নাইক্ষ্যংছড়িতে সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন : দেশ ছাড়তে বিজিবি’র বাঁধা
কক্সবাজারের উখিয়ার সংলগ্ন পার্বত্য নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুমে অর্ধশতাধিক সংখ্যালঘু বড়ুয়া পরিবারের নারী ও শিশু সহ আড়াই শতাধিক লোক সর্বস্ব হারিয়ে উদ্বাস্তু হয়ে পড়েছে। শনিবার পার্বত্য বান্দরবানে নাইক্ষ্যংছড়ি ২৬৭ নং ঘুমধুম মৌজার সরকারী প্রতিত জমি থেকে উচ্ছেদকৃত ৫২ পরিবারের প্রায় আড়াই শতাধিক লোক উপায়ান্তর না দেখে দেশ ছাড়ার উদ্যোগ নিয়েছে। ওই সব পরিবারেরা দলাবদ্ধ ভাবে গতকাল রোববার সকালে ছেলে মেয়েদের নিয়ে সীমান্তের বেতবনিয়া এলাকা দিয়ে মিয়ানমারে আশ্রয়ের জন্য পালিয়ে যাওয়ার সময় ঘুমধুম বিজিবি’র সদস্যরা তাদের আটকিয়ে রাখে। ওই সব উদ্বাস্তু পরিবারেরা ওখানে অনাহারে অনশন করছে তাদের বসত ভিটা ফিরিয়ে পাওয়ার জন্য। উদ্বাস্তু হওয়া কচুবনিয়া গ্রামের নির্মল বড়ুয়া (৭০), লিটন বড়ুয়া (৪৫), সুধাংশু বড়ুয়া (৭২), রুনু বড়ুয়া (৪৫), রনু বড়ুয়া (৩৫), রুপপতি বড়ুয়া(৫০), বিনা বড়ুয়া (৪৮) জানান, তাদের ছেলে মেয়েদের কুলে নিয়ে তারা মিয়ানমারে পালিয়ে যেতে চাইলে তাদের বিজিবি বাঁধা প্রদান করে। যার ফলে উপায়ান্তর না দেখে অনাহারা ছেলে মেয়েদের নিয়ে বেতবনিয়া বাজার এলাকায় অনশন করছে। তাদের দাবী স্থানীয় ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য সুবত বড়ুয়া ও নিপু বড়ুয়া ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী নিয়ে শত বছরের দখলে থাকা বসত ভিড়া থেকে খালি হাতে চলে যেতে হয়েছে। ওই সময় লাঠিয়াল বাহিনীরা মাথায় লাল কাপড় বেঁেধ আমাদের বাড়ি ঘরে লুটপাট করে সম্পুর্ণ মালামাল নিয়ে যায়।
কনকনে এ শীতের দিনে এত গুলো পরিবারকে বিনা নোটিশে উচ্ছেদ করার স্থানীয় বড়–য়া সম্প্রদায়ের মাঝে সরকারের প্রতি ক্ষোভ জানাতে দেখা গেছে। শনিবার উচ্ছেদকৃত পরিবারের বসত ঘর ও সহায় সম্পদ স্থানীয় প্রভাবশালী ইউপি সদস্যের ভাড়াটিয়া সশস্ত্র লোকজন বোল্ড ড্রোজার চালিয়ে গুড়িয়ে দিয়ে রাতের মধ্যে লোকজনদের সরিয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ অবস্থায় কনকনে প্রচন্ড শীতের দিনে শনিবার রাত থেকে অভুক্ত থেকে নারী-শিশুরা চরম অসহায় ভোগছে। এদিকে এত গুলো লোকের উদ্বাস্তু হয়ে দেশ ত্যাগের কাফেলাকে ঘিরে এদের স্বজনদের বিলাপ কান্নায় আকাশ ভারী হয়ে উঠেছে। এসব ভুমিহীন লোকদের পুনঃবাসন না করে অমানবিক উচ্ছেদ ও মিয়ানমার গমনের উদ্যোগকে কেন্দ্র করে স্থানীয় সচেতন লোকজনের মতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যকার সম্পর্ক ও রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিতাড়ন এবং নির্যাতনের মাত্রা বাড়তে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করেন। তারা কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, বসত ভিটা ফিরিয়ে না পেলে এবং অন্য দেশেও চলে যেতে না পারলে আত্মহুতি দেওয়ার কথা বলেন।
স্থানীয় ঘুমধুম ইউপি সদস্য উক্ত জমি ক্রেতা সুবত বড়ুয়া বলেন, ২০১০ সালে আদালত থেকে উক্ত জবর দখলকৃত জমি সহ ২৫ একর জমি দীর্ঘ মেয়াদী নিলাম খরিদ করি। কিন্তু জমিতে দখলে যেতে না পারায় আদালতে উচ্ছেদ মামলা করি। এ মামলার প্রেক্ষিতে বান্দরবান জেলা ও দায়রা জজ আদালতের নির্দেশে এ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে নেতৃত্বদানকারী নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আবু সাফায়াত মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম গতকাল রোববার বলেন, উচ্ছেদকৃত শতাধিক বড়ুয়া সম্প্রদায়ের লোক মিয়ামারে চলে যাওয়ার চেষ্টা করেছে বলে খবর পেয়েছি। বিষয়টি বান্দরবান জেলা প্রশাসককে জানানো হয়েছে এবং বিজিবিকে এব্যাপারে কড়া সর্তক অবস্থা বজায় রাখার জন্য বলা হয়েছে। ঘুমধুম বিজিবি বিওপি কমান্ডার সুবেদার মোজাম্মেল হোসেন গতকাল দুপুরে সীমান্তের বেতবনিয়া এলাকায় বলেন, কোন ভাবেই এসব লোকজনদের মিয়ানমার পাড়ি দিতে দেওয়া হবে না। বান্দরবান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুল হক চৌধুরী বলেন, এ বিষয়টি আমার চাইতে ইউএনও বেশি জানবেন। নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক তসলিম ইকবাল চৌধুরী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার লক্ষে সংখ্যালঘুদের নিয়ে একটি বিশেষ মহল ফায়দা লুটাতে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ২৬৭ নং মৌজার ঘুমধুম পাহাড়ী এলাকায় যুগ যুগ ধরে বসতী করে আসা শনিবার উচ্ছেদকৃত স্থানীয় সংখ্যালঘু বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকজন ক্ষোভ ও বিলাপ করে গতকাল বলেন, অন্তত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তার ছাঁয়াদানকারী বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে প্রচন্ড শীতের তীব্র যন্ত্রণায় ছোট ছোট শিশুদের নিয়ে মানবেতর ভাবে নিজ দেশে ঠাঁই হচ্ছে না। উক্ত পাহাড়ী খাস জমিতে বসবাসকারী বিধবা কুসুম বড়ুয়া , রুমা বড়ুয়া, সুখী বড়ুয়া, শেফালী বড়ুয়া, স্বর্ণালী বড়ুয়া, সন্ধ্যা বড়ুয়া, রতন বড়ুয়া, স্বপন বড়ুয়া, আলী মিয়া, কালু বৈদ্য, আনন্দ বড়ুয়াসহ অর্ধশতাধিক উচ্ছেদকৃত পরিবারের ভূমিহীন নিরীহ লোকজনের মিয়ানমার পাড়ি দেওয়াকে কেন্দ্র করে স্বজনদের মাঝে কান্নার রোল পড়ে যায়। নারী শিশুদের বিলাপ ও আর্তচিৎকারে এলাকার বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। ঘুমধুম ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, স্থানীয় সুবত মেম্বার জনপ্রতিনিধি হয়েও নিরীহ লোকজনদের বিকল্প পুর্নবাসনের ব্যবস্থা না করে নিজের স্বার্থকে প্রাধন্য দেওয়ায় দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হতে চলেছে। আমরা বাস্তহারা এসব গৃহহীন লোকদের দ্রুত পুর্নবাসনের জন্য উচ্চ পর্যায়ে যোগযোগ করা হচ্ছে।
মন্তব্য চালু নেই