দীর্ঘদিন পর কোয়েলের সাথে সুপার হিট জিৎ

বাংলা সিনেমায় জিৎ মানেই সুপার সুপার হিট। আর সাথে যদি থাকে সেই হিট জুটি৷ অর্থাৎ জিৎ ‍-কোয়েল৷ আর এর সঙ্গে যোগ হয়েছে পৃথিবীর অন্যতম সর্বপ্রাচীন শহর বেনারসের নস্টালজিয়া৷ চল্লিশ ডিগ্রির বাধা সত্ত্বেও ‘হার্ডওয়ার্ক’-এর ব্রত৷ আর শ্যুটিং স্পটে সেই ফ্যানেদের হুড়োহুড়ি৷

সহজ, কিন্তু সেরা! : প্রেমের কাহিনি মানেই এক যে আছে নায়ক৷ আর আছে তার নায়িকা৷ শুধু নামগুলো যায় পালটে! যে-কোনও ইন্ডাস্ট্রিতেই হাতে গোনা যায় প্রথম সারির নায়ক-নায়িকাদের সংখ্যা৷ ঠোঁটস্থ থাকে নাম৷ তাদের মধ্যেই পারমুটেশন-কম্বিনেশনে ছবির প্রযোজক-পরিচালকরা বাছেন কোনও নির্দিষ্ট ছবির জন্য নায়ক-নায়িকা৷ কিন্তু কিছু কিছু প্রেমের কাহিনি হয় এমনই, যেখানে কোনও পারমুটেশন-কম্বিনেশন চলে না…সেখানে ছবির নায়ক হতে পারেন একমাত্র জিৎ৷

আর জিতের পাশে যে নামটি বাধ্যতামূলক সেটি কোয়েল মল্লিক৷ ট্যুইটার হ্যাশট্যাগ ‘জিকো’! বেনারস৷ পড়ন্ত বিকেল, গঙ্গারঘাট ঘেঁসা চেতসিং রাজবাড়ি৷ সেই লোকেশনেই উপস্থিত জিৎ আর কোয়েল৷ ভেঙ্কটেশ ফিল্মস আর সুরিন্দর ফিল্মস-এর যৌথ প্রযোজনায় তাদের নতুন ছবির একটি রোম্যান্টিক গানের শ্যুটিংয়ে৷ সাধারণত একজন নায়ক আর একজন নায়িকাকে নিয়ে ছবি তোলার জন্য হাতড়াতে হয় প্রপ! কিন্তু এইদিন আয়োজনটা ছিলো বড্ড সহজ৷ যেখানে প্রপ নিষ্প্রোয়জন…জিৎ এসে দাঁড়ালেন৷ কোয়েলকে নিজের কাছে টেনে নিলেন…এতোটুকুই৷ আর সেটাই সেরা!

জিকো + জিৎ গাঙ্গুলী + রাজা চন্দ + বাবা যাদব

এই মুহূর্তে ওপার বাংলা বাণিজ্যিক ছবির সবচেয়ে বড়ো বাজি কি এটাই? যখন বেশ কিছু বাংলা বাণিজ্যিক ছবি বক্স অফিসে তেমনভাবে সাড়া ফেলতে পারেনি? রাজা চন্দ প্রশ্ন শুনে বলছেন, ‘আমার ছবি কিন্তু চলেছে৷ ‘বচ্চন’৷ টলিউডে অনেকের কাছেই ইদানীং শুনছি হিটমেশিন ‘রাজ’-এর সঙ্গে নাকি একটা আ-কার জুড়ে গিয়েছে৷

‘রাজ থেকে রাজা? পরিচালক বলছেন, ‘দেখুন কারও সঙ্গে আমার কোনও প্রতিযোগিতা নেই৷ রাজও (চক্রবর্তী) সুপারডুপারহিট ছবি দিয়েছেন৷ কিন্তু নিজের ব্যাপারে একটাই কথা বলতে পারি, আমি সাফল্য ছাড়া কিছু বুঝি না! তাই আমার ছবিতে এন্টারটেইনমেন্টের জন্য গ্লস থাকে৷ কোনও এক্সপেরিমেন্ট থাকে না! যাতে দর্শক হলে আসেন৷ আর যে মনোরঞ্জনের জন্য হলে আসেন, সেটা নিয়ে ফিরতে পারেন’, বলছেন রাজা৷

দেব-কোয়েল নাকি জিৎ-কোয়েল, জুটি হিসেবে কে এগিয়ে? প্রশ্ন শুনে রাজা বলছেন, ‘দেব-কোয়েল ফ্ল্যামবয়েন্ট, অন্যরকম৷ কিন্তু জিৎ ‍-কোয়েল স্ট্রং জুটি৷ ওদের মধ্যে যে সিরিয়াস ব্যাপারটা আছে, সেটা বড়পর্দায় অদ্ভুত সুন্দরভাবে ধরা দেবে, শ্যুটিং করতে-করতে তেমনই মনে হচ্ছে৷’

যে গানের শ্যুটে বেনারসে পুরো ইউনিট সেই গানের প্রথম দুই লাইন, ‘নাম জানিনা তোর, রাত জানিনা ভোর…’ সঙ্গীত পরিচালক জিৎ গাঙ্গুলী কাছ থেকে রাজা চন্দর হোয়াটসঅ্যাপে পৌঁছলো সেই গান৷ কোরিওগ্রাফার বাবা যাদব এতোটাই আত্মবিশ্বাসী শ্যুটিংয়ের ফাঁকে জমিয়ে ক্রিকেট খেলছেন বেনারসের ঘাটে৷ ইউনিটের একজন মুখ ফসকে, রাজা চন্দকে ‘রাজদা’ বলে ডেকে ওঠায় বাবা যাদব হাসছেনও হইহই করে!

কিছুটা শ্যুটিং দারভাঙা ঘাটে৷ কিছুটা শ্যুটিং চেতসিং ঘাটের রাজবাড়িতে৷ খানিকটা অংশ আবার নৌকোয়৷ জিত্‍ উঠলেন এক নৌকায়৷ পাশের বজরার ছাদ থেকে তাকে মনিটরে দেখলেন রাজা, বাবা আর কোয়েল৷ সেই শ্যুটিং শেষে রাজা বলছেন, ‘নিজেকে কেমন মগনলাল মেঘরাজ লাগছে না?’ চেতসিং ঘাটে আবার উপস্থিত বিরানব্বই বছর বয়সের এক সাধু৷

তার কথাতেই জানা গেলো, চেতসিং রাজার তৈরি এই দালানেই বাইজি নাচ হতো৷ রাজবংশের ওপর অভিশাপও এসে পড়ে পুত্রসন্তান না জন্মানোর! শেষমেশ তিনি বললেন, ‘সন্ধ্যাবেলা এইখানে এখনও ঘুঙুরের শব্দ শোনা যায়’…পুরো বর্ণনা শুনে কোয়েল বলছেন, ‘দেখুন যে যাই বলুক না কেন, আমার যেমন দেবতায় বিশ্বাস, তেমনই ভূত যে নেই, এমনটাও আমি হলপ করে বলতে পারছি না!’

আর ভবিষ্যৎ? জিৎ ‍-কোয়েল জুটি ফিরছেন, তাই এক্সপেকটেশন তো বেশি! কোয়েল বলছেন, ‘সেটা আমিও জানি৷ আর এই ছবিটা দর্শকদের এন্টারটেইন করার জন্যই তৈরি হচ্ছে৷ যেমন সালমান খানের ‘দাবাং’৷ (চোখমুখ দেখে বোঝা গেল সালমান খানের ছবি তার বেশ পছন্দের) হয়তো কেউ সারাদিন কাজের পর বেশ ক্লান্ত, নাইটক্লাব গেলো৷ একেবারে রিফ্রেশড হয়ে ফিরলো৷ সেরকমই এই ছবিও দর্শক উপভোগ করবেন পুরোপুরি৷’

জিৎও একই প্রসঙ্গে বলছিলেন, ‘এটাই বলবো, আমরা যেন দর্শকের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারি৷ যখন কোনও অভিনেতা দশ বছরের বেশি কাজ করেন তখনই এটা সম্ভব যে তিনটে জেনারেশনেই তার নিজস্ব দর্শক রয়েছেন৷ বলিউডে শাহরুখ, অক্ষয়ের মতো তারকাদের ক্ষেত্রেও এটা সত্যি৷ এখন দেখা যাক, আমার এই ছবির ক্ষেত্রেও সেটা সত্যি হয় কিনা৷’

এই কথাগুলো যখন বলছিলেন, তখনই বোঝা গেলো, এই ছবি করার সিদ্ধান্ত থেকে প্রেমোশন, সব ব্যাপারেই জিৎ সাজিয়ে ফেলেছেন তার স্ট্র্যাটেজি৷ সেইমতো এখনই ভাঙছেন না বেশি কিছু৷ ভেঙ্কটেশ ফিল্মস-এর সঙ্গেও তো বেশ কিছুদিন পর আবার কাজ করছেন? প্রশ্ন শুনে জিৎ বলছেন, ‘ভালো লাগছে৷ এই ব্যাপারে বাকি কথা ছবির মুক্তির আগে হোক?’

আর কোয়েল? তার ছবিও তো ফ্লপ হয়েছে সাম্প্রতিক সময়েই? কোয়েল বলছেন, ‘আমার কাছে এটা সাপলুডোর মতো৷ কখনও তুমি সিঁড়ি বেয়ে অনেকটা ওপরে উঠে যাবে৷ আবার কখনও কিছুটা নেমেও আসতে হবে৷ আমার ছবি যখন ফ্লপ হয়, আমি সেই ভাবনাকে মাথার মধ্যে বেশিক্ষণ জায়গা দিই না৷ তেমনই কোনও ছবি হিট হলেও আনন্দে পাগল হয়ে যাই না! আমার মন্ত্রটা হলো, হার্ডওয়ার্ক, হার্ডওয়ার্ক, হার্ডওয়ার্ক!’ মাথার ওপর সূর্য ভয়ঙ্কর৷ ডিগ্রির কাঁটা চল্লিশ থেকে পঞ্চাশের মধ্যে ঘুরছে৷ তারই মধ্যে চলে হার্ডওয়ার্ক…

তবে এসব করার সুযোগ অল্পস্বল্প…কারণ শহর থেকে এতো দূরেও জিৎ আর কোয়েলের কাছে ক্রমাগত আসতে থাকে অটোগ্রাফের আবদার৷ ছবি তোলার আবদার৷ সেলফির আবদার…’জিকো’ জিন্দাবাদ কথাটা সেই ফ্যানদের মুখ দিয়ে না বেরোলেও মুখ পড়লে বোঝা যায়!



মন্তব্য চালু নেই