দেশের ইতিহাসে বড় নিলাম ৩০ এপ্রিল

দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় নিলাম আয়োজন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। দ্বিতীয় প্রজন্মের মোবাইল ফোন প্রযুক্তির (টুজি) সেবা দেওয়ার জন্য অব্যবহৃত ১৮০০ মেগাহার্টজ এবং তৃতীয় প্রজন্মের মোবাইল ফোন প্রযুক্তির (থ্রিজি) জন্য অব্যবহৃত ২১০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডের তরঙ্গ নিলাম হবে আগামী ৩০ এপ্রিল।

খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, এবারের নিলামে সরকার পাঁচ হাজার কোটি টাকারও বেশি আয় করবে। এর আগে ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে থ্রিজির জন্য ২১০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডে সরকারের বরাদ্দ ৪০ মেগাহার্টজ স্পেকট্রামের মধ্যে নিলামে বিক্রি হয় ২৫ মেগাহার্টজ। এতে ৪ হাজার কোটি টাকারও বেশি আয় করে বিটিআরসি । ওই নিলামে ১০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ কিনে নেয় গ্রামীণফোন। আর ৫ মেগাহার্টজ করে কিনে নেয় বাংলালিংক, রবি ও এয়ারটেল। আর থ্রিজির সেবা দিতে এর আগেই রাষ্ট্রায়ত্ব সেলফোন অপারেটর টেলিটক ১০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ বরাদ্দ পায়।

৩০ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া নিলামে ১৮০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডের দুটি ব্লক ৫ দশমিক ৬ এবং ৫ মেগাহার্টজ নিরর্ধারণ করা হয়েছে । আর ৫ মেগাহার্টজ করে তিনটি ব্লক নির্ধারণ করা হয়েছে ২১০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডে ।

নিলামে১৮০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডে তরঙ্গের জন্য বেইস প্রাইস নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি মেগাহার্টজ ৩০ মিলিয়ন ডলার। আর ২১০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডে তরঙ্গের জন্য বেইস প্রাইস নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি মেগাহার্টজ ২২ মিলিয়ন ডলার। এই নিলাম আয়োজনের জন্য ইতিমধ্যে তরঙ্গ বরাদ্দ নীতিমালা চূড়ান্ত করেছে বিটিআরসি।

নীতিমালা অনুযায়ি, নিলামে কেবল ওইসব প্রতিষ্ঠানই অংশগ্রহণ করতে পারবে যাদের জিএসএম ব্যান্ডে ২০ মেগাহার্টজের কম তরঙ্গ বরাদ্দ রয়েছে। তবে প্রথম ধাপে নিলামে যদি কোন তরঙ্গ ব্লক বিক্রয় না হয় তাহলে ২০ মেগাহার্টজের বেশি বরাদ্দ পাওয়া কোম্পানিগুলো অংশ নিতে পারবে।

তবে এবার নিলামে অংশ নিতে পারছেনা দেশের শীর্ষস্থানীয় মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোন। কেননা টুজির ৯০০ ও ১৮০০ মেগাহার্টজ এবং থ্রিজির ২১০০ মেগাহার্টজ মিলিয়ে কোম্পানিটির কাছে বর্তমানে মোট ৩২ মেগাহার্টজ তরঙ্গ বরাদ্দ রয়েছে।

যে কারণে বিটিআরসির এমন সিদ্ধান্ত মেনে নিতে নারাজ মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানিটি। গ্রামীণফোন বলছে, এ ধরনের শর্ত বৈষম্যমূলক। নীতিমালার এ শর্তে উদ্বেগ প্রকাশ করে গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) রাজীব শেঠী বলেন, ‘আমরা সকলের অংশগ্রহণে একটি নিরপেক্ষ নিলামের দাবি জানিয়ে আসছি। টেলিযোগাযোগ খাতের পাশাপাশি দেশও উপকৃত হয় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।’

টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়কে আলোচনার মাধ্যমে নিরপেক্ষ নিলাম আয়োজনের অনুরোধ জানিয়ে সম্প্র্তি বিটিআরসির চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়েছে মোবাইল অপারেটরদের বৈশ্বিক সংগঠন জিএসএমএ। আর এ সংক্রান্ত চিঠি অর্থমন্ত্রী, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিবকেও দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

জিএসএমএর হেড অব পলিসি জন জিউস্টি স্বাক্ষরিত এ চিঠিতে বলা হয়, নীতিমালা চূড়ান্তের ক্ষেত্রে যথাযথ ও প্রকাশ্য আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে। এ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হলে আগ্রহী পক্ষগুলো নীতিমালা ভালোভাবে বুঝতে ও এ বিষয়ে মতামত জানাতে পারবে।

এ প্রসঙ্গে বিটিআরসির ঊধ্বর্তন এক কর্মকর্তা বলেন, বাজারে একচেটিয়া প্রাধান্য কমাতে নীতিমালায় এ শর্ত দেওয়া হয়েছে, অন্যথায় লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ঠিক থাকবে না।

ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, তারা (গ্রামীণফোন) যতই লবিং বা চিঠি চালাচালি করুক না কেন মার্কেটের আধিপত্য এক কোম্পানির হাতে দেওয়া হবে না। এখানে সবাই ব্যাবসা করতে এসেছে, তাই সবাইকেই সুযোগ দেওয়ার দায়িত্ব নিয়ন্ত্রন সংস্থার।

৫১ দশমিক ৫০৪ মিলিয়ন গ্রাহককে কোয়ালিটি অফ সার্ভিস দিতে গ্রামীণফোনেরওতো আরো তরঙ্গ প্রয়োজন থাকতে পারে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, গ্রাহক সংখ্যা এখন যাদের কম এক সময় তাদেরও বাড়বে। এছাড়া মোবাইল নম্বর পোর্টেবিলিটি (এমএনপি) বা নম্বর না বদলে অপারেটর পরিবর্তন করার সুবিধা যখন চালু হবে তখন অন্য অপারেটরগুলোর গ্রাহক অনেক বেড়ে যাবে।

এছাড়া যদি কোন কোম্পানি অব্যবহৃত তরঙ্গ নিলামে অংশ না নেয় তা হলেতো গ্রামীণফোনের তরঙ্গ নেওয়ার সুযোগ থাকছেই। এখানে (নীতিমালায়) কোন বৈষম্যমূলক শর্ত দেওয়া হয়নি বলে জানান ওই কর্মকর্তা।

১৯ ফেব্রুয়ারি বিটিআরসির প্রকাশিত পৃথক দুটি নীতিমালা অনুযায়ি, নিলামে অংশগ্রহণে আগ্রহী প্রতিষ্ঠানগুলোকে ২৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে আবেদন করতে হবে। আবেদন ফি বাবদ জমা দিতে হবে ৫ লাখ টাকা। প্রাক-নিলাম বৈঠক হবে ১৮ মার্চ। ৬ এপ্রিল নিলামে অংশ নিতে পারবে এমন যোগ্য কোম্পানিগুলোর তালিকা প্রকাশ করবে বিটিআরসি। আর ২০ এপ্রিলের মধ্যে বিড আর্নেস্ট মানি বাবদ দেড় হাজার মিলিয়ন টাকা জমা দিতে হবে। কোনো কোম্পানি নিলামে অংশ নিতে না চাইলে তা ২৩ এপ্রিলের মধ্যে জানাতে হবে। এরপর পরীক্ষামূলক নিলাম বা মক অকশন হবে ২৯ এপ্রিল। আর ৩০ এপ্রিল হবে চূড়ান্ত নিলাম। নিলামে নির্বাচিত সর্বোচ্চ দরদাতাকে ৩০ দিনের মধ্যে দামের ৬০ শতাংশ পরিশোধ করতে হবে। বাকি ৪০ শতাংশ দুটি কিস্তিতে পরিশোধ করার সুযোগ রাখা হয়েছে গাইডলাইনে।



মন্তব্য চালু নেই