মঙ্গলবার হরতাল

রাজশাহী, নাটোর ও চাঁপাইয়ে বিএনপির ৪কর্মী নিহত

৫জানুয়ারী বিএনপির গণতন্ত্র হত্যা দিবসের কালো পতাকা মিছিল ও সমাবেশের কর্মসূচিতে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে রাজশাহী, নাটোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৪জন বিএনপি কর্মী নিহত হয়েছে।

পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংঘর্ষে নাটোরে ছাত্রদলের দুই কর্মী, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিএনপির দুই কর্মী নিহত হয়েছে। ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার তিন জেলায় সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে জেলা বিএনপি।

সোমবার সকালে নাটোর জেলা শহরের তেবাড়িয়া মোড়ে আওয়ামী লীগ-বিএনপির সংঘর্ষে রায়হান রানা ও রাকিব নামে দুই ছাত্রদলকর্মী নিহত হয়েছে।

দুপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জে শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাটের গোপালনগর মোড়ে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে জামায়াত ও বিএনপি নেতাকর্মীরা মিছিল বের করলে পুলিশ বাধা দেয়। এসময় বিএনপি কর্মী জমসেদ নিহত হয়।

এদিকে বিকেলে রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বরে বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে নিহত হয়েছে বিএনপিকর্মী মজির উদ্দিন।

চাঁপাইয়ে বিএনপিকর্মী নিহত, মঙ্গলবার হরতাল

BNP চাঁপাইয়ে বিএনপিকর্মী নিহত, মঙ্গলবার হরতালচাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাটে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল করার সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে বিএনপিকর্মী নিহত হয়েছে।

সোমবার দুপুরে কানসাটর গোপালনগর মোড়ের কাছে এ ঘটনা ঘটে।

নিহতের নাম জমসেদ আলী (৩৫)। তিনি কানসাটের শিবনারায়ণপুর গ্রামের মন্তাজ আলীর ছেলে। তিনি বিএনপি কর্মী বলে দাবি করা হয়েছে দল থেকে।

ঘটনার প্রতিবাদে আগামীকাল মঙ্গলবার চাঁপাইনবাবগঞ্জে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দিয়েছে বিএনপি।

বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক এমপি হারুনর রশীদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

নাটোরে বিএনপির মিছিলে গুলি, নিহত২

নাটোরের তেবাড়িয়ায় আওয়ামী লীগ-বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে রায়হান ও রাকিব নামে  দুই যুবক নিহত হয়েছেন। এসময় আহত হয়েছেন ১৫ জন।

সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে জেলা শহরের তেবাড়িয়া মোড়ের কাছে এ ঘটনা ঘটেছে।

স্থানীয়রা জানান, সকালে বিএনপির কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী নেতাকর্মীরা সকালে তেবাড়িয়া মোড়ে জড়ো হয়। এসময়  মোটরসাইকেল যোগে কয়েকজন  এসে গুলি করে চলে যায়।

নাটোর জেলা পুলিশ সুপার বাসুদেব বণিক জানান, সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শহরের তেবাড়িয়া মোড়ে দুই যুবক গুলিবিদ্ধ হন।
গুলিবিদ্ধ দুই জনকে নাটোর সদর হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসক আবুল কালাম আজাদ তাদের মৃত ঘোষণা করেন।

এদিকে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল হক নিহত দুজনকে নিজেদের কর্মী দাবি করেছেন।

এর আগে রোববার বিকেল ৫টার দিকে নাটোর বনপাড়া ডিগ্রি কলেজ মাঠ থেকে বড়াইগ্রাম উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যক্ষ একরামুল আলমের নেতৃত্বে বিএনপি মিছিল বের করে। পৌর এলাকার গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা প্রদক্ষিণ শেষে বনপাড়া পৌর গেট এলাকায় পৌঁছলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

পুলিশের লাঠিচার্জে বড়াইগ্রাম উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যক্ষ একরামুল আলম, পৌর সভাপতি লুৎফর রহমান, বিএনপি নেতা হোসেন আলী, ছাত্রদল নেতা কোরবান আলী, স্বপন ও সোহেল আহত হয়েছেন বলে জানা যায়।

পরে মিছিল থেকে মাঝগাঁও ইউনিয়ন যুবদল সভাপতি ও লাথুরিয়া গ্রামের আব্দুল হালিমের ছেলে আবুল কালাম আজাদকে পুলিশ আটক করে।

রাজশাহীতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে বিএনপিকর্মী নিহত
সংঘর্ষরাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বরে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ চলাকালে বিএনপিকর্মী নিহত হয়েছে। এসময় অন্তত ১০ জন গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছে কমপক্ষে ৫০ জন।

সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত বানেশ্বর ট্রাফিক মোড়ে থেমে থেমে চলা সংঘর্ষে নিহতের এ ঘটনা ঘটে।

নিহতের নাম মজির উদ্দিন (৪৫)। তিনি চারঘাট উপজেলার মাড়িয়া গ্রামের স্কুলপাড়া খয়মুদ্দিনের ছেলে। জেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক গোলাম মোস্তফা মামুন দাবি করেছেন, মজিদ চারঘাটের সলুয়া ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য।

মোস্তফা মামুন আরো জানান, দলীয় কর্মী নিহতের ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত হরতালের ডাক দেয়া হয়েছে।

পুঠিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হাফিজুর রহমান হাফিজ জানান, বিকেলে বানেশ্বর ট্রাফিক মোড়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সমাবেশ করছিল। এসময় বিএনপি নেতাকর্মীরা বানেশ্বর বাজার থেকে কালো পতাকা মিছিল বের করে ট্রাফিক মোড়ের দিকে যাওয়ার সময় পুলিশ বাধা দেয়। এসময় তারা পুলিশের উপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ রাবার বুলেট, টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে।

হাফিজ আরো বলেন, গুলিতে নিহত মজির উদ্দিন ওরফে মজেল একজন ব্যবসায়ী। তার বানেশ্বর বাজারে দোকান রয়েছে। সংঘর্ষের সময় দোকান বন্ধ করে দ্রুত পালানোর সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থালেই মারা যান তিনি। তবে কাদের গুলিতে নিহত হয়েছে তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সংঘর্ষ চলাকালে ইটের আঘাতে ৫ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে। তাদের স্থানীয়ভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে বলে জানান হাফিজ।

আহতদের মধ্যে পুঠিয়ার বানেশ্বর এলাকার বালিঘাটা এলাকার আকরব আলীর ছেলে তুহিন (২২) ও চারঘাটের বামনদীঘি গ্রামের আজাদ আলীর ছেলে মোমিনকে (২৫) আশঙ্কাজনক অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের দুই জনেরই পেটে গুলি লেগেছে বলে জানা গেছে। বর্তমান তাদের দুই জনকে হাসপাতালের ৬ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে। নিহত মজির উদ্দিনের লাশ রামেক হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

মঙ্গলবার সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে রাজশাহী জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট নাদিম মোস্তাফা জানান, সোমবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে পুঠিয়ার বানেশ্বর বাজারে পুলিশের গুলিতে বিএনপির কর্মী মজির উদ্দিন নিহত হয়। এরই প্রতিবাদে এ হরতালের আহ্বান করা হয়েছে।

পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে বিএনপিকর্মী নিহত, মঙ্গলবার হরতাল



মন্তব্য চালু নেই