“দানবীয় হাত”! সুস্থতার পথে “হাল্ক” বালক
বিরল ‘দানবীয়’ রোগের কারণে ভারতের আট বছর বয়সী এক বালকের হাত দু’টো হলিউডি সিনেমার কাল্পনিক অতিমানবীয় চরিত্র দানব পুরুষ ‘হাল্ক’ এর মতো বিশাল আকারে গজিয়ে উঠেছে। ছোট্ট দেহে অতো বড় হাত দেখতে সত্যিই খুব ভয়ঙ্কর। হাতগুলো ছেটে ফেলার জন্য তাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের সবচেয়ে নাটকীয় এক অস্ত্রপচারের মধ্যদিয়ে যেতে হচ্ছে।
মোহাম্মদ কলিম নামের ওই বালক পূর্ব ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের একটি গ্রামে তার পরিবারের সঙ্গে বাস করে। জন্ম থেকেই সে এই বিরল রোগ নিয়ে বেড়ে উঠেছে। তার এই রোগের কারণে কলিমকে অনেক গঞ্জনাই সইতে হয়েছে।
পাড়ার শিশুরা ভয়ে তাকে খেলায় নিত না। এমনকি গ্রামের বিদ্যালয়গুলোও তাকে ভর্তি করাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। কারণ তার “দানবীয়” হাত দেখে অন্য শিশুরা ভয় পাবে।
এমনকি পাড়া-প্রতিবেশীদের কুসংস্কারমূলক বিশ্বাসের কারণে তার পরিবারকেও অনেক গঞ্জনা সইতে হয়েছে। প্রতিবেশিদের বিশ্বাস কলিমের এই হাত কোনো অভিশাপের ফল। তারা কলিমের নামকরণ করেছে ‘শয়তানের সন্তান’।
অর্থাভাবে কলিমের পরিবার তার চিকিৎসা করাতে পারছিল না। অসহায় হয়ে তারা তাকে ‘আল্লাহর হাতে’ সোপর্দ করে। তবে গত বছর আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমে কলিমের এই রোগের খবর প্রকাশিত হওয়ার পর দক্ষিণ ভারতের চিকিৎসকরা তার সহায়তায় এগিয়ে আসেন।
গত বছরের শেষদিকে ড. সাবাপাথির সঙ্গে পরিচয় হয় কালামের পরিবারের। ইনি ভারতের একজন বিখ্যাত সার্জন যিনি ক্ষুদ্র অস্ত্রপচারে খুবই দক্ষ। তিনি কম্বিয়াতোরের গঙ্গা হাসপাতালের চিকিৎসক হিসেব কর্মরত আছেন।
ডাক্তাররা স্মরণকালের সবচেয়ে জটিল একটি অস্ত্রপচারের মাধ্যমে প্রথমে কলিমের ডান হাতটির সার্জারি করেন। তাদের সামনে কলিমের হাতের আঙ্গুলগুলোর আকার কমানোর পাশাপাশি তার স্নায়ুগুলো অরক্ষিত রাখার চ্যালেঞ্জও ছিল; যেন সে পূণরায় সেগুলো ব্যবহার করতে পারে।
ড. সাবাপাথি বলেন, ‘আমরা প্রথমে শুধু তার একটি হাতে সার্জারি করার সিদ্ধান্ত নেই। এর মাধ্যমে আমরা আসলে সার্জারির পর কী ফল হয় তা পরীক্ষা করে দেখতে চাই। এছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। অন্যদিকে আমরা ছেলেটির স্নায়ুগুলোও অরক্ষিত রাখতে চাই। কেননা নয়তো সে পরে আর তার হাতগুলো নড়াচড়া করতে পারবে না।’
ওদিকে কলিমের যখন চিকিৎসা চলছিল তার গ্রামের লোকজন তখনও বিশ্বাস করতে পারছিল না যে সে আরোগ্য লাভ করবে। তারা তাকে অভিশপ্ত ও শয়তানের সন্তান হিসেবেই আখ্যায়িত করতে থাকে। এ নিয়ে কলিমের পরিবারকে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে।
কলিমকে সিরিজ অস্ত্রপচারের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। ডাক্তাররা বেশ কয়েকটি অস্ত্রপচার ও ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে কলিমের ডান হাতটিকে স্বাভাবিক করে তোলার চেষ্টা করেন। এখন কলিমের পরিবার তার বাম হাতেও সার্জারির সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তবে গ্রামবাসীরা কুসংস্কারবশত এখনো তাকে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করতে না পারলেও বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কলিম সুস্থ হয়ে ফিরে আসলে তাকে বিদ্যালয়ে ভর্তি করানোর আশ্বাস দিয়েছেন।
মন্তব্য চালু নেই