না’গঞ্জ সয়লাব পোস্টারে, এখনও ঝড় ওঠেনি চায়ের কাপে

দেশে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে নারায়ণগঞ্জে হচ্ছে স্থানীয় সরকারের সিটি করপোরেশন নির্বাচন। এ নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ সাতটি রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নির্বাচনী প্রচারণায় পিছিয়ে নেই সাধারণ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলররাও। বিভিন্ন প্রার্থীর নির্বাচনী পোস্টারে সয়লাব হয়েছে পুরো নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক)। প্রচারণায় ব্যস্ত সকল প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা। সে তুলনায় এই সিটিতে চায়ের কাপে এখনও ঝড়ের কোনো আভাস নেই বললেই চলে।

এই সিটিতে ৩৭ পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১৯৫ জন প্রার্থী। মেয়র পদে ৭ জন, ২৭টি ওয়ার্ডে ১৫৬ জন সাধারণ কাউন্সিলর এবং ৯টি সংরক্ষিত নারী আসনে ৩৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এসব প্রার্থীদের নির্বাচনী পোস্টারে কানায় কানায় পরিপূর্ণ নাসিক। নাসিকের যেদিকে চোখ চায় সেদিকেই কেবল পোস্টার আর পোস্টার। দূর থেকে দেখলে মনে হবে একসঙ্গে সারি বেধে হাজার হাজার ঘুড়ি উড়ছে আকাশে। রাস্তার মোড়ে মোড়ে, দোকানের সামনে, মাঠ বা খোলা জায়গা কোথাও ফাঁকা নেই। সব জায়গা দখল করে রেখেছে বিভিন্ন প্রার্থীর পোস্টার। এ যেন পোস্টারের শহরে পরিণত হয়েছে নাসিক।

এই সিটিতে ভোটের আর মাত্র ৯দিন বাকি। নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত তারা ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে ধরণা দিচ্ছেন ভোটের জন্য।

যেহেতু এটি দলীয় প্রতীকে প্রথম সিটি করপোরেশন নির্বাচন, তাই এতে নতুন মাত্রাও যোগ হয়েছে। প্রত্যেক দলের প্রার্থীকে জয়ী করতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে নির্বাচনে অংশ নেওয়া দলগুলো।

কেন্দ্রীয় প্রচারণায় সব থেকে পিছিয়ে আছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রার্থী। আচরণবিধির বাধ্যবাধকতার কারণে দলীয় প্রধানসহ বেশিরভাগ নেতারা এ নির্বাচনের প্রচারণায় অংশ নিতে পারছেন না।

নাসিক ঘুরে দেখা যায়, মেয়র, সাধারণ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডে কাউন্সিলর ও তাদের সমর্থকদের প্রচারণার কোনো কমতি নেই পুরো সিটিজুড়ে। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ এর মতে, নাসিকে ভোটাররা উৎসবমুখর রয়েছে। বিএনপি প্রার্থী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন ভোটারদের মধ্যে গণজোয়ার দেখছেন।

তবে নাসিক ঘুরে ভোটারদের মধ্যে এখনও তেমন কোনো উৎসবমুখর পরিবেশ চোখে পড়ার মতো নয়। উৎসব এখনও প্রার্থী এবং তাদের সমর্থকদের মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে বেশি। নির্বাচনী প্রভাব এখনও চায়ের কাপে ঝড় তুলতে পারেনি। স্থানীয় বা জাতীয় নির্বাচনের আগে বিভিন্ন চায়ের দোকানে নির্বাচনী আলাপের যে বাক-বিতণ্ডা দেখা যায় নাসিকে তা এখনও অনুপস্থিত। এই সিটির ভোটারদের সরব উপস্থিতিতে এখনও চায়ের কাপে ঝড় উঠেনি।

এ বিষয়ে কথা হয় নাসিক এলাকার চা দোকানদার লিটনের সঙ্গে। তিনি নাসিকের একজন ভোটারও। যিনি চার বছর যাবৎ চায়ের দোকান চালাচ্ছেন। তার দোকানে তেতুল, মাল্টা, কাঁচা মরিচ, পুদিনা পাতাসহ দশ ধরণের চা বিক্রি হয়। তিনি জানান, নির্বাচন উপলক্ষে তার বিক্রিতে কোনো পরিবর্তন আসেনি। আগের মতোই তার চা বিক্রি হচ্ছে।

লিটন বলেন, তার দোকানের সামনে নির্বাচনী বিষয় নিয়ে কেউ এখন পর্যন্ত কোনো আলোচনাও করেন না। তার আশা ছিল নির্বাচন উপলক্ষে তার বিক্রির পরিমাণ বাড়বে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সে লক্ষণ দেখছেন না নাসিকের এ ভোটার।

তিনি আরো বলেন, উৎসব না থাকলেও ভোটাররা ভোট দিতে ঠিকই যাবেন। আমিতো যাবো ভোট দিতে। এটা আমার নাগরিক অধিকার। আমার একটা দায়িত্ব আছে না— যোগ করেন লিটন।

স্থানীয় বাসিন্দা আবদুস সালাম বলেন, বিভিন্ন প্রার্থী ও সমর্থকদের মধ্যে যে ধরণের উৎসবের আমেজ রয়েছে ভোটারদের মাঝে তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। প্রত্যেক নির্বাচনে চায়ের দোকানে বা পাড়া মহল্লায় যে ধরণের নির্বাচন, বিভিন্ন প্রার্থী নিয়ে আলোচনা হয় নারায়ণগঞ্জে সে ভাবটি এখনও চোখে পড়ছে না।

তবে আশার কথা এই সিটির ২৭টি ওয়ার্ডে বিভিন্ন পদে ভোট হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। সবাই শান্তিপ্রিয়ভাবে যার যার নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন— যোগ করেন আবদুস সালাম।

নাসিকের সার্বিক পরিস্থিতি বিষয়ে ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার হেলালুদ্দিন আহমদ জানান, এখন পর্যন্ত বড় ধরণের আচরণবিধি ভঙ্গের কোনো ঘটনা ঘটেনি। এ নির্বাচনে আচরণবিধি প্রতিপালিত হচ্ছে কিনা তা তদারকির জন্য ২৭টি ওয়ার্ডে ২৭ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রয়েছে।

কারো কোনো অভিযোগ থাকলে বা কেউ আচরণবিধি ভঙ্গ করলে রিটার্নিং কর্মকর্তার পাশাপাশি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ, র‌্যাবের কাছেও জানানোর আহ্বান জানান তিনি।

১০ ডিসেম্বর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বৈঠক শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ জানান, নারায়ণগঞ্জের পরিবেশ স্বাভাবিক সময়ের চাইতেও ভালো রয়েছে।

এ সময় ভোটাররা যাতে তাদের পছন্দের প্রার্থীদের ভোট দিয়ে নিরাপদে বাড়িতে ফিরতে পারেন সেই ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেন কাজী রকিব।

নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ২২ ডিসেম্বর এই সিটিতে ভোট হবে।



মন্তব্য চালু নেই