায়ে হঠাৎ ওই সিনিয়র কলিগ বলে বসলেন- “আচ্ছা মিতা, তুমি তো ইয়ং এবং সুন্দরী, একা একা তোমার চলে কিভাবে?” যে মুহূর্তে এটি বলা হল, আপনি কিন্তু যৌন হয়রানির শিকার হলেন। সরল বিশ্বা…সে আপনি মনে করতে পারেন উনি আপনার খোঁজ খবর নিচ্ছেন, ব্যাপারটা মোটেও অমন নয়। That bastard is trying to put his nose in your extremely personal matters.
বাংলাদেশে পুরুষদের একটা বিশাল অংশ Sexually perverted, starved and frustrated, সংক্ষেপে বলতে গেলে পিএসএফ(PSF)। এই পিএসএফ গুলোর কাজই হচ্ছে যেখানে সুযোগ পায় নাড়া দিয়ে দেখা, যদি কিছু মেলে! আজকের লেখাটি তাঁদের জন্য, যারা নিজের অজান্তেই শিকার হচ্ছেন যৌন হয়রানির। প্রথম অংশে থাকবে প্রকারভেদ, পরের অংশে থাকবে এ্যাকশন স্টেপস। এল প্যাসো কমিউনিটি কলেজের ওয়েবসাইটে পাঁচ ধরনের যৌন হয়রানির কথা বলা হয়েছে। এ লেখাটিতে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই পাঁচটি ব্যাখ্যা করতে চেষ্টা করছি।
প্রথমটি হচ্ছে Gender Harassment বা লৈঙ্গিক হয়রানি। “আহা, এত সুন্দর ফিগার, আপনার প্রমোশন ঠেকায় কে?”- জাতীয় কমেন্ট, নোংরা জোক ইত্যাদি এর অন্তর্ভুক্ত। সিনিয়র কলিগের রূমে ঢুকে দেখলেন তিনি পিসিতে পর্ন চালিয়ে রেখেছেন, আপনি ঢোকার পর ইঙ্গিতপূর্ণ হাসি দিয়ে বসতে বললেন- this is also a classic example. “এত খিটখিট করছেন কেন, মাসের বিশেষ দিন চলছে নাকি?” – এজাতীয় মন্তব্যও এই হয়রানির অন্তর্ভুক্ত।
দ্বিতীয়টি হচ্ছে কামাতুর আচরণ বা Seductive Behavior। বলা নেই কওয়া নেই হুট করে একটা মেয়েকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়া, মোবাইলে অসময়ে ফোন করা, অফিসে উল্টোপাল্টা টাইমে একা বসিয়ে রাখা, প্রত্যাখ্যান করার পরেও আঠার মত লেগে থাকা, বার বার নিষেধ করার পরেও ডিনারের আমন্ত্রণ জানানো, উল্টোপাল্টা টেক্সট করা, ফেসবুক বা সোশাল মিডিয়াতে আউট অফ কনটেক্সট ইঙ্গিতপূর্ণ কমেন্ট করা- এগুলো হচ্ছে কামাতুর আচরণ।
তৃতীয়টি হচ্ছে যৌন উৎকোচ বা ঘুষ। রাতে থেকে যাও আমার এখানে, নেক্সট আমেরিকা ট্রিপে তোমাকে সিলেক্ট করব- এজাতীয় প্রস্তাব হচ্ছে sexual bribery. প্রমোশন, সুযোগ সুবিধা, ফরেন ট্রিপ, শপিং, পোস্টিং- ইত্যাদির বিনিময়ে যৌন সুবিধা কেউ নিতে চাইলেই বুঝবেন তিনি আপনাকে যৌন হয়রানি করছেন।
চতুর্থটি হচ্ছে জোর জবরদস্তি। শাস্তি, ডিমোশন, চাকুরিচ্যুতি ইত্যাদির ভয় দেখিয়ে sexual advantage নিতে চাওয়াটা এধরণের আচরণের অন্তর্ভুক্ত।
পঞ্চমটা হচ্ছে সরাসরি গায়ে হাত দেয়া। অফিসের পার্টিতে নাচার ছলে, লিফটে গা ঘেঁষে, গাড়িতে পাশাপাশি বসে কেউ এই কাজ করামাত্রই সে sexual harassment করল। এটা হালকাভাবে নেবার কোন উপায় নেই।
প্রিয় পাঠক,
এবার অ্যাকশন স্টেপস:
এক) বেনিফিট অফ ডাউট দেয়া বন্ধ করুন। শুরুতেই চিহ্নিত করুন যে আপনি যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এ ধরণের হিন্ট পাওয়ামাত্র সরাসরি বলুন যে আপনি এটি পছন্দ করছেন না।
A sexual offender is a criminal no matter what his position is.
যত সিনিয়র অফিসারই হোক, ভয় পাবেন না। চোখে চোখ রেখে ঠান্ডা গলায় আপনার আপত্তি জানিয়ে দিন। বেশিরভাগ সময়ে দ্বিতীয়বার এই কাজ করবেনা।
দুই) বার বার একই আচরণ করলে গোপনে তা মোবাইলে রেকর্ড করুন, তারপর রেকর্ডিং সহ অফিসের ডিসিপ্লিনারি সেকশনে অভিযোগ করুন। এতে যদি কাজ না হয়, প্রয়োজনে জিডি করুন নিকটস্থ থানায়।
তিন) আশেপাশের মানুষের কুকথায় পাত্তা দেবেন না। এরা আপনার মাস শেষে বিলটা দিয়ে দেয় না, এদের কথায় আপনার কিছু যায় আসে না।
চার) “আর কারো সাথে হয়না, আপনার সাথেই হয় কেন” টাইপ কথা কানে নেবেন না। সবার সাথেই হয়, কেউ মেনে নেয় চুপচাপ আর কেউ বীরের মত প্রতিবাদ করে, আপনি যেমন করছেন:
“অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে
তব ঘৃণা যেন তারে তৃণসম দহে”
পাঁচ) হজ্জ্ব করা, দুই বাচ্চার বাবা, বউ পাশের অফিসেই কাজ করে- ওতে কিচ্ছু যায় আসে না। Always keep your guards up. অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, বিবাহিত লোকজন “রোমান্টিক” বেশি হয়। বয়েস, চাকুরি, মেধা, প্রতিভা, নামাজ কালাম পড়া, টুপিদাড়ি ইত্যাদি দেখে ইমপ্রেস হয়েছেন কি মরেছেন। These morons use these things to get into your pants.
সর্বশেষ এবং সবচেয়ে জরুরি স্ট্র্যাটেজি দিয়েছেন কবিগুরু,
যখনি দাঁড়াবে তুমি তখনি তোমার সম্মুখে সে,
পথকুক্কুরের মত সভয়ে, সত্রাসে যাবে মিশে
যৌন নিপীড়করা হচ্ছে রাস্তার নেড়ি কুকুরের চাইতেও অধম। আপনার নীরবতা এদের প্রধান অস্ত্র।
নীরবতা ভেঙে একটিবার আপনি জেগে উঠুন, দেখবেন কিভাবে এই নর্দমার কীটগুলো আপনার তেজোদীপ্ত ব্যক্তিত্বের সামনে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়!
লেখক: মাশরুফ হোসেন
মন্তব্য চালু নেই