দীর্ঘস্থায়ী দাম্পত্য জীবনের গোপন রহস্য

বর্তমান প্রাযুক্তিক উৎকর্ষতার সময়ে নারী-পুরুষের সম্পর্ক নিয়ে চলছে নানান জটিলতা। এক পরিসংখ্যানে জানা যায় বিশ্বে বিবাহ বিচ্ছেদের হার আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নির্ভর সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই জটিলতাগুলো বেশি বলা হচ্ছে। তারপরেও অর্থনৈতিক, সামাজিক, নৈতিক ইত্যাদিক কারণে বিবাহ নামক বন্ধনটি আজকাল অনেকটাই পলকা হয়ে গেছে। তবু, বিয়ে মানে যে শুধু দুইজন মানুষের সম্পর্ক তা নয়। বিয়ের মাধ্যমে একটি পরিবারের সঙ্গে আরেকটি পরিবারের মেলবন্ধন রচিত হয়, পাশাপাশি সামাজিক সম্পর্কের দৃঢ়তা বাড়ে। পাঠকদের জন্য দীর্ঘমেয়াদী বৈবাহিক সম্পর্কের সাতটি গোপন রহস্য তুলে ধরা হলো।

পারস্পরিক যোগাযোগ
স্বামী-স্ত্রী দুজনের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ না থাকলে সবচেয়ে বেশি ভুল বোঝাবুঝির জন্ম হয়। আর এধরনের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময়ই তৃতীয় পক্ষ প্রবেশ করে দুজনের সম্পর্কের মাঝে। বিবাহ পরবর্তী দুটি মানুষের মাঝে দিনে অন্তত ১৫ মিনিট একান্ত সময় কাটালে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। আমাদের প্রত্যাহিক জীবনে যে পরিমান ব্যস্ততা বাড়ছে সেই অনুযায়ী আমরা আমাদের আপনজনদের সময় দিতে পারছি না। তারপরেও হাজারো ব্যস্ততার ভিড়ে প্রিয় মানুষটির জন্য ১৫ মিনিট সময় বের করাই যায়।

সম্মান ও মর্যাদা
ভালোবাসা সব সময়ই যে সুখকর অনুভূতি সমৃদ্ধ গল্পের জন্ম দেয়, তা নয়। ভালোবাসার উল্টো পিঠে থাকে অভিমান-রাগ-ক্ষোভ এবং ঘৃণা। একে অপরের কাছ থেকে পর্যাপ্ত সম্মান এবং মর্যাদা না পেলেই মনের গভীরে অভিমানের জন্ম নেয়। আর এই অভিমানের পাহাড় জমতে জমতে একসময় ঘৃণার সঞ্চার হয় মানব মনে। আপনি হয়তো আপনার সঙ্গীকে বিয়েই করেছেন, কিন্তু তারমানে এই নয় যে তিনি আপনার সম্পত্তি। প্রিয়জনের কাজ, ভাবনা এবং আগ্রহকে সম্মান দিতে হয় সম্পর্ক দীর্ঘমেয়াদী করার ক্ষেত্রে। পরিবারের অন্যান্য সদস্য কিংবা বন্ধু-বান্ধবের সামনে কখনও প্রিয়জনকে নিয়ন্ত্রন করার চেষ্টা করা উচিৎ নয়। এতে সম্পর্কে দিনে দিনে খারাপের দিকে যায়।

মিটমাটের মানসিকতা
আপোষ শব্দটির সঙ্গে আপনার আপত্তি থাকতেই পারে। আপনি ভাবতেই পারেন যে কেন আপনি সংসারে আপোষ করতে যাবেন, সংসার তো আর ক্যারিয়ার নয়। ক্যারিয়ারে আপোষ চলে কিন্তু সংসারে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেককিছু মিটমাট করে নিতে হয়। সংসারে যেকোনো সময় মনোমালিন্য কিংবা বিভিন্ন ঝামেলা তৈরি হতে পারে। কিন্তু সমস্যা এড়িয়ে গিয়ে স্বাভাবিক জীবন বজায় রাখতে চাইলে তাতে সংসার নামক প্রতিষ্ঠানের গোড়ায় সমস্যা রয়ে যায়। তাই সমস্যা সমাধানে মিটমাট করে নেয়ার মানসিকতা তৈরি করতে হয়।

অর্থনৈতিক স্বচ্ছতা
কথায় আছে, যদি হও সুজন তবে তেতুল পাতায় নয়জন। অর্থাৎ মনের মিলই মূল কথা। স্বামী-স্ত্রী মধ্যে যদি অর্থনৈতিক স্বচ্ছতা থাকে তবে সম্পর্ক অনেক সহজ হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে অর্থনৈতিক অবস্থা বিশেষ কোন প্রভাব ফেলে না। অনেক সময় দেখা যায় স্বামী নিজের সমস্যার কারণে তার মাসিক উপার্জনের পরিমান স্ত্রীকে জানাচ্ছেন না। এতে অনেক সময় স্ত্রী স্বামীর অর্থনৈতিক অবস্থা বুঝতে না পেরে একের পর এক আবদার করছে। আর স্বামী সেই আবদার মেটাতে অফিস কিংবা বাইরে অর্থ উপার্জনে বাড়তি সময় দেয়ার কথা ভাবছেন। অথচ স্বামী একবার যদি ভেবে দেখতেন যে তিনি যদি স্ত্রীকে তার অর্থনৈতিক অবস্থার সঠিক বর্ননা দিতেন তাহলে স্ত্রী সেই অনুযায়ী দাবি উত্থাপন করতো। তাই স্বচ্চতা সবার আগে প্রয়োজন।

পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক বৃদ্ধি
বিয়ে করার মানে এই নয় যে স্ত্রী বা স্বামীকে নিয়ে একা সংসার করা। বরঞ্চ বিয়ে করার মানে আরও অধিক মানুষের সঙ্গে নিজের সুখ-দুঃখ-অবেগ-ভালোবাসা ভাগাভাগি করে নেয়া। তাই বিয়ের সঙ্গে সঙ্গে দুই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সহযোগিতাপূর্ন সম্পর্ক রচনা করা একান্ত কর্তব্য। কারণ সংসারের আগামী প্রজন্ম যদি পরিবারে কলহ দেখতে পায় তাহলে তাদের মানসিকতায় চাপ পরে। আত্মীয় স্বজন সবাইকে নিয়ে বৃহত পরিবারের স্বপ্নটা বাচিয়ে রাখুন। ভুলে যাবেন না, বর্তমান জামানা পুঁজিবাদের সময়।

প্রেমকে বাঁচিয়ে রাখুন
প্রায়শই দেখা যায়, বিয়ের পর নর-নারীর মধ্যে আগেকার সেই প্রেমময় সম্পর্ক বিরাজ করে না। প্রেমময় সম্পর্কের জায়গায় কথায় কথায় খিটমটি লেগেই থাকে। এর একটাই কারণ। আর তা হলো, স্বামী-স্ত্রী দুজনের মধ্যকার প্রেমময় আবেগ কমে যাওয়া। দীর্ঘদিন একসঙ্গে থাকলে এরকম হওয়াটা স্বাভাবিক। তাই মাঝে মাঝে সময় পেলে একটু দূরে কোথাও নিরিবিলি ঘুরে আসা ভালো। বিশেষত সন্তান হয়ে যাওয়ার পর বছরে অন্তত একবার স্বামী-স্ত্রীর কোথাও ঘুরতে যাওয়া উচিৎ। মনে রাখবেন, ভালোবাসার জন্য মাত্র একটা জীবনই আপনার পাওনা।



মন্তব্য চালু নেই