দালান ধসের পাঁচ কারণ
কয়েকদিন আগেই কেনিয়ার রাজধানী নাইরুবিতে একটি দালান ধসে কমপক্ষে ৩৩জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। শুধু কেনিয়াই নয়, একটু হিসেব করলে দেখা যাবে প্রতিবছরই বিভিন্ন দেশে এই ভবন ধসের ঘটনা অব্যাহত ভাবে লেগেই আছে। কয়েক বছর আগে প্রাচ্যের দেশ বাংলাদেশে রানা প্লাজা নামে এক দালান ধসলে প্রায় সহস্রাধিক মানুষ নিহত হয়েছিল। বিভিন্ন দেশি-বিদেশি মিডিয়ায় ভবন ধসের খবর গুরুত্বের সঙ্গে ফলাও করে প্রকাশ করা হলেও, এখন পর্যন্ত নগর সভ্যতার এই আশু বিপর্যয় নিয়ে কোনো বক্তব্য প্রচার করা হচ্ছে না। কারণ সব দালানই একটা সময় মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যাবে এবং স্বাভাবিক পরিণতি হিসেবেই ধসে যেতে পারে। সেসময় কি ব্যবস্থা নেয়া হবে তা নিয়ে নেই কোনো চিন্তা ভাবনা। তবু বিজ্ঞানীরা মোট পাঁচটি কারণ দাড় করিয়েছেন, যেগুলোর কারণে দালান ধসে যেতে পারে যেকোনো সময়।
দালানের ফাউন্ডেশন দুর্বলতা
বহুতল ভবন বানাতে গেলে সবচেয়ে গুরুত্বের সঙ্গে ফাউন্ডেশন করতে হয়। একটা দালান দাড় করাতে যা খরচ, শুধু ফাউন্ডেশন করতেই অনেক সময় তার সমান খরচ হয়ে যায়। কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভবন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো ফাউন্ডেশন নির্মানে কম অর্থ ব্যয় করে থাকে। পাশাপাশি কোন মাটির উপর ভবনটির ফাউন্ডেশন দেয়া হচ্ছে সেটাও গুরুত্বের সঙ্গে খেয়াল রাখতে হবে। কারণ সব মাটিতেই ফাউন্ডেশন ভালো হয় না।
বিশ্বের কিছু শহর রয়েছে যেখানে দালান তৈরি করতে গেলে ফাউন্ডেশনেই অনেক অর্থ ব্যয় করতে হয় মাটির দুর্বলতার কারণে। অনেকেই মনে করেন, মাটি ভালো হলে ফাউন্ডেশন অতটা শক্তপোক্ত না দিলেও হয়। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, এটা মস্ত বড় ভুল। কারণ যে বিশাল চাপটি ওই ফাউন্ডেশনটিকে নিতে হবে, তাতে যদি কোনো ত্রুটি থাকে তাহলে ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে যেতে পারে।
দালান তৈরিতে দুর্বল উপকরণের ব্যবহার
বহুতল ভবন নির্মানে ব্যবহৃত উপকরণ যদি ভালো মানের না হয় তাহলে কয়েকগুন ঝুঁকি বেড়ে যায় ভবন ধসের। আফ্রিকান অর্গানাইজেশন ফর স্ট্যান্ডার্ডরাইজেশনের মুখপাত্র হারমং সেঙ্গিমানার মতে, আফ্রিকায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দালান নির্মানে বাজে উপকরণ ব্যবহার করা হয়। প্রায়শই দেখা যায়, যেখানে ইস্পাত দেবার কথা, সেখানে সস্তা লোহার পাত ব্যবহার করা হচ্ছে। গত এপ্রিলে যখন উগান্ডার রাজধানী কাম্পালায় একটি ভবন ধসে পরে, পরবর্তীতে পরীক্ষা করে দেখা যায় ওই দালানটি নির্মানে উপযুক্ত উপকরণ ব্যবহার করা হয়নি।
দক্ষ শ্রমিকের অভাব
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দালান নির্মানে যেসকল শ্রমিক কাজ করে তারা খুব একটা দক্ষ হয় না। কিভাবে সঠিক মিশ্রন দ্বারা কংক্রীট বানাতে হবে এবং সেই মিশ্রন কতটুকু সময়ের মধ্যে ব্যবহার করতে হবে, এসব বিষয় ওই শ্রমিকরা জানে না বললেই বলা যায়। ভবন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো মুনাফার লোভে সস্তা শ্রমিক দিয়ে কাজ করায়, যাদের নেই কোনো দক্ষতা। ঠিক এই কারণেই ২০০৪ সালে উগান্ডার আরও একটি দালান ধসে গিয়েছিল। গবেষকরা এমনটাও দেখেছেন যে, কংক্রীটের মিশ্রনের মধ্যে যে উপাদান থাকার কথা নয়, তা দিয়েও মিশ্রন করা হচ্ছে।
ফাউন্ডেশনে অতিরিক্ত চাপ
দেখা গেছে, যে ফাউন্ডেশন তৈরি করা হয়েছে তার উপর পাঁচতলা দালান তৈরি করা যাবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। অধিকাংশ দালানই নির্মান করা হয় যে কয় তলা উঠানো যাবে তার চেয়ে বেশি তলাবিশিষ্ট। যেমনটা বাংলাদেশের রানা প্লাজা ধসে যাবার পেছনের কারণগুলোর মধ্যে এটিও ছিল অন্যতম। শুধু রানা প্লাজাই নয়, ভারতের আমৃত হাসপাতালটিও ঠিক একই কারণে ধসে গিয়েছিল। পাশাপাশি, যে তলাটি একশ জন মানুষের বসবাসের জন্য উপযুক্ত সেখানে যদি দ্বিগুন মানুষের বসবাস হয়, তাহলে স্বাভাবিক ভাবেই সেই দালানে চাপ পরে।
দালানের স্থায়িত্ব পরীক্ষা হয় না
নির্মানাধীন দালানগুলো ঠিক কতটা চাপ সামলাতে পারে সেজন্য কিছু পরীক্ষার ব্যবস্থা আছে। কিন্তু উন্নত দেশগুলোতেও অনেক সময় এই পরীক্ষা করা হয় না, আর অনুন্নত দেশগুলোর ক্ষেত্রেতো এই পরীক্ষা করার কল্পনাও করা যায় না। যদিও ভবন নির্মান সংক্রান্ত আইনে এই পরীক্ষা করার কথা স্পষ্ট করে বলা আছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দালান নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো অর্থ ব্যয় কমানোর জন্য এই পরীক্ষা করা থেকে বিরত থাকেন।
মন্তব্য চালু নেই