নতুন কৌশল নিয়ে আসছেন খালেদা

নির্দলীয় সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলনের নতুন কৌশল এবং জোটের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে খুব শিগগিরই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জাতির সামনে হাজির হচ্ছেন বিএনপির চেয়ারপারসন ও ২০ দলীয় জোট প্রধান বেগম খালেদা জিয়া।

দেশের আন্দোলনের ইতিহাসে ২০ দলীয় জোটের অবরোধ-হরতাল ‘সর্বাধিক সময়ের’ রেকর্ড পার করলেও ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের ইতিবাচক সাড়া না পাওয়ায় নতুন বক্তব্য নিয়ে হাজির হবেন তিনি। দলের শীর্ষ পর্যায়ের বেশ কয়েকটি সূত্র  এমন ইঙ্গিত দিয়েছে।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বর্ষপূর্তির দিন ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবসের’ কর্মসূচিতে নিজের রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে বের হতে না পেরে অনির্দিষ্টকালের অবরোধের ডাক দিয়ে গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অবস্থান নেন খালেদা জিয়া। টানা ৫০ দির পার করে সেই অবেরোধ এখনো চলছে। আর তিনিও আছেন তার কার্যালয়ে।

পাশাপাশি কয়েক দফায় সপ্তাহ জুড়ে হরতাল দিয়েছে বিএনপি জোট। সর্বশেষ বুধবার ৭২ ঘণ্টা হরতালের সঙ্গে আরো ৪৮ ঘণ্টা বাড়িয়ে বিবৃতি দিয়েছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদ। তবে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের চলমান আন্দোলনে রাজধানীর বাইরে ব্যাপক প্রভাব পড়লেও ঢাকা অকেটাই নিরুত্তাপ।

দলীয় সূত্র বলছে, ঢাকার বাইরের নেতা-কর্মীরা আত্মগোপনে থেকেও আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। ‘মামলা, গুম, খুন বা ক্রসফায়ার আতঙ্ক’ মাথায় নিয়ে আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারা। তবে রাজধানীতে অতীতের মতো এবারও কেন্দ্রীয় নেতারা মাঠে না নামায় হতাশ তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা।

তাদের মতে, মহানগরের হেভিওয়েট নেতারা মাঠে নামলে আন্দোলনের চিত্র অন্যরকম হতো। ৫০ দিন পার হলেও সরকারের পক্ষ থেকে ইতিবাচক কোনো মূল্যায়ন না থাকায় আন্দোলনের ভবিষ্যৎ নিয়েও ভাবনায় পড়েছেন অনেকে। তবে সরকারকে বাধ্য করতে অনির্দিষ্টকালের আন্দোলন চালিয়ে যেতে চান তারা।

আন্দোলনে ঢাকার নেতাদের মাঠে না থাকায় সরকারকে ‘কাঙ্ক্ষিত চাপ’ দেওয়া সম্ভব হয়নি স্বীকার করে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আহমদ আযম খান বলেন, ‘ঢাকায় আমাদের ব্যর্থতা আছে। তবে ঢাকায় পাঁচজন একত্রিত হলেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গুলি করার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। সেখানে নেতা-কর্মীরা রাজপথে নামবে কী করে? তার পরও গুলি খেলে নামা উচিত।’

সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ সময়ের এই আন্দোলনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, বিশ্বসম্প্রদায়, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন পক্ষ থেকে সংলাপের বসার তাগিদ দিলেও সরকার এ বিষয়ে কোনো কর্ণপাত করছে না। এতে প্রমাণিত হয়, এই সরকার কতটা স্বৈরাচারী, নৃশংস আর ভয়াবহ। তারা বিরোধী দলকে হত্যা, নির্যাতন আর ধ্বংস করার মধ্যে দিয়েই রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান করতে চায়। তাই এই পর্যায়ে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া ছাড়া আর বিএনপির সামনে আর কোনো বিকল্প নেই। সরকারকে বাধ্য না করলে তারা আলোচনায় আসবে না।’

দলীয় সূত্রগুলো বলছে, মামলায় জর্জরিত তৃণমূল বিএনপির নেতা-কর্মীরা টানা এই কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে এখন ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত। সেই সঙ্গে গুম, খুন, অপহরণ বা গ্রেফতার আতঙ্কে দীর্ঘদিন ধরে বাসাবাড়িতে থাকছেন না অনেকেই।

এ ছাড়া ‘ক্রসফায়ার’ বা ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নেতা-কর্মী নিহত হওয়ার ঘটনা তৃণমূলের পাশাপাশি বিএনপির নীতিনির্ধাকরদের ভাবিয়ে তুলেছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় আগামী মাসে পরিবর্তন আসতে পারে আন্দোলনের কৌশলে। এ অবস্থায় শিগগিরই সংবাদ সম্মেলনে আসছেন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। শুক্রবার অথবা আগামী সপ্তাহের শুরুতে চেয়ারপারসনের গুলশানের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন করবেন তিনি।

আন্দোলনে দলের অবস্থান জানতে চাইলে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, জাতিসংঘ উদ্যোগ নিচ্ছেন, সংলাপের আহ্বান জানাচ্ছেন। দীর্ঘদিনের আন্দোলনে দেশের আইনশৃঙ্খলা, অর্থনীতিসহ সার্বিকভাবে খারাপ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এসব দেশের জন্য সুখকর নয়। সরকারের এ বিষয়টি ইতিবাচকভাবে দেখা উচিত।



মন্তব্য চালু নেই