নতুন গবেষণা : দাড়ি থাকা ত্বকের জন্য ভালো
প্রাচীন কালে পুরুষের দাড়ি থাকাটা ছিল স্বাভাবিক বিষয়। কারণ দাড়ি কামানোর মত অতি সূক্ষ্ম কোন যন্ত্র তাদের ছিল না। তারা যে ধারালো অস্ত্র বানাতে পারতো সেটা ছিল এবড়ো থেবড়ো ভোঁতা এবং তা দিয়ে বড়জোর হাতি ঘোড়া মারা যেত। সেটা দিয়ে দাড়ির মত অতি সুক্ষ জিনিস কাটতে গেলে মুখের চামড়া উঠে যাওয়ার কথা। তবে প্রাচীন পুরুষের মধ্যে অনেকেই নিশ্চয়ই তাদের দাড়ি নিয়ে অস্বস্তিতে ভুগতেন। মনে মনে চাইতেন কিভাবে এই অস্বস্তি দূর করা যায় এবং দ্রুত নিজের মুখ থেকে আদিম বুনো পরিচয় মুছে ফেলে নিপাট ভালো মানুষ বনে যাওয়া যায়। কাজেই কী যন্ত্র তৈরি করলে দাড়ি কাটবে কিন্তু মুখের চামড়া কাটবে না, এটা নিয়ে তাদের মাথাব্যাথা ছিল কোনো সন্দেহ নাই। কারণ আধুনিক শিল্প বিজ্ঞানের যুগে এসে পুরুষরা দ্রুত মুখের দাড়ি ফেলে দিলেন। তাদের এখন ক্লিন শেভ করা ঝকঝকে মুখ। তাছাড়া বিজ্ঞানীরাও এ ব্যাপারে হাঁ হাঁ করে এসেছেন এতদিন। তারা বলেছেন, দাড়ি থাকলে সেখানে জীবাণু বাসা বাঁধে, তাতে মুখের ত্বক ক্ষতিগ্রস্থ হয়। কিন্তু সেই বিজ্ঞানীরাই একটি নতুন গবেষণা করে বলেছেন ভিন্ন কথা- দাড়ি থাকলে নাকি সেটা ত্বকের জন্য আখেরে ভালো হয়।
গবেষকরা পরীক্ষা করে দেখেছেন, দাড়িতে এমন কিছু ব্যাকটেরিয়া কার্যকর রয়েছে যেগুলো অ্যান্টিবায়োটিকে (ক্ষুদ্র জীবাণু প্রতিষেধক) পরিণত হয়ে ত্বকের সুরক্ষা করে। অর্থাৎ ক্লিন শেভ করা কোনো পুরুষের ত্বকে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা দাড়িওয়ালা কোনো পুরুষের থেকে বেশি। এই গবেষণাটি সম্প্রতি একটি হাসপাতালের রোগ সংক্রমণ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। হাসপাতালের ৪০৮ জন কর্মীদের মুখের চুল পরীক্ষা করে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছানো হয়।
ফলাফল অনুসারে, ক্লিন শেভ করা পুরুষেদের মুখে মেথিসিলিন রেসিসট্যান্ট স্টাফ আউরাস (এমআরএসএ) নামের একটি ব্যাকটেরিয়া বহন করার সম্ভাবনা দাড়িওয়ালা পুরুষদের তুলনায় তিন গুণ বেশি। এই ব্যাকটেরিয়া ত্বকের এবং শ্বাস-প্রশ্বাস জনিত সংক্রমণের পাশাপাশি খাদ্যে বিষক্রিয়াও ঘটায়। ক্লিন শেভ করা পুরুষদের মুখে এই ব্যাকটেরিয়ার কলোনি থাকার সম্ভাবনা ১০ শতাংশ বেশি।
গবেষকরা পরামর্শ দিয়েছেন, এটা হওয়ার কারণ সম্ভবত দাড়ি কামানোর ফলে মুখের উপরিভাগের যে পাতলা আবরণ (মাইক্রো আব্রাসিয়নস) উঠে যায় তাতে করে ব্যাকটেরিয়া দ্রুত বাসা বাঁধতে পারে। গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যাকটেরিয়ার সার্বিক বাসা বাঁধার মাত্রা বেশিরভাগ পুরুষের মধ্যেই (দাড়ি এবং দাড়ি ছাড়া) প্রায় সমান। তবে যাদের দাড়ি নেই তাদের ত্বকে কিছু ব্যাকটেরিয়ার মাত্রা বেশি।
লন্ডনের ইউনিভার্সিটি কলেজের একজন মাইক্রো বায়োলজিষ্ট ডক্টর অ্যাডাম রবার্টস বিভিন্ন পুরুষের মুখের দাড়ি থেকে নেয়া নমুনা দিয়ে প্রায় ১০০টি ভিন্ন ভিন্ন ব্যাকটেরিয়া সৃষ্টি করতে সমর্থ হয়েছেন আলাদা আলাদা বিশ্লেষণ পাত্রে (পিট্রি ডিশ)। ব্যাকটেরিয়ার এই পাত্রগুলোতে তিনি একধরনের অণুজীবের উপস্থিতি পেলেন যেটা কিনা অন্য ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলছে। ডক্টর রবার্টস এই অণুজীবটিকে আলাদা করে সেটাকে ই.কোলাই (যে ব্যাকটেরিয়া প্রস্রাবের নালীতে সংক্রমণ সৃষ্টি করে) ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে পরীক্ষা করলেন। ফলাফলে দেখা গেলো, এই অণুজীব ই.কোলাইকে ধ্বংস করতে সমর্থ হয়েছে। যদিও পরবর্তীতে তিনি জানান এই বিশ্লেষণের ফলে নতুন গবেষণার পথ প্রসারিত হয়েছে।
বর্তমানে অ্যান্টিবায়োটিকের যে মজুদ রয়েছে সেটা খুব দ্রুত অকার্যকর হয়ে পড়ছে। প্রতি বছর অ্যান্টিবায়োটিকরোধী সংক্রমণে ৭ লাখ মানুষ মারা যান। গত ৩০ বছরে কোনো নতুন ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক বের হয় নি। যে কারণে ডক্টর রবার্টস তার এই গবেষণার ফলাফলকে ১৯২৮ সালে স্কটিশ বিজ্ঞানী অ্যালেক্সান্ডার ফ্লেমিংইয়ের পেনিসিলিন আবিষ্কারের সাথে তুলনা করেন। অ্যালেক্সান্ডার পেনিসিলিন আবিষ্কার করেছিলেন ঘটনাক্রমে। তার গবেষণাগারের একটি ব্যাকটেরিয়ার পাত্রে ফাঙ্গাসের বীজাণু ভুল ক্রমে পড়লে তিনি দেখেছিলেন পাত্রের ব্যাকটেরিয়ারা মারা গেলো। সেখান থেকেই বিশ্বখ্যাত পেনিসিলিন অ্যান্টিবায়োটিকের জন্ম।
মন্তব্য চালু নেই