ধানক্ষেতে পড়ে থাকা নগ্ন কিশোরীটি কে?
– ছেমরিডারে জানোয়ারের বাচ্চারা কামড়াইয়াই মাইরা ফাইলাইছে!
– কি বলছেন এসব?
– হ, ভাই। দেইখা মনে হইলো ছেমরিডার বুকটার মাংস শালারা খাইয়াই ফালাইছে!
– আপনি নিজে দেখেছেন?
– খালি আমি না! গিরামের সক্কলেই দেখছে!
– কি করতো মেয়েটা?
– ছেমরিডাতো আমাগো গিরামের না! আমরা কেউ চিনবার পারি নাই।
বাঘুটিয়া গ্রামে অজ্ঞাত এক কিশোরীর নগ্ন মরদেহ পাওয়া গেছে। কিশোরীর শরীরের বিভিন্ন স্থানে কামড়ের চিহ্ন। তার বাম স্তনবৃন্তটি কামড়ে ছিড়ে ফেলা হয়েছে। গলার ডান পাশটাও বেশ জখম। নৃশংস-পাষবিক নির্যাতন করে কিশোরীটিকে হত্যা করা হয়েছে। এজিএস হাই স্কুলের মাঠ ভরে গেছে লোকজনে। কিশোরীর মরদেহ পাওয়া গেছে যমুনা নদীর পারে ধানক্ষেতের মধ্যে। গ্রাম্য পুলিশ লোকজনদের কিশোরীর কাছে ঘেঁষতে দিচ্ছে না। স্কুলের মাঠ থেকে নদীর পারের ধানক্ষেত দুই মিনিটের পথ। আমাকে দেখে গ্রামের একজন মেম্বার এগিয়ে আসেন। আমি তার সঙ্গে কথা বলতে বলতে কিশোরীর মরদেহের কাছে যাই। আমি চমকে উঠি!
ধানক্ষেতের মধ্যে চিৎ হয়ে পড়ে থাকা নগ্ন মেয়েটির মরদেহ একনজর দেখে আমি শিউরে উঠি। তার স্তন আর যোনি ক্ষত-বিক্ষত! দুই উরুতে রক্তের ছড়াছড়ি! তার মুখটি আমার কাছে খুব পরিচিত। কিন্তু চিনতে পারছি না। আমি মেম্বারকে নিয়ে মাঠের মাঝখানটায় চলে আসি। নৃশংস-পাষবিকতার বীভৎসতা আমাকে যন্ত্রণা দেয়।
মেম্বার আমাকে আরও কিছু তথ্য দিতে চায়। আমি মেম্বারকে থামিয়ে বলি।
– আগে মেয়েটাকে ঢাকেন।
মেম্বার আমার দিকে তাকায়ে পান চিবুতে চিবুতে বলেন,
– আগে পুলিশ আসবার দেন।
তার কথা শুনে আমি আশ্চর্য হই। বলি-
– পুলিশের বিষয়টা আমি দেখবো। আগে কাউকে বলেন মেয়েটাকে ঢাকতে।
মেম্বার আমার কথায় মনে হলো বিরক্ত হলেন! তিনি আমতা আমতা করতে থাকেন। আমি মেম্বারের কাঁধে থাকা গামছাটা নিয়ে একজন গ্রাম্য পুলিশকে দেই। বলি,
– জলদি গিয়ে মেয়েটাকে আগে ঢাকেন।
তিনি আমার হাত থেকে গামছা নিয়ে মেম্বারের দিকে তাকান। মেম্বার পানের পিক ফেলে মাথা নাড়ান। গ্রাম্য পুলিশ গামছা নিয়ে কিশোরীটির দিকে দৌড় দেন।
দুই
বাঘুটিয়া গ্রামে এ ধরনের ঘটনা এর আগে ঘটেনি। গ্রামের চারদিকে যমুনা নদী। গ্রামটি একটা দ্বীপের মতো। গ্রামে কারেন্ট নেই। গ্রাম থেকে থানা ১৫ কিলোমিটার দূরে। মাঝখানে নদী পার হতে হয় নৌকায়। পুলিশ সদস্যরা এখনো আসেনি। ভোরে গ্রামের চেয়ারম্যান আব্দুল জব্বার ফকির ফোন করে বিষয়টি প্রথমে থানায় জানান। তারপরে আমাকে জানান।
চেয়ারম্যানের সঙ্গে স্কুলের মাঠের পাশে পাকোড় গাছের নিচে বসে আছি। চারপাশে নানা ধরনের গুঞ্জন। ছোট-বড় সবার মুখেই বিস্ময়! কে এই মেয়েটা? কারা করলো এই কাজ?
– এই মেয়েটাকে এর আগে কখনো এই এলাকায় দেখা যায়নি।
– কিন্তু আমি মনে হয় এই মেয়েটিকে এর আগে কোথাও দেখেছি!
– তাই নাকি?
– হ্যাঁ! কিন্তু কোথায় দেখেছি সেটাইতো মনে করতে পারছি না!
– সুন্দরী মেয়ে তো! তাই আপনার কাছে এ রকম মনে হচ্ছে।
আমি চেয়ারম্যানের আর কোনো কথার উত্তর দিই না। খুব টেনশনে পড়ে যাই! কোথায় দেখেছি এই মেয়েটাকে? পাল্টা চেয়ারম্যানকে বলি,
– কাউকে নদীর পার দিয়ে দেখতে বলেন, যদি মেয়েটির কোনো জামা-কাপড় কিংবা কোনো ব্যাগ পাওয়া যায়!
চেয়ারম্যান সঙ্গে সঙ্গে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ান। বলেন,
– ভালো কথা বলেছেন তো? খুঁজে দেখা দরকার!
আমি মাথা নাড়িয়ে সায় দিই। চেয়ারম্যান গ্রাম্য পুলিশদের ডেকে কাছে আনেন। বলেন,
– খোঁজ নিয়ে দেখো, মেয়েটির কোনো জামা-কাপড়, ব্যাগ-ট্যাগ কেউ পেয়েছে কি না?
দুজন গ্রাম্য পুলিশ মাঠের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষজনের জটলার মধ্যে ঢুকে যান। চেয়ারম্যান আবার চেয়ারে বসেন। বলেন,
– এটা মনে হচ্ছে বাইরের লোকজনের কাজ হবে।
– গ্রামের লোকজনদেরও তো হতে পারে?
– না না! আমাদের গ্রামের লোকজন এ রকম না!
– আপনি নিশ্চিত হন কিভাবে? আগে পুলিশ আসুক, তদন্ত করুক। তারপর বোঝা যাবে আসল ব্যাপারটা।
– একবার চিন্তা করছেন? মেয়েটারে কী অবস্থা করেছে শয়তানরা!
– আমি সেটাই ভাবছি, এমন পাষবিকতা সুস্থ কারো পক্ষে সম্ভব নয়।
চেয়ারম্যানের মোবাইলে ফোন আসে। পুলিশ সদস্যরা নদী পার হচ্ছেন। আমি চেয়াম্যানকে বলি,
– চলেন, একটু নদীর পার দিয়ে হেঁটে আসি!
তিন
মানিকগঞ্জ প্রেসক্লাবে বসে আছি। সামনে কমপিউটার খোলা। নিউজ পাঠানোর টাইম পার হয়ে যাচ্ছে। অথচ টাইপ করতে পারি না। আমার হাত কাঁপে। এর আগেও তো কত ধর্ষণের নিউজ করেছি। হাত তো কাঁপেনি। কি শিরোনাম হবে নিউজটার? কিশোরীটি কে? নাকি অজ্ঞাত কিশোরীর মরদেহ উদ্ধার?
এই নিউজটি কী এখানেই শেষ! কিশোরীটি কে? কোথা থেকে এলো! কারা নিয়ে এলো! কারা এর সঙ্গে জড়িত! তার জামা-কাপড় কোথায় গেল? শত প্রশ্ন থেকে যায় মনে।
প্রতিদিন পত্রিকার পাতা উল্টালেই ধর্ষণের খবর চোখে পড়ে। স্কুল, মাদ্রাসা আর কলেজছাত্রী নয় গৃহবধূও ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন প্রতিদিন। আমি শিউরে উঠি না; অভ্যাস হয়ে গেছে এসবে আমার। তবে আজকে কেন শিউরে উঠছি আমি! মেয়েটি কি আমার পরিচিত কেউ? কোথায় দেখেছি আমি? আমি হিসেব মিলাতে পারি না। মাথাটা ব্যথায় টনটন করতে থাকে। (সংগৃহিত)
মন্তব্য চালু নেই