‘তুমি তো মহাসচিব থাকার যোগ্য নও!’
বিরোধী দলে থেকে সরকারের অংশীদার হওয়ার ইতিহাস রচনা করেছে জাতীয় পার্টি। এ কারণে প্রকাশ্যে বা গোপনে এ দলের সুবিধাভোগী নেতারা সরকারি দলের তোষামোদ করেন। কিন্তু এবার একটু বাড়াবাড়ি করে ফেললেন স্বয়ং দলের মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু। তিনি চট্টগ্রামে নিজ দল সমর্থিত মেয়র পদপ্রার্থীকে উপেক্ষা করে সরকার দল সমর্থিত মেয়র পদপ্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছেন তিনি। এতে বেজায় ক্ষেপেছেন এরশাদ। এখন পদ রক্ষা করতে পারবেন কি না তা নিয়েও চিন্তিত বাবলু।
জাপার একাধিক নেতা আভাস দিয়েছেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পরপরই বাবলুকে সরিয়ে নতুন কাউকে মহাসচিবের দায়িত্ব দেয়া হবে।
সূত্র জানায়, গত রোববার চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী আ জ ম নাছিরের পক্ষে প্রচারণায় অংশ নেন জাপার মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু। শুধু তা-ই নয়, নাছিরের সঙ্গে একটি ঘরোয়া বৈঠকেও অংশ নেন তিনি।
এ ঘটনার ভিডিও ফুটেজ এখন জাপা চেয়ারম্যানের হাতে। ফুটেজটি দেখার পরই তিনি মহাসচিবের উপর বেজায় চটেছেন। গত সোমবার বনানীর নিজ বাসায় তাকে ডেকে খানিকটা বকাঝকাও করেছেন। দলীয় সূত্রে জানা যায়, বাসায় ডেকে এরশাদ বলেছেন, ‘তুমি কোনোভাবেই জাপার মহাসচিব পদে থাকার যোগ্য নও!’
এছাড়া একটি রাজনৈতিক দলের মহাসচিব হিসেবে সরাসরি স্থানীয় নির্বাচনের প্রচারণায় অংশ নিয়ে আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন তিনি।
সবকিছু মিলিয়ে বেশ বিব্রতকর অবস্থায় আছেন বাবলু। একারণে দলের ডিসিসির মেয়র প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করার জন্য বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন না তিনি।
গত মঙ্গলবার জাপার আয়োজনে পহেলা বৈশাখের একটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকলেও সাংবাদিকদের সামনে সহজভাবে কথা বলতে দেখা যায়নি তাকে। পুরো অনুষ্ঠানে মাথা নত করে ছিলেন। যদিও এর কারণ ওইসময় কেউ জানতে পারেননি।
সূত্র জানায়, এরশাদ বিষয়টিকে খুব গুরুত্বের সাথেই দেখছেন। তাছাড়া মহাসচিব পদ পাওয়ার পর থেকেই নানা বিতর্কের জন্ম দিচ্ছেন বাবলু। তার সঙ্গে নেতাকর্মীদের দূরত্বও তৈরি হয়েছে।
এর আগেও নিজ দলের প্রার্থী ছেড়ে অন্য প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার অভিযোগে ক’দিন আগে তিনজন নেতাকে বহিষ্কার করেন এরশাদ। চেয়ারম্যানের বিশেষ উপদেষ্টা ববি হাজ্জাজ নিজেকে মেয়রপ্রার্থী ঘোষণা করার পর এরশাদ তাকে বহিষ্কার করেন। কিন্তু তার পক্ষে কাজ করার করেন ভাইস চেয়ারম্যান গোলাম মাওলা, জাপার কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক আহমেদসহ একজন ছাত্রসমাজের সাবেক নেতা। এ অভিযোগে এদের বহিষ্কার করা হয়েছে।
তবে দলের ভেতর থেকেই অভিযোগ উঠেছে, ওই তিন নেতাকে বহিষ্কারের ব্যাপারে এরশাদকে প্রচণ্ডভাবে চাপ প্রয়োগ করা হয় এবং পাশাপাশি মঞ্জুর হত্যা মামলায় তিনি ফেঁসে যেতে পারেন বলেও ভয় দেখান মহাসচিব বাবলু, প্রেসিডিয়াম সদস্য চিশতী ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রেজাউল ইসলাম ভুইয়া। এরশাদ তাদের বহিষ্কার করতে চাননি। কিন্তু তাদের চাপের মুখে বাধ্য হন।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে প্রেসিডিয়াম সদস্য পানি সম্পদক মন্ত্রী আনিছুল ইসলাম মাহমুদ, ঢাকা-৫ আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এবং শুনীল শুভ রায় কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, ‘উনি তো সরকারের দালাল হয়েই কাজ করছেন। আর এরই অংশ হিসেবে চট্টগ্রামে গিয়ে তিনি সরকার সমর্থিত মেয়র প্রার্থীর পক্ষেই প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন।’
আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, ‘যখন অন্য কেউ নিদর্লীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেন তখন তো উনি খুব রেগে গিয়ে স্যারকে বুঝিয়ে তাদের বহিষ্কারের ব্যবস্থা করেন। এখন যে উনি এ কাজ করেছেন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য কে বলবে? বাবলুর কাজের শাস্তি হিসেবে তার পদে থাকাটা লজ্জাজনক।’
সূত্র জানায়, ঢাকা উত্তরে ববি হাজ্জাজকে সরিয়ে দেয়া হলেও দক্ষিণে হাজী সাইফুদ্দিন মিলনের পাশাপাশি জাপার আরেকজনকে মেয়র পদে দাঁড় করিয়ে দেয়া হয়েছে। তার নাম ড. ক্যাপ্টেন রেজাউল করিম চৌধুরী। কুমিল্লা থেকে আসার এই ব্যক্তি ইতোমধ্যে দেয়াল ঘড়ি প্রতীক নিয়ে প্রচারণায় চালাচ্ছেন।
সূত্র আরও জানায়, ড. রেজাউল করিম প্রার্থী হতে পারতেন না যদি না মহাসচিব বাবলুর সমর্থন থাকতো।
আরও জানা গেছে, মাস ছয়েক আগে ড. ক্যাপ্টেন রেজাউল করিম চৌধুরীকে দলে আনা হয়। আর এক কাজটি করেন প্রেসিডিয়াম সদস্য এসএম ফয়শাল চিশতী, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রেজাউল ইসলাম ভুইয়া ও মোবারক হোসেন আজাদ।
এ বিষয়টি মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুর সঙ্গে দু’দিন ধরে বারবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
মন্তব্য চালু নেই