নবি দুলালী হজরত ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু আনহা
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুয়ত লাভের ৫ বছর পূর্বে মক্কা নগরীতে হজরত ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু আনহা জন্ম গ্রহণ করেন। বিশ্বনবী রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং উম্মুল মুনিনি হজরত খাদিজা বিনতে খুয়াইলিদ রাদিয়াল্লাহু আনহার কনিষ্ঠ মেয়ে। অতি আদরের ছিল বিধায় ধাত্রী রাখা সত্ত্বেও মা খাদিজা রাদিয়াল্লাহু আনহা তাঁকে ধাত্রীর হাতে ছেড়ে দেননি।
ইসলাম গ্রহণ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর ওহি নাজিলের পর সর্বপ্রথম হজরত খাদিজা রাদিয়াল্লাহু আনহা ইসলাম গ্রহণ করেন। হজরত আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহার সূত্রে ইবনে ইসহাক বর্ণনা করেন, নবুয়তের প্রথম দিকে তাঁর মা এবং বোনেরা ইসলাম গ্রহণ করেন।
পিতার সহযোগিতা
মক্কার কুরাইশরা যখন ইসলাম গ্রহণকারীদের উপর অত্যাচারের মাত্রা বাড়িয়ে দিলেন। তখন তিনি পিতার পাশে পাশে থাকার চেষ্টা করতেন। একবার বিশ্বনবী কাবা চত্তরে নামাজ পড়াকালীন সময়ে পাপিষ্ট উকবা ইবনে আবি মুতঈম উটের পঁচা নাড়ি-ভূড়ি তাঁর ঘাড়ের উপর চাপিয়ে দেয়। যা হজরত ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু আনহা এসে সরিয়ে দেন এবং পানি দিয়ে পরিষ্কার করে দেন।
শিবু আবি তালেব
কুরাইশরা নবি পরিবারকে তিন বছর অবরুদ্ধ করে রেখেছিলেন। সে সময় হজরত ফাতিমার স্বাস্থ্যের উপর বিরাট প্রভাব ফেলে। সে সময়ের কষ্ট তাঁকে আমরণ বহন করতে হয়েছে।
উম্মু আবিহা
হজরত খাদিজার মৃত্যুর পর বিশ্বনবীর দেখাশুনার দায়িত্ব পালন করে হজরত ফাতিমা। হিজরতের পূর্ব পর্যন্ত তিনি এ দায়িত্ব পালন করেন। যার কারণে তাঁকে উম্মু আবিহা (তাঁর পিতার মা) বলে ডাকা হয়।
হিজরত ও ফাতিমা
বিশ্বনবী তাঁকে এবং তাঁর বোন উম্মে কুলসুম মক্কায় রেখে হিজরত করলেন। এ ভয়ংকর পরিস্থিতিতে তাঁরা ধৈর্যের সহিত মক্কায় অবস্থান করেন। বিশ্বনবী মদিনায় একটু স্থির হওয়ার পর নবুয়তের ১৩তম বছরে একজন সাহাবির মাধ্যমে তাদের মদিনায় নেয়ার ব্যবস্থা করেন।
বিয়ে
দ্বিতয়ি হিজরি সনে বদর যুদ্ধের পর হজরত আলীর সাথে তাঁর বিয়ে হয়। কেউ কেউ বলেন, উহুদ যুদ্ধের পর তাঁদের বিয়ে হয়। এ কথাও বর্ণিত আছে যে, হজরত আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে ঘরে উঠিয়ে নেয়ার চার মাস পর তাঁদের বিয়ে হয়।
সংসার জীবন
আর দ্বিতীয় হিজরি সনে বদর যুদ্ধের পর হজরত আলী একটি ঘর ঠিক করে স্ত্রী ফাতিমাকে উঠিয়ে নেন। তাঁর ঘরে কোনো আসবাবপত্র ছিল না। শুধুমাত্র একটি ভেড়ার চামড়া ছিল। যা দিয়ে রাতের বেলা বিছানা কাজ হতো। আর দিনের বেলায় মশকের কাজে ব্যবহার হতো। কোনো চাকর-বাকর ছিল না।
হাসান-হোসাইনের জন্ম
তৃতীয় হিজরিতে তাঁর প্রথম সন্তান হাসানের জন্ম হয়। চতুর্থ হিজরির শাবান মাসে হজরত ফাতিমা দ্বিতীয় সন্তান উপহার দেন। আর সে হলো হজরত হোসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু। পঞ্চম হিজরিতে তিনি প্রথম কন্যা সন্তানের মা হন। বিশ্বনবী তাঁর নাম রাখেন যয়নব। এর দুই বছর পর তিনি ২য় কন্যা সন্তানের মা হন। বিশ্বনবী তাঁর নাম রাখেন উম্মে কুলছুম।
মক্কা অভিযানে ফাতিমা
মক্কা থেকে হিজরতের সময় তাঁরা চার বোন ছিলেন। আর আট বছর পর যখন মক্কায় আসেন তখন তার দুই বোন যয়নব ও উম্মে কুলছুম দুনিয়াতে নেই। সারা রাত প্রিয়তমা মায়ের কথা, দুই সহদোরা বোনের কথা স্মৃতির মানসপটে ভেসে উঠছিল। মক্কার দুঃসময়ে স্মৃতির কথা স্মরণ করতে করতে ভোর হয়ে যায়। মক্কা বিজয়ের রাতে ঘুমে যেন বিজয়ের সুখ তার স্বপ্ন মনে না হয় এ জন্য তিনি সারারাত ঘুমাননি।
পিতার অন্তিম শয্যা পাশে
হিজরি ১১ সনের সফর মাসে বিশ্বনবী অসুস্থ হয়ে পড়লে পিতা তাঁকে ডেকে পাঠালেন। তিনি আসলে তাঁকে ডান পাশে বসিয়ে কানে কানে বললেন, তাঁর মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে এসেছে। তাতে তিনি কেঁদে ফেলেন। তখন পিতা আবার তাঁর কানে কানে বললেন, আমার পরিবারের মধ্যে তুমিই সর্বপ্রথম আমার সঙ্গে মিলিত হবে। তখন তাঁর মুখমণ্ডলে আনন্দ ফুটে উঠলো।
মৃত্যু
হজরত ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু আনহা অন্যান্য বোনদের ন্যয় যৌবন বয়সে ইন্তিকাল করেন। বিশ্বনবীর ইন্তিকালের (মতান্তরে) সত্তর দিন পর ১১ হিজরির ৩ জমাদিউস সানি ২৯ বছর বয়সে তিনি ইন্তেকাল করেন। (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্নালিল্লাহি রাজিউন)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সকল রমণীদেরকে হজরত ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু আনহুর মতো হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
মন্তব্য চালু নেই