ধর্মান্তরিত হয়েই আনসারুল্লায় নাম লেখায় পিকলু দাশ

শুধু মুসলমানযুবকরাই নয়, ধর্মান্তরিত হয়ে তথাকথিত জিহাদীদের খাতায় নাম লেখাচ্ছেন অন্যরাও। নিজ নিজ ধর্ম পরিবর্তন ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে যোগ দিচ্ছেন ইসলামীভিত্তিক বিভিন্ন গোষ্ঠীতে।

সম্প্রতি আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়াদের ব্যাপারে অনুসন্ধ্যান চালাতে গিয়ে এমন তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা।

চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ডে থেকে গ্রেফতার হওয়া আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের ৪ সদস্যের মধ্যে মুছা ইবনে উমায়ের (২৬) ছিলেন একজন হিন্দু যুবক। ধর্মান্তরিত হয়ে নিষিদ্ধ এই ইসলামপন্থী সংগঠনে যোগ দেন তিনি।

দেশে নিষিদ্ধ দলের সদস্য হিসেবে নও মুসলিম মুছা প্রথম ধরা পড়লেও পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও হিন্দু এবং খ্রিষ্টান ধর্মের কয়েকজন তরুণ-তরুণী নিজ নিজ ধর্ম ত্যাগ করে আন্তর্জাতিক সংগঠন আইএসে যোগ দেওয়ার খবর প্রকাশিত হয়েছে গণমাধ্যমে।

চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) মুহাম্মদ রেজাউল মাসুদ বলেন, ‘আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে মূলত ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে কম জানাদের টার্গেট করে নিজেদের দল ভারী করছে জঙ্গি সংগঠনগুলো। তার মধ্যে নও মুসলিমদের ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে সহজে ব্রেনওয়াশ করতে পারছে। হয়তো একারণে তাদের টার্গেট করছে। অথবা অন্য ধর্মের যুবকদের নানা প্রলোভনে ফেলে ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট করে পরে জঙ্গি দলে ভিড়াচ্ছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘এক্ষেত্রে জেএমবির পলিসি অন্য রকম। জেএমবির টার্গেট যারা ধর্ম সম্পর্কে বেশি জানে এবং কোরআন হাদিস মুখস্ত করতে পারে। এমন লোকজনদের টার্গেট করে তারা। এর মধ্যে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম এবং হিযবুত তাহরীরের উদ্দেশ্য হচ্ছে খিলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। তাই তাদের উদ্দেশ্য হলো তাদের মতের বিরোধীদের হত্যা করে যারা বেঁচে থাকবেন তাদের নিয়ে পরবর্তীতে খিলাফাত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা।’

এদিকে খবর নিয়ে জানা গেছে, সীতাকুণ্ড থেকে গ্রেফতার হওয়া মুছা ইবনে উমায়েরের আগের নাম ছিল পিকলু দাশ। তিনি পটিয়া উপজেলার ছনহরা গ্রামের অরুণ কান্তি দাশের ছেলে। মুছা সিইপিজেডে ইয়ং ওয়ান গার্মেন্টসে কোয়ালিটি ইন্সপেক্টর পদে কর্মরত ছিলেন।

এ ব্যাপারে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উত্তর) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে মুছা জানায়, সে ছিল হিন্দু যুবক। চট্টগ্রামের ইপিজেডে ইয়ং ওয়ান গার্মেন্টসে কোয়ালিটি ইন্সপেক্টর পদে কাজ করতে মুছা। সেখানে মুসলমান সহকর্মীর মাধ্যমে ইসলাম তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। ইসলাম ধর্মের নিয়ম-কানুন পালন এবং নামাজ কালাম নিয়মিত পড়তেন। বছর দুয়েক আগে তিনি আনসারুল্লাহ বাংলা টিমে যোগ দেন। পরে তিনি আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের বায়তুল মাল সম্পাদক হিসেবে কাজ করতেন বলেও জানান পুলিশকে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান আরো জানান, ধর্মান্তরিত হওয়ার পর থেকে মুছা পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরিবারের কারো সাথে তার কোনো ধরণের যোগাযোগ নেই।

‘রাজধানীর গুলশান ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় হামলার পর চট্টগ্রামেও নাশকতার পরিকল্পনা ছিল মুছাসহ গ্রেফতার করা অন্য জঙ্গিদের। বিশেষ করে চট্টগ্রামের বিভিন্ন মিল কারখানায় কর্মরত বিদেশি নাগরিক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের উপর জঙ্গিরা হামলা চালানোর পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নেমেছিল’ জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান।

খুব শিগগিরই চট্টগ্রামে এ হামলার পরিকল্পনার করেছিল তারা, এমনটাই দাবি করে তিনি বলেন, ‘তারা যদি গ্রেফতার না হতো তাহলে চট্টগ্রামে খুব শিগগরই বড় ধরনের হামলা চালাতো।’

গ্রেফতার হওয়ার কারণে তাদের সব পরিকল্পনা নস্যাৎ হয়েছে বলে দাবি করেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।

উল্লেখ্য, ১১ জুলাই শনিবার গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সীতাকুণ্ডের বাড়বকু বাজারের পূর্ব পাশে একটি গোপন আস্তানা থেকে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের তিন সদস্য মো. শিপন ওরফে ফয়সাল (২৫), খোরশেদ আলম (৩১) ও রাসেল মো. ইসলাম (৪১)কে গ্রেফতার করা হয়। এর দুইদিন পর সোমবার একই স্থান থেকে গ্রেফতার করা হয় নও মুসলিম মুছা ইবনে উমায়েরকে।

পুলিশ জানায়, চারজনের কাছ থেকে চারটি চাপাতি ও চারটি কিরিচ, ছয়টি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ ও একটি ট্যাব এবং বেশকিছু ইসলামী বই উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের ৫ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চালাচ্ছে জেলা পুলিশ।



মন্তব্য চালু নেই