দুস্থ মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় সাবেক মেয়র, কলেজের অধ্যক্ষের নাম!
টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে দুস্থ মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় এবার স্থান করে নিয়েছেন সচ্ছল ও বিত্তবান মুক্তিযোদ্ধারা। অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা সেজে এমপি কোটায় সরকারের গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প (টিআর) প্রকল্পের বিশেষ বরাদ্দে সোলার প্যানেল স্থাপনের নিমিত্তে ২৫ লাখ টাকার সোলার নিচ্ছেন সচ্ছল মুক্তিযোদ্ধারা। আর এই কথিত অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় আছেন কলেজের অধ্যক্ষ, পৌরসভার সাবেক মেয়র, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার, ডেপুটি কমান্ডারসহ অর্ধশতাধিক বিত্তবান মুক্তিযোদ্ধা। স্থানীয় সংসদ সদস্যের অনুপস্থিতিতে সরকার দলীয় প্রভাবশালী মুক্তিযোদ্ধাদের একটি অংশ এ তালিকা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
২০১৪-১৫ অর্থবছরে টিআর কর্মসূচির আওতায় স্থানীয় সংসদ সদস্যকে দুই পর্যায়ে ৮৮ লাখ ৮৬ হাজার ১৩৪ টাকা অর্থবরাদ্দ দেয়া হয়। এ অর্থের বিপরীতে ১২৫ জন মুক্তিযোদ্ধার প্রত্যেককে বিশ হাজার টাকার বিপরীতে সোলার প্যানেল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যার পরিমাণ ২৫ লাখ টাকা।
ঘাটাইল মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ড কাউন্সিলের কমান্ডার তোফাজ্জল হোসেন জানান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে তাকে ১২৫ জন মুক্তিযোদ্ধার তালিকা তৈরি করে দিতে বলা হয়। সে মোতাবেক প্রতিটি ইউনিয়ন ইউনিটের আহ্বায়কদের এ তালিকা তৈরির দায়িত্ব দেয়া হয়। তারাই এ তালিকা প্রদান করেছেন।
তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, তালিকায় ডেপুটি কমান্ডার এনএম শাহনেওয়াজ, ঘাটাইল জিবিজি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ শামসুল আলম মনি, ঘাটাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র হাসান আলী মিয়া আবদুল বাছেদ করিম, মোয়াজ্জেম মাস্টার, ছাত্তার মিয়া, কমান্ডার হাবিবুর রহমানের নাম রয়েছে। তালিকায় বিত্তবানদের নাম থাকার কথা স্বীকার করে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার তোফাজ্জল হোসেন বলেন, অস্বচ্ছল বলতে কিছু নেই। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবেই তাদের নাম তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
এই তালিকার অধিকাংশই বিত্তশালীদের নাম রয়েছে বলে জানান স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। ফলে দলের মধ্যে এ নিয়ে সমালোচনা রয়েছে। ঘাটাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম লেবু বলেন, এ তালিকা সঠিক হয়নি। দুস্থ মুক্তিযোদ্ধারাই এটি প্রাপ্য। এখানে স্বচ্ছলরাই বেশি সুবিধা নিচ্ছেন। এজন্য দলীয়ভাবে কারও সঙ্গে কোন পরামর্শ করা হয়নি বলে জানান তিনি। অর্থনৈতিক সুবিধা নিয়ে এ তালিকা তৈরি করা হয়ে থাকতে পারে বলেও তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
মুক্তিযোদ্ধা এমদাদুল হক খান হুমায়ুন ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় স্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকা দেখে আমি নিজের নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছি। তালিকার ১২৫ জন মুক্তিযোদ্ধার মধ্যে অর্ধেকই স্বচ্ছল। কমান্ডার নিজেও এটি নিয়েছেন। তাই আমার নাম প্রত্যাহার করেছি।
মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার শাহনেওয়াজ জানান, কমান্ডার মহোদয় তালিকা করার সময় আমাদের সঙ্গে সম্বন্বয় করেননি। আমরা জানি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবেই আমাদের নাম তালিকাভুক্ত হয়েছে। অস্বচ্ছল মুক্তি যোদ্ধা হিসেবে সোলার বরাদ্দ নেয়ার প্রশ্নই ওঠে না।
ঘাটাইল উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. রুহুল আমিন জানান, তালিাকা প্রস্তুতের সময় আমি অর্জিত ছুটিতে ছিলাম। তাই এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না।
উপজেলা চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম খান সামু বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্যের অনুকূলে বরাদ্দকৃত টিআর প্রকল্পের সোলার প্যানেল নির্মাণের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ এমপির অনুপস্থিতিতে তালিকা তৈরি যাচাই-বাছাই সব কাজই প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিরাই করেছেন। এ বিষয়ে আমাকে অবগত করা হয়নি। তাই বিষয়টি সম্পর্কে আমি কিছু জানি না।
ঘাটাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আছমা আরা বেগম জানান, অর্থবরাদ্দের নীতিমালায় মুক্তিযোদ্ধা পরিবার, দুস্থ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু ঘাটাইলে এগারশ’র উপরে মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন। তাই অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের অগ্রাধিকারভিত্তিতে সোলার দেয়ার জন্য উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারকে তালিকা তৈরি করতে বলা হয়েছিল। এখানে কে অস্বচ্ছল আর কে স্বচ্ছল তা তিনিই ভাল বলতে পারবেন।
তালিকার ওপরে ‘অস্বচ্ছল’ শব্দটি পরিষ্কার লেখা রয়েছে। সেখানে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার স্বাক্ষর করেছেন। অ্যাপ্রোভালেও অস্বচ্ছল লেখা আছে। তার পরও যদি স্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধার নাম এখানে দেয়া হয়ে থাকে তাহলে তিনি (কমান্ডার) এ জন্য দায়বদ্ধ থাকবেন।
মন্তব্য চালু নেই