দলবলে বিএনপিতে ফিরতে চান এলডিপির অলি
বিএনপির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পেলে বিএনপিতে ফিরে যাবার ইচ্ছা পোষণ করেছেন এলডিপির চেয়ারম্যান ড. কর্নেল (অব) অলি আহমদ বীর বিক্রম। তবে সেই জন্য বিএনপিকেও জুড়ে দিয়েছেন কিছু দাবি।
রোববার সকালে চট্টগ্রাম নগরীর লালদীঘির পাড়ের নিজ বাসায় সদ্য সমাপ্ত পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা জানান।
এলডিপি চেয়ারম্যান বলেন, ‘এলডিপি বিলুপ্ত করে বিএনপিতে যাবার জন্য এখনো সেই রকমের আনুষ্ঠানিক কোনো প্রস্তাব আসেনি। তবে গত গত ৫ আগস্ট রাতে এমাজউদ্দীন আহমদ ও অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন আমার ডিওএইচএসের (রাজধানী) বাসায় এসেছিলেন। এলডিপির যোগদানের বিষয়ে সেখানে আলাপ হয়েছে। তবে উত্তরে বলেছি, এটি শুধু আমার একার বিষয় নয়, রাজনৈতিক দলের বিষয়। তবে এটি সেই পর্যন্তই সীমাবদ্ধ। বিএনপি চেয়ারপারসন কিংবা দলটির মহাসচিব কেউই আমার সাথে এ বিষয়ে কোনো কথা বলেননি। সে কারণে আমিও বলতে পারছি না, আমরা বিএনপিতে একীভূত হচ্ছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘বিএনপি একটি বৃহৎ দল। তারা আমেরিকার মতো বড় দেশ আর আমরা (এলডিপি) ভূটানের মতো ছোট দেশ। সেই হিসেবে আমি বিএনপিতে গিয়ে বিএনপির চেয়ারম্যান হয়ে যাবো সেটি না। এলডিপি দেশের নিবন্ধিত পঞ্চম বৃহত্তম রাজনৈতিক দল। এই দলে সাবেক বেশ কয়েকজন এমপি-মন্ত্রী আছেন। প্রেসিডিয়াম এবং অঙ্গদলগুলোও অত্যন্ত শক্তিশালী। সুতরাং যোগ্যতা অনুযায়ী তাদের মনোনয়ন তথা মূল্যায়নের জন্য আলোচনার প্রয়োজন আছে। আগামী সংসদ নির্বাচনে তাদের মনোনয়নের বিষয়টিও বিবেচনায় রাখতে হবে। সেখানে আমারও একটা সম্মানজনক অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে। আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পেলে তখন সেটি আমাদের দলীয় ফোরামে আলোচনার পর আমরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিব।’
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের ক্ষমতা হস্তান্তরের দুই দিন আগে ২০০৬ সালের ২৬ অক্টোবর বিএনপি চেয়ারপারসন ও বিএনপির সিনিয়র ভাইসে চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ এনে অলি আহমদসহ বিএনপির ৩১ জন সাবেক মন্ত্রী-এমপি দল থেকে বেরিয়ে এলডিপি গঠন করেছিলেন। প্রথম দিকে বিএনপির আরেক দলছুট নেতা সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী বিকল্পধারা গঠন করলে দুই দলই আওয়ামী লীগের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুললেও অল্প দিনের মধ্যেই দূরে সরে যান বি চৌধুরী। একপর্যায়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয় অলি আহমদের নেতৃত্বাধীন এলডিপিরও। বেশ কিছুদিন ধরে দলটি বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরীক হয়ে বিভিন্ন নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে বক্তব্য দেন এলডিপি চেয়ারম্যান। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, নগর বিএনপির সিনিয়র সহ সভাপতি আবু সুফিয়ান, উত্তর জেলা এলডিপির সভাপতি নুরুল আলম তালুকদার, বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট কপিল উদ্দিন, আনোয়ার হোসেন লিপু প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বিএনপি গঠন করার সময় কর্নেল অলি আহমেদ সেনাবাহিনী থেকে চাকরি ছেড়ে রাজনীতিতে যোগ দেন। এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার গঠন করলে তিনি যোগাযোগ মন্ত্রী দায়িত্ব পান। দীর্ঘদিন বিএনপির সঙ্গে যুক্ত থাকার পর জামায়াতের সঙ্গে চারদলীয় ঐক্যজোট গঠনের সময় বেরিয়ে আসেন। ২০০৬ সালের ২৬ অক্টোবর তিনি সাবেক রাষ্ট্রপতি এ.কিউ.এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর সাথে লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি গঠন করেন। সম্প্রতি এলডিপি নেতারা তাদের পূর্বের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ নেতৃতাধীন ১৪ দলীয় ঐক্য জোটের সাথে একত্রে আন্দোলন ও নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছে। অতি সম্প্রতি তিনি এ.কিউ.এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর সাথে মতবিরোধের পর সেখান থেকেও বেরিয়ে আসেন।
মন্তব্য চালু নেই