থানার ভেতর চলছে মাদক ব্যবসা (দেখুন ভিডিওসহ)
কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে জিআরপি থানার আশেপাশেই চলছে রমরমা মাদক বাণিজ্য। দিন-রাত গাঁজা আর ইয়াবার বেচাকেনা চলে সেখানে। এমনকি লাশ রাখার ঘরেও চলে এসব। মাদক সেবনও করা যায় ওই ঘরেই। কিন্তু থানার লাশ রাখা ঘরে কীভাবে চলছে এ বাণিজ্য? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে বেরিয়ে এলো পুলিশের সরাসরি সম্পৃক্ততার তথ্য। এমনকি জিআরপি থানার ওসি আব্দুল মজিদের ছত্রছায়াতেই এসব চলছে বলে জানালো মাদকসেবী ও বিক্রেতারা।
তবে ওসি বলছেন, জিআরপি থানাধীন এলাকায় রেলেকাটা লাশগুলো সংগ্রহ করতে ডোমদের লাগে। আর এদের ধরে রাখতেই লাশ প্রতি দেড় কেজি করে গাঁজা দিতে হয়। মাঝে মাঝে ফেনসিডিলও দিতে হয়। তা না হলে তারা কাজ করতে চায় না। তবে ইয়াবা সরবরাহের বিষয়টি অস্বীকার করলেন ওসি।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, জিআরপি থানার সীমানার মধ্যে অর্থাৎ সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত এলাকায় ট্রেনে যতো মাদক উদ্ধার হয়, তা চলে আসে এই থানায়। এখান থেকে সেসব মাদক ওসি সরবরাহ করেন ডোম ও স্থানীয় পথশিশুদের। এরা ওই লাশ রাখার ঘরে বসেই অথবা আশপাশে সারাদিন মাদকগুলো বিক্রি করে।
মাদক বিক্রি হয় কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের চারটি স্পটেও। প্রথমটি ওসির চোখের সামনেই। থানায় বসেই এই স্পটটির দেখভাল করেন তিনি- এমনটাই জানালো বিক্রেতারা। এই স্পটে গাঁজা ও ইয়াবা বিক্রি হয়।
দ্বিতীয় স্পটটি ৮ নম্বর প্লাটফর্মে। সেখানে গাঁজার সাথে বিক্রি করা হয় হেরোইন। এই স্পট থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা, গোয়েন্দা কর্মকর্তা এবং সাংবাদিকরাও নিয়মিত মাসোহারা নেয় বলে জানান ওসি আব্দুল মজিদ।
তৃতীয় স্পটটি কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের কন্টেইনার ডিপো। এখানে ফেনসিডিল ও প্যাথেডিন বিক্রি হয়। চতুর্থ স্পটটি রেললাইনের ৫ গজের মধ্যে টিটিপাড়া বস্তিতে। সেখানে বিক্রি হয় গাঁজা, ইয়াবা, বিয়ার ও মদ। এই স্পটটি অন্যগুলোর চেয়ে একটু ভিন্ন। বাড়তি টাকা দিলেই টঙ ঘরগুলোতে বসেই মাদক সেবন করার সুযোগ রয়েছে।
এসব অভিযোগের ব্যাপারে কমলাপুর রেলওয়ে থানার ওসি আব্দুল মজিদের সাথে কথা বলতে গলে তিনি উল্টো প্রশ্ন ছুড়ে দেন। বলেন, ‘আমি একজন ফার্স্টক্লাস অফিসার হয়ে কি মাদকের ব্যবসা করতে পারি?’
তবে তিনি মাদক সরবরাহের কথা স্বীকার করে বলেন, ‘ট্রেনে কাটা পড়া লাশ নিয়ে আসার জন্য আমি ডোমদের দেড় কেজি করে গাঁজা দেই। মাঝে মাঝে ফেনসিডিলও দেই। কিন্তু ইয়াবার বিষয়টি আমার জানা নেই।’
দেড় কেজি গাঁজার দাম অন্তত ৩৫ হাজার টাকা। একটি লাশ কুড়িয়ে আনার বদলে আপনি তাদের এতো টাকার মাদক দেন কীভাবে? প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘তা না হলে তো ডোমরা থাকতে চায় না। ওদের ধরে রাখার জন্য এটুকু করতে হয়!’ আর এসব গাঁজা ও ফেনসিডিল ট্রেনে আসা চোকারবারীদের কাছ থেকেই জব্দ করা হয় বলে জানান ওসি।
তাহলে আদালতে মালখানায় কী জমা দেন? প্রশ্ন করা হলে ওসি বলেন, ‘ওখানে শুধু ইয়াবা দেই। তারপর একজন কোর্ট পুলিশের উপস্থিতিতে ১০০ টাকার কেরাসিন কিনে তা পুড়িয়ে দেয়া হয়।’
ওসির নিজ মুখে এসব বক্তব্য শুনে সন্দেহ আরো তীব্র হলো। এবার সরেজমিনে সেই লাশ রাখার ঘরের পাশে গিয়ে দেখা গেল বড়জোর ষোলো আঠারো বছরের এক ছেলে চেয়ারে বসে ইয়াবা বিক্রি করছে। ২০ পিসের দাম কত জানতে চাইলে বললো, ‘৫ হাজার ৭শ টাকা দিবেন। নতুন জিপার (ইয়াবার প্যাকেট) ভেঙে দিবো।’
এতো ইয়াবা কোথায় পাও? প্রশ্ন করতেই বললো, ‘আপনার অতো জাইনা কাম নাই। ট্যাকা দেন, ইয়াবা নেন।’
কথা বলতে বলতে দু’জন ক্রেতা এসে হাজির। এক হাজার টাকার নোট দিয়ে ৫ পিস চাইলেন। বিক্রেতা একটি সাদা রঙের জিপার থেকে গুণে গুণে ৫ পিস ইয়াবা বের করে দিল। ক্রেতা বেশে ওই ক্রেতাদের একজনের সঙ্গে হাঁটতে হাঁটতে কথা হলো। এখানকার ইয়াবা কেমন? প্রশ্ন করতেই তিনি বলেন, ‘এক নম্বরটা শুধু এখানেই পাওয়া যায়। ট্রেন থেকে পুলিশ যেসব ইয়াবা ধরে, সেগুলো এদের দিয়ে বিক্রি করায়।’
তাহলে আলামত হিসেবে আদালতে কী দেয় পুলিশ? প্রশ্ন করতেই তিনি হো হো করে হেসে বললেন, ‘ওগুলোতো মায়া বড়ি! এ কারণেই সেগুলো কেরোসিন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়।’বাংলামেইলের সৌজন্যে
https://youtu.be/rNQNXAAyTkA
মন্তব্য চালু নেই