নবজাতকের গোসল নিয়ে চিন্তিত?

ডা. আবু সাঈদ শিমুল : অনেকে জন্মের পরই বাচ্চাকে গোসল করাতে চান। আবার অনেকে মনে করেন, চুল কাটার পর কিংবা নাভি পড়ার পর গোসল করানো ভালো। তবে নিয়ম হলো সুস্থ, স্বাভাবিক বাচ্চাদের জন্মের ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টা পর গোসল করানো যাবে। এর আগে গোসল করানো উচিত নয়।

শিশুকে পরিচ্ছন্ন রাখতে নিয়মিত গোসল করাতে হবে। শীতকালে ঘন ঘন গোসল না করালেও চলে। এ সময় মলত্যাগ ও প্রস্রাবের পর শিশুকে ভালোভাবে পরিষ্কার রাখা চাই।

গোসলের আগে যিনি গোসল করাবেন, তাঁর হাত ভালো করে সাবান দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। গোসলের জন্য আগে থেকেই বাথটাবে বা একটি বোলে হালকা গরম পানি তৈরি রাখুন। আরেকবার দেখে নিন পানি যেন বেশি গরম না থাকে। গোসলের আগে শিশুর কাপড়চোপড় খুলে, মলমূত্র থাকলে তা পরিষ্কার করে তার পর শিশুকে বাথটাবে নামাতে হবে। গোসলের পানিতে সামান্য ডেটল বা স্যাভলন দিতে পারেন। নাভি যাতে না ভেজে, এ বিষয়টি মাথায় রাখুন।

মনে রাখবেন, বাচ্চাকে প্রথমবার পানির সংস্পর্শে আনছেন, তাই সে কিছুটা অসুবিধা বোধ করতেই পারে। অনেক নবজাতকই এ সময় কেঁদে ওঠে। বাচ্চাকে তাই ধীরে ধীরে পানির সংস্পর্শে আনুন। কিছুক্ষণ পরেই বাচ্চা পানির সঙ্গে মানিয়ে নেবে। তবে বেশি কান্না করলে পানি থেকে উঠিয়ে নিন। শিশুর জন্য বিশেষভাবে তৈরি কম ক্ষারযুক্ত সাবান, শ্যাম্পু ব্যবহার করুন। সাবান কেনার সময় তার পিএইচ লেভেল দেখে নিন। এই লেভেল সাতের নিচে থাকলেই ভালো।

অনেককেই দেখা যায়, গোসলের আগে বাচ্চার শরীরে মাখার জন্য হন্যে হয়ে খাঁটি শর্ষের তেল খুঁজছেন। মূলত গোসলের আগে, শিশুর গায়ে তেল মাখলে ক্ষতি যেমন নেই, তেমনি তেল মাখলে শিশুর শরীর সবল থাকবে বা হাড্ডি শক্ত হবে বলে যে মনে করা হয়, তা-ও সত্য নয়। আর শিশুর শরীরে গরমে তেল মাখানো ঠিক নয়।

গোসলের সময় শিশুর কান, বগল, রানের ফাঁক, কানের পেছনটা কোমল কাপড় দিয়ে আলতো করে ঘষে দিতে হবে। প্রথম কয়েক দিন মাথাতে পানি না দিয়ে নরম কাপড় দিয়ে মুছে দিতে পারেন। পায়খানা-প্রস্রাবের রাস্তা খুব ভালো করে ধুতে হবে। তবে সব সময় খেয়াল রাখবেন, নাকে-কানে যেন পানি না ঢোকে। চার-পাঁচ মিনিটে গোসলের পর্ব শেষ করে সঙ্গে সঙ্গে শরীরটা মুছে কাপড় পরিয়ে দেবেন।

টাওয়াল বা পোশাক আগে থেকে বাথটাবের পাশে রাখবেন। গোসল করানোর পর এসব খুঁজতে যাবেন না। তাহলে বাচ্চার ঠান্ডা লেগে যাবে। সে সঙ্গে শিশুর পরিধেয় বস্ত্রও আগে থেকে তৈরি রাখতে হবে। গোসল করানো শেষে বাচ্চাকে বাথটাব থেকে উঠিয়ে নেওয়ার সময় খুব সাবধান থাকতে হবে। এ সময় আপনার হাতে সাবান বা শ্যাম্পু লেগে থাকলে হাত পিছলে বাচ্চা পড়ে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

আসলে গোসল করানোর পুরো প্রক্রিয়াটাতেই নিরবচ্ছিন্ন মনোযোগ প্রয়োজন। তাই অনেকে মিলে হৈচৈ না করে, যেকোনো একজন গোসল করানোর দায়িত্ব পালন করুন।

লেখক : রেজিস্ট্রার, শিশু বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।



মন্তব্য চালু নেই