‘ধর্ষণের শিকার’ ছাত্রীদেরই মাদ্রাসা থেকে বহিষ্কার
যশোরের কেশবপুর উপজেলায় দুই মাদ্রাসাছাত্রী ধর্ষণের শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনার পর জড়িত সন্দেহে দুই ছাত্রের পাশাপাশি ওই দুই ছাত্রীকেও বহিষ্কার করেছে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ।
পুলিশ জানিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার রাতের এ ঘটনায় আজ শনিবার দুপুরে মামলা হয়েছে। উপজেলার বরণডালি দাখিল মাদ্রাসার নবম শ্রেণির ওই দুই ছাত্রীকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, গত বৃহস্পতিবার দুপুরে কম্পিউটার প্রশিক্ষণের কথা বলে দুই ছাত্রীকে মাদ্রাসা থেকে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয় বরণডালি এলাকার জামায়াত নেতা ত্রিমোহিনী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নূরুল ইসলামের বাড়ির দ্বিতীয় তলায়। সেখানেই দুই ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হয়। নূরুল ইসলাম ওই মাদ্রাসার শিক্ষকও।
কেশবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মতর্তা (ওসি) সহিদুল ইসলাম সহিদ বলেন, এক মাদ্রাসাছাত্রীর বাবা শনিবার দুপুরে বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন। সেখানে তিনি তাঁর মেয়েসহ দুজন ধর্ষণের শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন।
এ ঘট্নায় সাবেক চেয়ারম্যান নূরুল ইসলামের ছোট ভাই মফিজুর রহমানের ছেলে ইব্রাহীম হোসেন এবং আজগর আলী দফাদারের ছেলে আমিনুর রহমানকে আসামি করা হয়েছে। তারা ওই মাদ্রাসার দশম শ্রেণির ছাত্র।
একই সময় আরেক ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হয়েছে বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। তবে এখনো ওই ছাত্রীর অভিভাবক অভিযোগ করেনি। অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশ চেষ্টা করছে বলে জানান ওসি।
অপরদিকে ধর্ষকদের বিচার দাবিসহ মাদ্রাসার পরিবেশ রক্ষায় শিক্ষার্থীরা আজ শনিবার বিক্ষোভ করে।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, দুপুরে ওই দুই মাদ্রাসাছাত্রীকে কম্পিউটার প্রশিক্ষণের কথা বলে মাদ্রাসার অদূরে চেয়ারম্যান নূরুল ইসলামের বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। সন্ধ্যায় তারা বাড়ি না ফিরলে পরিবারের লোকজন খোঁজাখুজি শুরু করে। পরে রাত ৯টায় তাদের রক্তাক্ত অবস্থায় ওই বাসা থেকে উদ্ধার করা হয়। এ সময় ইব্রাহিম ও আমিনুর পালিয়ে যায়।
মামলা দায়েরকারী অভিভাবক অভিযোগ করেন, সেদিন চেয়ারম্যানের অসুস্থ বোনকে দেখার জন্য বাড়ির সবাই বাইরে ছিল। এ সুযোগে ইব্রাহিম ও আমিনুর দুই ছাত্রীকে আটকে রেখে ধর্ষণ করে। ওই দুই ছাত্রের পরিবার এলাকায় প্রভাবশালী। মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত সুপার জামায়াতে ইসলামীর উপজেলা শাখার আমির মাওলানা আব্দুস সামাদ।
অপর এক ছাত্রীর বাবা বলেন, মাদ্রাসা থেকে মেয়ে ছুটি চাইলেও তাঁকে জানানোর কথা। অথচ মেয়ে দুটির বইও মাদ্রাসায় পড়ে ছিল। কিন্তু মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত সুপার তাদের কোনো খোঁজ-খবর নেননি। যশোর সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মেয়ের ডাক্তারি সনদ এলেই মামলা করবেন বলে জানান তিনি।
মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত সুপার মাওলানা আব্দুস সামাদ বলেন, ঘটনা জানার পর পরই মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির সভা ডাকা হয়।
মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি খায়রুল খান বলেন, পরিচালনা কমিটির সভায় ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে দুজন ছাত্রকে বহিষ্কার করা হয়েছে। পাশাপাশি দুই মাদ্রাসাছাত্রীকেও বহিষ্কার করা হয়েছে।
যারা ধর্ষণের শিকার হলো তাদেরই আবার বহিষ্কার করা হলো কেন- এমন প্রশ্নের জবাবে পরিচালনা কমিটির সভাপতি বলেন, শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করায় মাদ্রাসার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনার স্বার্থেই চারজনকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
মন্তব্য চালু নেই