‘তিন দৌড়েই’ এগিয়ে আব্বাস
নির্বাচনের দৌড়ে নামা বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাস আয়, ঋণ এবং মামলার দৌড়ে ‘প্রথম’। মামলা না থাকলেও আয় ও দেনায় তার পরেই রয়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী মোহাম্মদ সাঈদ খোকন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে প্রার্থীদের হলফনামা থেকে এ তথ্য মিলেছে।
ঢাকার দুটিসহ তিন সিটি করপোরেশনে মেয়র, কাউন্সিলর পদে রোববার ছিল মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণে মেয়র পদে মোট ২৬ জন মনোনয়ন দাখিল করেছেন।
বাছাই ও প্রত্যাহার শেষে ৯ এপ্রিল প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করবে ইসি।
হলফনামা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বর্তমানে সাঈদ খোকনের নামে কোনো ফৌজদারী মামলা নেই। তবে অতীতে পাঁচটি মামলা ছিল।
মির্জা আব্বাসের নামে বর্তমানে ফৌজদারী মামলার সংখ্যা ৩৭টি ও অতীতে ছিল ২৪টি। এছাড়া বিএনপির অপর নেতা আব্দুস সালামের অতীতে ফৌজদারী মামলা না থাকলেও বর্তমানে তিনটি ফৌজদারী মামলা তদন্তাধীন।
আদালতের আদেশে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতাসহ সাত দফা তথ্য দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। বিধান রয়েছে হলফনামার তথ্য জনসম্মুখে প্রচারেরও।
হলফনামায় দেখা যায়, এই তিন প্রার্থীর মধ্যে সবচেয়ে ধনী মির্জা আব্বাস। সালামের আয় কম হলেও কোনো দেনা নেই, যদিও আব্বাস ও সাঈদ খোকন দেনাগ্রস্ত।
মির্জা আব্বাস উদ্দিন আহমেদ
পেশা ব্যবসা হিসেবে উল্লেখ করা এই বিএনপি নেতা বাৎসরিক আয়ের উৎস হিসেবে দেখিয়েছেন বাড়ি ভাড়া ও শেয়ারে বিনিয়োগকে।
এর মধ্যে বাড়ি ভাড়া থেকে আয় ১ কোটি ৫ লাখ ৮১ হাজার ৫৪৩ টাকা; শেয়ার থেকে ৬ কোটি ২৭ লাখ ১৫ হাজার ২৯০ টাকা এবং অন্যান্য খাত থেকে ১ লাখ ৭৪ হাজার ২৫০ টাকা।
অস্থাবর সম্পদ হিসাবে মির্জা আব্বাসের রয়েছে নগদ ৫০ লাখ টাকা, ব্যাংকে জমা- ১০ লাখ ৬২ হাজার ১২৩ টাকা; বন্ড- ৩৫ কোটি ৬ লাখ ৭৯ হাজার ১শ টাকা ও ৪২ কোটি ৪৮ লাখ ৩৫ হাজার ৮৪৫ টাকা।
তার স্থায়ী আমানত ১০ কোটি ৬৫ লাখ ৫৭ হাজার ১৪৯ টাকা; গাড়ি- ৯৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা; স্বর্ণ- দুই লাখ টাকা, ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী- ১০ লাখ টাকা; আসবাবপত্র-৭ লাখ টাকা ও অন্যান্য- ৯০ লাখ টাকা।
স্থাবর সম্পদের মধ্যে তার নামে অকৃষি জমি দেখানো হয়েছে ১ কোটি ৮৪ লাখ ৮০ হাজার টাকার। এছাড়া প্রায় তিন কোটি টাকা মূল্যের দুটি ভবন রয়েছে।
জমি বায়না বাবদ অগ্রিম ৪ কোটি টাকাও দেখিয়েছেন তিনি।
স্নাতক শিক্ষাগত যোগ্যতার মির্জা আব্বাসের দায়-দেনার মোট পরিমাণ ৭৫ কোটি ৬৫ লাখ ২৫ হাজার ৯০৩ টাকা।
মোহাম্মদ সাইদ খোকন
পেশা হিসেবে ব্যবসাকে উল্লেখ করেছেন আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর নেতা সাঈদ খোকনও।
ছয়টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক এই মনোনয়ন প্রত্যাশীর বাৎসরিক আয়ের উৎস- বাড়ি/অ্যাপার্টমেন্ট/দোকান ও অন্যান্য ভাড়া। এ থেকে বছরে তিনি পান ৩২ লাখ ৩৪ হাজার ১৫০ টাকা।
এছাড়া ব্যবসা থেকে বাৎসরিক আয় ৮ লাখ ৩২ হাজার ৬৩০ টাকা এবং পরিচালক হিসেবে আয় করেন আরও ১ লাখ ৮ হাজার টাকা।
অস্থাবর সম্পদের মধ্যে তার রয়েছে নগদ ১ কোটি ১০ লাখ ৪৬ হাজার ৫৭৮ টাকা; ব্যাংকে জমা রয়েছে ৪৩ হাজার ৪৭৬ টাকা; শেয়ারে বিনিয়োগ ১৭ কোটি ৭১ লাখ ৯০ হাজার ৬৭৫ টাকা ও ১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা; মটর গাড়ি- ৩৮ লাখ টাকা; আসবাবপত্র ও ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী, উপহার সামগ্রী এবং ব্যবসার মূলধন- ৩৪ লাখ ৪ হাজার ৪৮৭ টাকা।
স্থাবর সম্পদ হিসেবে তিনি ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা অকৃষি জমি, ২৬ কোটি ৮৯ লাখ ৪৯ হাজার টাকার আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন এবং পৈত্রিক বাড়ি দেখিয়েছেন।
দায়-দেনার মধ্যে তার ব্যাংক ঋণের পরিমাণ ১৯ কোটি ২৭ লাখ ৭৭ হাজার টাকা। তিনিও স্নাতক ডিগ্রিধারী।
মো. আব্দুস সালাম
অতীতে ফৌজদারী মামলা না থাকলেও বর্তমানে তিনটি ফৌজদারী মামলা তদন্তাধীন রয়েছে তার নামে।
পেশায় ব্যবসায়ী এই বিএনপি নেতার রয়েছে মেসার্স ফয়সাল এন্টারপ্রাইজ ও মেসার্স শাওন সাগর ইন্টারপ্রাইজ নামে দুটি প্রতিষ্ঠান।
আয়ের উৎস হিসেবে তিনি দেখিয়েছেন বাড়ি ভাড়া থেকে ৪ লাখ ৪৫ হাজার ৫শ’ টাকা।
এছাড়া অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে নগদ টাকা-৩২ লাখ ১৯ হাজার ৩৭৮ টাকা; ব্যাংকে জমা- ১৮ লাখ ৫৭ হাজার ১২১ টাকা; গাড়ি (ব্যাংক ঋণের মাধ্যমে); স্বর্ণ- ৩৫ হাজার টাকা।
স্থাবর সম্পদের মধ্যে অকৃষি জমির পরিমাণ ৪২ শতাংশ এবং একটি ছয়তলা ভবন রয়েছে তার। তবে কোনো দায়-দেনা তার নেই বলেও হলফনামায় উল্লেখ করেছেন।
বিএনপির এই নেতারও সর্বোচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতা দেখিয়েছেন স্নাতক।
অন্যদের মধ্যে বিএনপি নেতা নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টু ও আসাদুজ্জামান রিপনও দক্ষিণে মনোনয়ন নিয়েছেন।
মন্তব্য চালু নেই