দুই পা নেই, তবু ঘোরাচ্ছেন জীবনের চাকা

স্ত্রী-সন্তান নিয়ে সুখেই দিন কাটছিল রিকশাচালক বাবুল প্রামাণিকের। সড়ক দুর্ঘটনার পর হারালেন দুই পা। রোজগারের পথ বন্ধ। প্রতিবন্ধী হওয়ার মানসিক যন্ত্রণা আর তীব্র অভাব-অনটনে চারপাশে কেবলই হতাশা। তবে মনোবল হারাননি বাবুল। সুস্থ হয়ে আবারও জীবিকার জন্য পথে নেমেছেন। এবার তাঁর সম্বল ব্যাটারিচালিত ভ্যান। এখন নিজের আয়ে চলছে তাঁর সংসার; ঘুরছে জীবনের চাকা।

বাবুল প্রামাণিকের (৪৫) বাড়ি পাবনা সদর উপজেলার মালিগাছা ইউনিয়নের ধরবিলা গ্রামের খন্দকার পাড়ায়। তাঁর ছেলে স্থানীয় একটি কলেজে পড়ে, সামনে এইচএসসি পরীক্ষা দেবে। বড় মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন, এক মেয়ে অষ্টম শ্রেণি ও ছোট মেয়ে প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। ১২ জুন ধরবিলা গ্রামের রাস্তায় চোখে পড়ল বাবুল প্রামাণিকের ভ্যান। ভ্যানভর্তি যাত্রী নিয়ে ছুটছেন। স্বাভাবিক গতিতে ভ্যান চালিয়ে তিনি গন্তব্যে পৌঁছে দিলেন যাত্রীদের।

কথা হয় বাবুল প্রামাণিকের সঙ্গে। তিনি শোনান তাঁর জীবনের নানা গল্প। পৈতৃকভাবে জমিজমা নেই। সংসারে স্ত্রী, এক ছেলে ও তিন মেয়ে। অন্যের জমিতে বাড়ি করে বসবাস করেন। ইচ্ছে ছিল ছেলেমেয়েদের পড়ালেখা শেখাবেন। আর নিজের জমিতে একটি বাড়ি বানাবেন। ভ্যান চালিয়ে ভালোই রোজগার হচ্ছিল। সংসার চালানোর পাশাপাশি কিছু টাকাপয়সাও জমছিল। কিন্তু হঠাৎ করে সব এলোমেলো হয়ে গেল। ২০০১ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় বাঁ পায়ে আঘাত পান তিনি। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ক্ষত হয়ে কাটা পড়ল পা’টি। সুস্থ হয়ে এক পা দিয়ে আবারও ভ্যানগাড়ি চালাতে শুরু করলেন। কিছুদিন ভালোই চলল। এরপর আবার ক্ষত দেখা দিল ডান পায়ে। ২০০৮ সালে ডান পা’টিও কাটা পড়ল। পুরোপুরি কর্মহীন হয়ে পড়লেন তিনি।

বাবুল প্রামাণিক সেই সময়ের স্মৃতিচারণা করে বলেন, ‘দুই পা হারানোর পর অসহায় হয়ে পড়ি। শারীরিক ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলাম। ভেবেছিলাম ভিক্ষা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। পরে মন শক্ত করে ইঞ্জিনচালিত ভ্যান চালানোর সিদ্ধান্ত নিই। প্রায় পাঁচ বছর পর জীবিকার প্রয়োজনে আবারও রাস্তায় নামি।’

বাবুল প্রামাণিকের স্ত্রী আলেয়া বেগম বলেন, তিনি যখন অসুস্থ ছিলেন, তখন অনেক দেনা করেছেন। দেনা করেই রিকশাভ্যানটি কেনা হয়েছে। একজনের আয়ে কোনোরকমে সংসার চলছে। ছেলেটাও রোজগারের চেষ্টা করছে।



মন্তব্য চালু নেই