দমন-পীড়নে বাংলাদেশ সরকারের ক্ষমতা উদ্বেগজনক: যুক্তরাজ্য

বাংলাদেশ সরকারের সাম্প্রতিক কিছু পদক্ষেপের ফলে সুশীল সমাজ, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং সমালোচনাকারী ও ভিন্নমতাবলম্বীদের দমনে সরকারের ক্ষমতা নিয়ে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। ‘মানবাধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিবেদন ২০১৪’ শীর্ষক এক কেসস্টাডি নিয়ে বৃহস্পতিবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে যুক্তরাজ্য সরকার এ কথা বলেছে।

বাংলাদেশ- পলিটিক্যাল ভায়োলেন্স নামক শিরোনামে মানবাধিকার স্টাডিতে যুক্তরাজ্য বলছে, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে ভয়াবহ রকমের সহিংসতা, ভয়ভীতি প্রদর্শন, হরতাল ও সড়ক অবরোধের ঘটনা ঘটে। সাংবিধানিকভাবে বৈধ এই নির্বাচন-প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি এবং তা বর্জন করেছিল বিএনপিসহ ১৮-দলীয় জোট (বর্তমানে ২০-দলীয় জোট)। কারণ তাদের আশঙ্কা ছিল, নির্বাচন স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু হবে না। এই অবস্থায় অর্ধেকের বেশি আসনে নির্বাচন হয়নি এবং আওয়ামী লীগ পর পর দ্বিতীয় মেয়াদে আবার বিজয়ী হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সব ধরনের সহিংসতা ও রাজনৈতিক দলগুলোকে একসঙ্গে বসাতে আমরা সব সময় উৎসাহ দিয়ে আসছি। ব্যারোনেস ওয়ার্সিসহ যুক্তরাজ্যের তিন মন্ত্রীর পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে ব্রিটিশ সরকার বলেছে, গণতান্ত্রিক জবাবদিহি জোরদার এবং পরবর্তী নির্বাচন নিয়ে পারস্পরিক আস্থা বাড়াতে একসঙ্গে কাজ করার জন্য তারা বাংলাদেশের প্রধান দুই দলের প্রতি বারবার আহ্বান জানিয়েছেন।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, নির্বাচনের পর বিএনপি শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিল। যদিও রাজনৈতিক উত্তেজনার ফলে গত বছরের শেষ দিকে ব্যাপকভাবে রাজনৈতিক সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে। তবে ২০১৪ সালে তুলনামূলকভাবে কম অবরোধ ও হরতাল ছিল এবং দেশ মোটামুটি শান্ত ছিল। এর পরও প্রধান বড় দুই দল বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে কোনো রাজনৈতিক সংলাপ হয়নি।

বিভিন্ন এনজিওর প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে যুক্তরাজ্য জানায়, বাংলাদেশের সব নিরাপত্তা বাহিনীর দায়মুক্তির বিষয়টি একটি মারাত্মক সমস্যা আকার ধারণ করছে। নির্বাচনের পর আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর দ্বারা গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বেশ কিছু অভিযোগ আনে এনজিওগুলো। নারায়ণগঞ্জে সাত খুনে র্যা বের সদস্যদের জড়িত থাকার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। বাংলাদেশে যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাৎতের সময় ওয়ার্সি এ সব ঘটনার স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানান।

index

ব্রিটিশ সরকারের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ সরকার বৈদেশিক অনুদান আইন সংশোধনের প্রস্তাব করেছে এবং নতুন সম্প্রচার নীতিমালা করেছে। ডিজিটাল গণমাধ্যমে কেউ কেউ সরকারের সমালোচনা করলেও তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনে তাদের আটক করা হচ্ছে। এতে করে সুশীল সমাজের পরিসর, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং সমালোচনাকারী ও ভিন্নমতাবলম্বীদের দমনে সরকারের ক্ষমতা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা নতুন করে পার্লামেন্টের হাতে নিয়েছে সরকার। এতে করে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা খর্ব হতে পারে।

গত ২২ জুলাই ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠকের কথা উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘নির্বাচন-প্রক্রিয়া নিয়ে আমাদের অসন্তোষের কথা তিনি (ক্যামেরন) জানিয়েছিলেন। তখন গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অংশগ্রহণ এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষিত হয়, এমন একটি মুক্ত সমাজ ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার গুরুত্বের ব্যাপারে দুজনই একমত হয়েছিলেন।



মন্তব্য চালু নেই