নামে ২০ দল, কাজে কয় দল?
বিএনপি’র নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোট বলা হলেও আন্দোলনের মাঠে নেই অনেকেই। বিএনপি’র নেতা-কর্মীরা মাঠে না থাকলেও বিবৃতির মাধ্যমে কর্মসূচি দেয়। আর শরীকদের দাবী তারা খালেদা জিয়াকে আন্দোলনের কর্মসূচি নির্ধারণের ম্যান্ডেট দিয়েছেন। তিনি যা সিদ্ধান্ত নেন তাই তাদের সিদ্ধান্ত। তাই কোন বৈঠক হয় না। নেই কোন যোগাযোগ। আন্দোলন শুরুর পর এপর্যন্ত ২০ দলের কোন বেঠক হয়নি।
অবরোধ হরতালের ৭০ দিনে দেশে এখন বিবৃতি ছাড়া কার্যকর কিছু দেখা যাচ্ছে না, জনজীবন স্বাভাবিকই বলা যায়। আর এনিয়ে ২০ দলের খুচরা শরীকদের তেমন মাথাব্যথা নেই। ২০ দলের শরীক ইসলামী ঐক্যজোটের প্রধান আব্দুল লতিফ নেজামী বলেন,‘ আমরা আন্দোলন শুরুর আগেই খালেদা জিয়াকে ম্যান্ডেট দিয়েছি। তিনি যেভাবে ভাল মনে করবেন সেভাবেই কর্মসূচি দেবেন।’ একই ধরণের বলেন খেলাফত মজলিসের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মোহাম্মদ শফিক।
বিএনপি ছাড়া ২০ দলের অন্য ১৯ শরীক দল হল: মতিউর রহমান নিজামীর জামায়াতে ইসলামী, আন্দালিব রহমান পার্থ’র বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি(বিজেপি), আব্দুল নতিফ নেজামীর ইসলামী ঐক্যজোট, কাজী জাফরের জাতীয় পার্টি, কর্ণেল অলির বাংলাদেশ লিবারেল পার্টি(এলডিপি), সৈয়দ ইব্রাহীমের কল্যাণ পার্টি, শফিউল আলম প্রধানের জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি(জাগপা), ফরিদুজ্জামানের ন্যাশনাল পিপলস পার্টি(এনপিপি), খন্দকার গোলাম মর্তুজার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি(এনডিপি), মুস্তাফিজুর রহমান ইরান-এর লেবার পার্টি, কামরুজ্জামানের মুসলিম লীগ, আব্দুল মোবিনের ইসলামিক পার্টি, জেবেল রহমানের বাংলাদেশ ন্যাপ,এ্যাডভোকেট গরীব নেওয়াজের পিপলস লীগ, মুফতি ওয়াক্কাসের জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম, সাইফুদ্দিন আহমেদ মুনিরের ডেমোক্রেটিক লীগ(ডিএল), সাইয়েদ আহমেদের সাম্যবাদী দল এবং এ্যাডভোকেট আজহারুল ইসলামের ন্যাপ ভাসানী।
এদের মধ্যে একমাত্র জামায়াতই এতদিন বিএনপিকে মাঠের আন্দোলনে চাঙ্গা রেখছিল। কিন্তু জামায়াত এখন পিছুটান দিয়েছে। জামায়াতের আমীরসহ শীর্ষ নেতারা যুদ্ধাপরাধ মামলায় কারাগারে। আন্দোলনের ভবিষ্যৎ নিয়ে তারা সন্দিহান হয়ে পাড়ায় তারা এখন মাঠে নেমে নতুন কোন ঝুঁকি নিতে চাইছে না। জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মতিউর রহমান আকন্দ সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার জান্য দায়িত্ব প্রাপ্ত। কিন্তু তিনি এখন আর কথা বলছেন না। জানা গেছে জামায়াতের সব কৌশল সরকার ধরে ফেলায় এখন তারা কী করবে ভেবে পাচ্ছে না।
শরীক কয়েকটি দলের নেতারা এতদিন টেভিশন টকশোতে তাদের উপস্থিতি বজায় রেখে জোটের পক্ষে কিছু কথা বললেও এখন তারা আর টকশোতেও যান না। তারা আগে থেকেই মাঠে ছিলেন না। এখন টকশোতেও নেই। এখন কী করছেন জানতে চাইলে ২০ দলীয় জোটের এক নেতা বলেন,‘ টকশোতে গিয়ে গ্রেপ্তার হলে আমাকে কে দেখবে?’ তিনি জানান,‘ বিএনপি থেকে বলা হয়েছে টকশোতে গেলে নিজ দায়িত্বে যেতে হবে। গ্রেপ্তার বা অন্যকোন হয়রানীর শিকার হলে তার দায়দায়িত্ব কেউ নেবে না।
শরীক দলের নেতারা অনেকেই সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কথাও বলতে চান না। তাদের কথা, দেখা যাক কী হয়। আমারা ছোট দলের নেতা, আমরা বড় রিস্ক নিতে পারি না। যা করার ম্যাডাম খালেদা জিয়াই করবেন।
খেলাফত মজলিসের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মোহাম্মদ শফিক সাংবাদিক পরিচয় নিশ্চিত হয়ে তারপর কথা বলেন। তিনি জানান,‘ ম্যাডাম যে কর্মসূচি দেন তাই ২০ দলের কর্মসূচি। আমরা আন্দোলন শুরু আগে তাকে এই ম্যান্ডেট দিয়েছি।’
তিনি জানান,‘ আন্দোলন শুরুর পর থেকে ২০ দলের কোন বৈঠক হয়নি। শুরুর দিকে টেলিফোনে কথা হত। এখন তাও বন্ধ।’ আপনাদের নেতা-কর্মীরা মাঠে নেই কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,‘ যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী আন্দোলনে শরীক হবে। সময় সুযোগ এলে আমরাও সামর্থ্য অনুযায়ী মাঠে থাকব।’
আর আব্দুল লতিফ নেজামী বলেন,‘ অফিসেই বসতে পারি না। নেতা-কর্মীদের নিয়ে মাঠে নামব কীভাবে?’ তাঁর কথা এখন ঢিলেঢালা আন্দোলন হচ্ছে। এটা হল আন্দোলনের স্লো পয়জনিং। যখন এটা একটা পর্যায়ে যাবে তখন নিশ্চয়ই মাঠে দেখা যাবে।
এই দুই শরীক নেতা মনে করেন,‘ আন্দোলনের নতুন কৌশল নির্ধারণ প্রয়োজন। তবে খুব তাড়তাড়ি এনিয়ে ২০ দলীয় জোটের কোন বৈঠকের খবর এখনো তাদের কাছে নেই।’
২০ দলীয় জোটের কয়েকটি দল আছে যাদের নেতাদের কোনভাবেই খুঁজে পাওয়া যায় না। কয়েকজনের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।
এনিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আহমেদ আযম খান বলেন,‘ এটা সত্য যে ২০ দলের অধিকাংশের জেলা বা উপজেলা পর্যায়ে কোন কমিটি বা কাজ নেই। তারা ঢাকায়ই আছেন। আর বিএনপিই যেখানে পুলিশের গুলির ভয়ে মাঠে নামতে পারে না। সেখানে তারা কিভাবে মাঠে থাকবেন?’
তিনি স্বীকার করেন, ‘আন্দোলন শুরুর পর ২০ দলের কোন বৈঠক হয়নি।’তবে তাঁর দাবী,‘ কোন না কোন ভাবে যোগাযোগ হয়। আর তারাতো খালেদা জিয়াকে আন্দোলন পরিচালনার সব ধরণের ম্যান্ডেট দিয়ে রেখেছেন।’ প্রিয়.কম
মন্তব্য চালু নেই