দুর্ভাগ্য নাকি ব্যর্থতা?

যারা গতকাল খেলা দেখেছেন, নিশ্চিত করে বলা যায়, ম্যাচ শেষে তাদের সবার বুকটা ভার হয়ে গিয়েছিল। যদি ভার না হয়, তবে প্রমাণ হবে আপনি পেশাদার সমর্থক। নির্ধারিত সময় শেষে গ্যালারি তো বটেই, গতকাল বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের প্রেসবক্সেও নেমে এসেছিল গভীর বিষাদ। বাংলাদেশি সাংবাদিকদের অনেকেরই কথা বলার শক্তি ছিল না!

ম্যাচের অন্তিম সময়ে বাংলাদেশিদের হৃদয় ভেঙে দেন মোহাম্মদ ফিজাত। এটাকে অনেকেই স্রেফ দুর্ভাগ্য বলে কপাল চাপড়াচ্ছেন। অনেকে আবার কিছুটা ব্যর্থতাও বলছেন।

এদিন ম্যাচের শুরু থেকে বাংলাদেশ অনেকটা অগোছালো ফুটবল খেলতে থাকে। ভুল পাসের সংখ্যা ছিল চোখে পড়ার মতো। অন্যদিকে মালয়েশিয়া নিজেদের গুছিয়ে ধীরে ধীরে আক্রমণ গড়ে তোলে। ফল আসে হাতে নাতে। প্রথমার্ধে তারা ২-০ গোলে এগিয়ে যায়।

মালয়েশিয়া প্রথম গোল পেয়েছে ফ্রি-কিক থেকে। বক্সের খানিকটা বাইরে থেকে ফ্রি-কিক নেয় মালয়েশিয়া। এমন গুরুত্বপূর্ণ যায়গায় ফ্রি -কিক হলে ‘মানবদেয়াল’ হতে হয় দৃঢ়। কী মনে করে বাংলাদেশের মাত্র দুইজন নির্ধারিত দূরত্বে গার্ডে ছিলেন। প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়ের কৃতিত্ব এখানে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। বাঁকানো ফ্রি-কিক যেভাবে গোলপোস্টের কোণা দিয়ে প্রবেশ করেছে, তাতে তাকে বাহবা দিতেই হয়। কিন্তু প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়কে এমন নান্দনিক একটা কিক নিতে দেয়ার আগে তাকে কিছুটা বিচলিত করা যেত। অর্থাৎ ‘মানবদেয়ালে’ খেলোয়াড় বাড়ানো যেত।

প্রথম গোল হজম করার পর এক প্রকার ভড়কে যায় বাংলাদেশ। কিছুক্ষণের জন্য খেই হারিয়ে ফেলে স্বাগতিকরা। এলোমেলো রক্ষণের সুযোগ নেন অতিথিরা। অনেকটা ব্রাজিল-জার্মানির সেই ‘৭ গোল খাওয়া’ ম্যাচের মতো। পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছিল অমন কোনো ঘটনা আজ বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ঘটতে যাচ্ছে।

কিন্তু পরিস্থিতি পাল্টে যায় দ্বিতীয়ার্ধে। যেন নতুন এক বাংলাদেশ। দ্বিতীয়ার্ধের এমন বাংলাদেশকে এ যাবতকালে দেখা গেছে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। কয়েক মিনিটের মধ্যে দুই গোল শোধ দিয়ে দেন এমিলিরা। ডেড বল হলেই মনে হচ্ছিল গোল হয়ে যাবে। বিশেষ করে গোলপোস্টের কাছাকাছি সীমানায় ‘থ্রয়িং’ হলেই কেঁপে উঠছিল মালয়েশিয়া। লম্বা থ্র’র ভয় জেঁকে বসেছিল তাদের মনে।

এভাবে অতিথিদের সীমানায় মাঝমাঠ থেকে একের পর এক বল পাস দিতে থাকেন মামুনুল এবং জামাল ভুঁইয়া। দিশেহারা হয়ে পড়ে মালয়েশিয়া। হঠাৎ একটা ভুলে শেষ হয়ে যায় সব। ৯৩ মিনিটের মাথায় কর্নার থেকে দুর্দান্ত হেডে গোল করেন ফিজাত। গোলরক্ষক সোহেল লাফিয়ে উঠেও তারা মাথার কাছে হাত নিয়ে যেতে ব্যর্থ হন।

ম্যাচ শেষে অন্য সবার মতো সোহেলও মর্মাহত ছিলেন। ম্যাচে কয়েকটি দারুণ সেভ করলেও শেষ মুহূর্তে দুর্ভাগ্যের পেছনে তার কিছুটা দায় আছে। ড্রেসিংরুমে যেয়ে সোহেল বলেন, ওই কর্নারটি ওভাবে বেঁকে আসবে তা তিনি ভাবতে পারেননি। কর্নার সাধারণত সরাসরি আসে। কিন্তু ওই শটটি ডি-বক্সের ভেতর একটু ঘুরে আসে। তাই পোস্ট ছেড়ে বেরোতে তার ২ থেকে ৩ সেকেন্ড দেরি হয়ে যায়!



মন্তব্য চালু নেই