নরসিংদীর পৌর মেয়র লোকমান হোসেন হত্যার বিচার আদৌ কি হবে?
নরসিংদীর পৌর মেয়র লোকমান হোসেন হত্যার বিচার আদৌ কি হবে? নরসিংদীর জনপ্রিয় পৌর মেয়র লোকমান হোসেন হত্যার ৫ বছর পার হচ্ছে। ২০১১ সালের ১ নভেম্বর সন্ত্রাসীরা শহরের জেলা আওয়ামী লীগের অস্থায়ী কার্যালয়ে প্রবেশ করে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করে মেয়র লোকমান হোসেনকে। ব্যাপক জনপ্রিয়তার কারণে দ্বিতীয়বারের মতো পৌর মেয়র নির্বাচিত হওয়ার মাত্র ৮ মাসের মাথায় লোকমান হোসেনকে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনা শোনলে আজও শিউরে উঠে নরসিংদীবাসী।এদিকে নিহত লোকমান হোসেনের ছোট দুই শিশুসন্তান সালফি ও নাজার এখন সময় কাটে তাদের বাবার ছবি দেখে। এখনো অপেক্ষায় থাকে তাদের বাবা ফিরে আসবে। কিন্তু অপেক্ষার ৫ বছর কেটে গেছে তাদের বাবা ফিরে আসে না। অপ্রিয় সত্য, তাদের বাবা লোকমান আর কখনো ফিরেও আসবেনা। লোকমানের স্ত্রী তামান্না নুসরাত বুবলীর চোখের পানিও এখন শুকিয়ে গেছে। স্বামীর চলে যাওয়া স্মৃতি নিয়ে হত্যার বিচারের আশায় আছেন। কোনো সান্তনার বাণী নয়, দোষীদের উপযুক্ত শাস্তিই তামান্নার একমাত্র চাওয়া।
উল্লেখ্য, নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার পলাশতলী ইউনিয়নের মেঝেরকান্দি গ্রামের শাহ্ নেওয়াজ ভূঁইয়ার ছেলে মেয়র লোকমান হোসেন কলেজ জীবন থেকেই জড়িয়ে পড়েন ছাত্র রাজনীতিতে। ২০০৪ সালে নরসিংদী জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক থাকাকালীন প্রথম পৌর নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে পৌর চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন লোকমান হোসেন। চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর দীর্ঘদিনের অবহেলিত নরসিংদী পৌর এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকান্ডে মাধ্যমে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখার জন্য ২০১১ সালের ১৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে দ্বিতীয়বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হন লোকমান হোসেন। হত্যাকাণ্ডের পাঁচ বছর পর এই একটি প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। যত দিন যাচ্ছে, তত হতাশ হয়ে পড়ছে। ইতিমধ্যে পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্রে এজাহারভুক্ত ১১ আসামি বাদ পড়েছে। তাই মামলার বাদী পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) মাধ্যমে যথাযথ তদন্ত চান। এ জন্য তিনি পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিট করেছেন। এরপর ঝুলে গেছে মামলার বিচারকাজ।
২০১১ সালের ১ নভেম্বর নরসিংদী শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মেয়র লোকমান হোসেনকে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় তাঁর ভাই বর্তমান নরসিংদী পৌর মেয়র কামরুজ্জামান কামরুল তৎকালীন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজুর ছোট ভাই সালাহউদ্দিন আহমেদ বাচ্চুকে প্রধান আসামি করে ১৪ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। এর মধ্যে এক আসামি মোবারক হোসেন মোবা বিদেশে পলাতক। বাকি ১৩ জনের সবাই গ্রেপ্তার হলেও পরে জামিনে বেরিয়ে আসেন। পুলিশ প্রায় আট মাস তদন্ত করে ২০১২ সালের ২৪ জুন সালাহউদ্দিনসহ এজাহারভুক্ত ১১ আসামিকে বাদ দিয়ে অভিযোগপত্র দেয়। এতে মামলার এজাহারভুক্ত তিন নম্বর আসামি শহর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ মোবারক হোসেন মোবা, এজাহারভুক্ত দুই নম্বর আসামি নরসিংদী পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি আবদুল মতিন সরকার, তাঁর ছোট ভাই শহর যুবলীগের সভাপতি আশরাফুল ইসলাম সরকার সহ ১২ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। অভিযোগপত্রে আশরাফুলকে হত্যার পরিকল্পনাকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
এই অভিযোগপত্রের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে ২০১২ সালের ২৪ জুলাই নরসিংদীর মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে নারাজি আবেদন করেন বর্তমান নরসিংদী পৌর মেয়র কামরুজ্জামান কামরুল। আদালত পরদিন নারাজি আবেদন খারিজ করেন। পরে ২৮ আগস্ট জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আপিল করেন বর্তমান নরসিংদী পৌর মেয়র কামরুজ্জামান কামরুল কামরুল। আদালত ৪ নভেম্বর আপিল আবেদন খারিজ করেন। এরপর তিনি হাইকোর্টে ওই অভিযোগপত্র বাতিল করে সিআইডির মাধ্যমে তদন্তের আবেদন জানান। হাইকোর্ট পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিম্ন আদালতে এ মামলার বিচারকাজ স্থগিত করেন।
এটা অত্যন্ত হতাশার বিষয়। যখন সব কিছু প্রতিকূলে ছিল তখন আন্দোলন সংগ্রাম হয়েছে। যার কারণে অনেক হত্যাকারী ধরা পড়েছে। এখন সব অনুকূলে থাকার পরও দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। মেয়র লোকমানের মতো একজন মানুষের হত্যা মামলা এতটা স্তিমিতভাবে এগোবে তা ভাবতে পারি না। প্রত্যেক মানুষের মধ্যে প্রশ্ন, আদৌ কি লোকমানের বিচার হবে?
আমিতো কবি নয় তারপরও প্রবাস থেকে কবিতার লিখতে হয়-
নরসিংদী তোমাকে ভুলবেনা দিয়ে গেছো যে স্মৃতি,
তোমাকে হাড়িয়ে শহরবাসীর হয়েছে অনেক ক্ষতি।
স্মৃতি গুলো আজও আছে নেই শুধু তুমি,
তুমিহীনা নরসিংদী হয়েছে কান্নার মরুভূমি।
ফুটাতে চেয়েছ তুমি শহরের মুখে হাসি,
তোমাকে যারা হত্যা করেছে তাদের চাই ফাঁসি।
আগামী ১ নভেম্বর বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ গোল্ড মেডেলিস্ট প্রাপ্ত মেয়র,শহীদ জনবন্ধু লোকমান হোসেনের ৫মমৃত্যু বার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।
জনবন্ধু লোকমান হোসেন স্মৃতিস্তম্ভের ভাস্করে আমি যা দেখতে পাই- ‘স্মৃতিস্তম্ভে লোকমান হোসেনের প্রতিকৃতি ব্যবহার করা হয়েছে। প্রতিকৃতির পেছনের অংশের টেরাকোটায় নদী, মেঘলা আকাশ, মাছ, পাখি, নৌকা ও প্রকৃতির দৃশ্য ফুটে উঠেছে। এখানে মেঘলা আকাশ শোকের প্রতীক। স্মৃতিস্তম্ভে কালো গ্রানাইটে ৩ স্তরবিশিষ্ট বেদি রয়েছে। স্তরগুলোকে জনপ্রিয়তার প্রতীক হিসেবে বোঝানো হয়েছে।’
লেখকঃ রাশিদুল ইসলাম জুয়েল
সিঙ্গাপুর প্রবাসী লেখক ও সাংবাদিক
মন্তব্য চালু নেই