নাওনেহাল সিং হাভেলি
নাতি নাওনেহাল সিংয়ের স্মৃতির উদ্দেশ্যে মহারাজা রঞ্জিত সিং তৈরি করেছিলেন হাভেলি নাওনেহাল সিং। নাতি নাওনেহাল সিংয়ের যখন মাত্র ১৯ বছর বয়স তখন তার বাবা মহারাজা খারক সিংকে বিষ প্রয়োগে হত্যা করা হয়। বাবার অন্তেষ্ট্রিক্রিয়া অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে ফেরার সময় গাড়ি দুর্ঘটনার মারাত্মক আহত হন নাওনেহাল সিং এবং পরবর্তীতে তিনি মারা যান। আজ পর্যন্ত তার মৃত্যু নিয়ে রহস্য রয়ে গেছে যে তিনি কি সত্যিই দুর্ঘটনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন নাকি তাকে হত্যা করা হয়েছিল।
বলা হয়, মৃত্যুর আগে একদিনের জন্যও তারজন্য নির্মিত হাভেলিতে বসবাস করতে পারেননি নাওনেহাল সিং। পরবর্তী সময়ে ইংরেজি শাসনামলে এই হাভেলিকে রানী ভিক্টোরিয়ার কাছে হস্তান্তরিত করা হয়। বর্তমানে সেই নাওনেহাল হাভেলির নামকরণ করা হয়েছে ভিক্টোরিয়া বালিকা বিদ্যালয়। ভারতের মহারাষ্ট্রের লোহারি এবং ভাটি গেটের মধ্যেবর্তী ওয়ালেদ শহরের বুকেই অবস্থিত এই হাভেলি। পুরো হাভেলিটিই হরেক রংয়ের দালানে সজ্জিত।
হাভেলির ঠিক সামনেই আছে এক বিশাল খোলা ময়দান। স্থানীয়রা এই ময়দানটির নাম দিয়েছে ‘পাইয়ান ওয়ালা ময়দান’, বাংলায় যাকে বলা হয় ‘দুই ভাইয়ের ভূমি’। বলা হয়, এটা আগে ছিল মূলত একটি বাগান এবং এই বাগানের চর্তুপাশে যে বাড়িগুলো আছে সেগুলোর মালিক ছিল ওই বাগানের মালিকেরা। নাওনেহাল হাভেলি মূলত চর্তুভূজাকৃতির এবং মূল দালানটি দুই অংশে বিভক্ত। শিখ স্থাপত্যকর্মের ইতিহাসে এই হাভেলিটিকে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপত্যকর্ম হিসেবে দাবি করা হয়। দালানগুলোর বিভিন্ন প্রান্তে নিখুত নকশায় আঁকা আছে তৎকালীন সময়ের অনেক কারুকাজ।
হালেলিতে ঢোকার দালানটি আসলে চারতলা বিশিষ্ট। মূল দরজাটি মজবুত কাঠ আর বিভিন্ন রংয়ের নকশায় ভরপুর। আর এর যে জানলাগুলো আছে সেগুলো ভারতবর্ষের বহু প্রাচীন ‘ঝারোকা’ নকশা অনুযায়ী তৈরি করা হয়েছি। মাছ, পরী এবং টিয়া পাখির বিভিন্ন দৃশ্য ওই জানলাগুলোর পাল্লাতে নকশা হিসেবে আছে। পাশাপাশি হাভেলির ছাদে যে কারুকাজ করা আছে সেগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বিভিন্ন সময়ের চিত্রকলার ছাপ স্পষ্ট রয়েছে। মোঘল নকশা থেকে শুরু করে রাজস্থানের পটিয়ারি নকশা পর্যন্ত আঁকা হয়েছিল এখানে।
তবে হাভেলির পেছনের অংশটি সামনের অংশের মতো অতটা জমকালো নয়। পোড়া ইট ও ভারি কাঠ দিয়ে সজ্জিত করা হয়েছে পেছনের অংশ। ধারণা করা হয়, হাভেলির পেছনের এই অংশে মূলত নিরাপত্তারক্ষী ও হাভেলির রক্ষণাবেক্ষনে যারা নিযোজিত ছিলেন তাদের বাসস্থান ছিল এটা। পেছনের অংশের দারেচা নকশা দেখে অনুমান করা হয়, শিখ সাম্রাজ্যে তৎকালীন আদিবাসী গোষ্ঠিগুলোর প্রভাব কম ছিল না।
মন্তব্য চালু নেই