দলীয় প্রতীকে ভোট: কৌশলী অবস্থানে বিএনপি

নতুন আইন অনুযায়ী দলগুলো এখন জাতীয় নির্বাচনের মতোই মনোনয়ন দিতে পারবে। আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি এবং তার সমমনারা অবশ্য এই আইনি সংস্কারের কঠোর সমালোচনা করছে। তারা বলছে সরকার দুরভিসন্ধি থেকে এই আইন পাল্টানোর উদ্যোগ নিয়েছে। এতে করে দেশে বিভাজন আরও বাড়বে বলে মনে করেন বিএনপির মুখপাত্র আসাদুজ্জামান রিপন।

তাহলে নতুন আইনে স্থানীয় নির্বাচনে বিএনপি কি অংশ নেবে না? এই প্রশ্নের সোজাসাপ্টা জবাব না নিয়ে কৌশলী উত্তর দিচ্ছেন নেতারা। সরকারের সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করলেও দলীয় প্রতীকেই হলে সে নির্বাচনে অংশ নেওয়া বা না নেওয়ার বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো নেতা খোলাসা করে কিছুই বলেননি।

খালেদা জিয়া দেশে ফিরলে সিদ্ধান্ত

এবারও সরকারের উদ্যোগের বিরোধিতা করে শেষ পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচনে আসবে কি না জানতে চাইলে এমাজউদ্দীন আহমদও সরাসরি কিছু বলেননি। তিনি বলেন, ‘দলীয় প্রতীকে স্থানীয় নির্বাচন করার মাধ্যমে সরকার নিজেদের নীলনকশা বাস্তবায়ন করতে চায়। সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা বাস্তবায়ন হলে দেশে বিশৃঙ্খলা হতে পারে।’

বিএনপির একাধিক শীর্ষ নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, লন্ডন থেকে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দেশে ফেরার পরই দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেওয়া বা না নেওয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।

সেক্ষেত্রে স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নিলে দল লাভবান হবে নাকি ক্ষতিগ্রস্ত হবে সে বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরই এ বিষয়ে সুস্পষ্ট ঘোষণা দেওয়া হবে।

দল কী করবে জানতে চাইলে বিএনপির মুখপাত্র আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, ‘বিএনপি নির্বাচনমুখী দল। যৌক্তিক কারণে দু-একটি ব্যতিক্রম ছাড়া দল সব নির্বাচনে অংশ নিয়েছে এবং ভবিষ্যতেও সব নির্বাচনে অংশ নিতে চায়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে প্রধান বাধা হচ্ছে সরকারের আজ্ঞাবহ ও মেরুদ-হীন নির্বাচন কমিশন।

এই কমিশন নিরপেক্ষ নির্বাচন পরিচালনার সামর্থ্য রাখে বলে জনগণ মনে করে না। আর প্রশাসনও নিরপেক্ষ নয়। এর সঙ্গে সরকারের নির্যাতন-নিপীড়ন তো আছেই। তাই এখনই বলা যাবে না আমরা কী করব।’

বিএনপির নানা বিবেচনা

বিএনপির নেতাদের কাছে বেশ কয়েকটি বিবেচনা আছে। সরকারবিরোধী আন্দোলন থেকে সরে এলেও নাশকতার মামলার আসামি হওয়ায় নেতা-কর্মীদের সবাই এখনো এলাকায় ফিরতে পারেনি। দল থেকে নির্দেশনা দেওয়া আছে, তারা যেন ধীরে ধীরে সুযোগ বুঝে আগের জীবনে ফিরে আসে।

এই অবস্থায় দেশে নির্বাচন হলে নেতা-কর্মীদের পক্ষে এলাকায় ফেরা সহজ হতে পারে বলে মনে করছেন নেতাদের কেউ কেউ। আর আগামী ডিসেম্বরে পৌরসভা এবং মার্চে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন হলে কর্মীরা কোনো সুবিধা পাবেন কি না সেটা বিবেচা করছেন নেতারা।

বিএনপির কোনো কোনো নেতা বলছেন, বিএনপি নির্বাচনে না গেলে তা ঠেকানোর মতো শক্তি আছে বলে এখন আর বিশ্বাস করেন না তারা। এই অবস্থায় ভোট বর্জন করলে সরকার একতরফা নির্বাচন করবে আর স্বভাবতই তাদের প্রার্থীরা সহজেই জিতে আসবে। সরকারকে এই সুযোগ দেওয়া উচিত হবে না বলেই মনে করছেন তারা।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘সংবিধানে স্থানীয় নির্বাচনের যে নিয়ম ছিল সেটাকে পাল্টানোর কোনো প্রয়োজন ছিল বলে আমি মনে করি না।

সংবিধান পরিবর্তন করে দলীয়ভাবে নির্বাচন করায় স্থানীয় শিক্ষিত সমাজের লোকজনের এ নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ থাকছে না। দলীয়ভাবে নির্বাচন হলে সে নির্বাচনে যাব কি না সেটা চিন্তা-ভাবনার বিষয়।

নির্বাচন কতটুকু গ্রহণযোগ্য হবে এর উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেব। তবে আমরা নির্বাচনে থাকতে চাই।

বিষয়টি নিয়ে আলাপকালে বিএনপির একজন সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, ‘সরকার সব সময়ই বিএনপিকে চাপে রাখতে কাজ করে। যেমন এর আগে ২০ দলের অবরোধের মধ্যে ঢাকার দুই এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ঘোষণা দেয়।

তাদের ধারণা ছিল বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে না। কিন্তু প্রার্থী দেওয়ার পর ফলাফল হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেওয়ায় শেষ পর্যন্ত তিন সিটি তারা দখলে নিয়ে নেয়। তবে আমাদের ধারণা ছিল সরকার কিছুটা হলেও স্বচ্ছ নির্বাচন করবে। আর এবার যখন বিএনপি দল গোছানোর কাজে ব্যস্ত এই সময়ে নতুন আইন করে দলীয় প্রতীকে স্থানীয় নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে স্পষ্টই বোঝা যায়, বিএনপিকে বিপদে ফেলানোর জন্যই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কারণ এখনো তৃণমূলের অনেক নেতা-কর্মী জেলে। বেশিরভাগ নেতা এখনো ঘরছাড়া।

অন্যদিকে কেন্দ্রের নির্দেশনায় চলছে পুনর্গঠন কার্যক্রম। এর মধ্যে নির্বাচন হলে বিএনপি সুবিধা করতে পারবে না এমনটা ভেবেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে সরকার যা চাইবে, আমরা তা করব কেন।’

সাপ্তাহিক এই সময়-এর সৌজন্যে।



মন্তব্য চালু নেই