নবাবহীন দুটি বছর…
১৭৫৭ সালের ২৩ জুন নবাব সিরাজউদ্দৌলার পতন ঘটে। এর সঙ্গে সঙ্গেই মীর জাফরদের কল্যাণে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাবকে ভুলতে বসে ভারতবর্ষ। কিন্তু মৃত্যুর প্রায় দুইশ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর আবারো বাঙ্গালীর মনে ফিরে আসেন সিরাজউদ্দৌলা। আর এটা সম্ভব হয়েছিলো সেলুলোয়েডের কল্যাণে। ১৯৬৭ সালে খান আতাউর রহমান নির্মাণ করেছিলেন ‘নবাব সিরাজউদ্দৌলা’ ছবিটি। আর এতেই সিরাজের চরিত্রে দেখা মিলে অভিনেতা আনোয়ার হোসেনের।
‘নবাব সিরাজউদ্দৌলা’র মাধ্যমে পরিচিতি লাভ করলেও, আনোয়ার হোসেনের অভিষেক ঘটে ১৯৬১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘তোমার আমার’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। ১৯৩১ সালের ৬ নভেম্বর জামালপুর জেলার সরুলিয়া গ্রামে জন্ম তার। স্কুলজীবনে ‘পদক্ষেপ’ নামে একটি নাটকে প্রথমবারের মতো অভিনয় করে এলাকায় সাড়া ফেলে দেন। আর ৫২ বছরের অভিনয় জীবনে তিনি প্রায় পাঁচ শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। এর স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৭৫ সালে প্রথমবারের মতো প্রবর্তিত জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। নারায়ণ ঘোষ মিতা পরিচালিত ‘লাঠিয়াল’ ছবিতে সুঅভিনয়ের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেতা নির্বাচিত হন। এছাড়া আমজাদ হোসেনের ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ ছবিতে সহ-অভিনেতা হিসেবে পুরস্কার পান ১৯৭৮ সালে। সবশেষ ২০১০ সালে প্রদানকৃত জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার-এ আজীবন সম্মাননায় ভূষিত হন আনোয়ার হোসেন।
অভিনয়ের জন্য একাধিক রাষ্ট্রীয় পুরস্কারসহ খ্যাতি আর সম্মান জুটলেও, অর্থনৈতিকভাবে খুব একটা স্বাবলম্বী ছিলেন না আনোয়ার হোসেন। তাই মৃত্যুর মাত্র কয়েকমাস আগে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘খুব দুঃসময়। অসহায় এবং কষ্টের মধ্যে দিয়ে প্রতিটি মিনিট অতিবাহিত হচ্ছে আমার। এভাবে যে বেঁচে থাকতে হবে তা কখনো ভাবিনি। ভীষণ কষ্টের মধ্যে আর কতদিন আমাকে বেঁচে থাকতে হবে জানি না, জানি না, জানি না’…নবাবের এমন আক্ষেপই বলে শিল্পী জীবনের কষ্ট কতটা নীল হতে পারে।
চলচ্চিত্র অঙ্গনে প্রবেশ মাত্রই অনেকেই আঙ্গুল ফলে কলাগাছে পরিণত হন। অথচ প্রকৃত শিল্পীরা থেকে যার আঁধারের নিচে। যে কয়জন ক্ষণিকের জন্য আলোর সামনে আসতে পারেন, তাদের শেষ জীবনটা হয় আনোয়ার হোসেনের মতো। তাই তো তার মৃত্যুর পর অনেক সিনিয়র অভিনেতাকেই ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায়।
প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর লোকান্তরিত হন অভিনেতা আনোয়ার হোসেন।
মন্তব্য চালু নেই