তিনি কেন মানুষ পুড়িয়ে মারলেন?
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি চাই বেগম খালেদা জিয়া যখন রাস্তায় আসবেন তখন যেন মানুষ তার কাছে জানতে চায় তিনি কেন মানুষ পুড়িয়ে মারলেন। মানুষকে পুড়িয়ে মারার অধিকার তাকে কে দিয়েছে। মানুষ পুড়িয়ে একেকটা পরিবারকে তারা ধ্বংস করেছে, পরিবারের উপার্জনের পথ বন্ধ করে দিয়েছে, স্বামীর কাছ থেকে স্ত্রী ও সন্তানকে কেড়ে নিয়েছে।’
শনিবার বিকেল সাড়ে ৪টায় গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মাওনা চৌরাস্তার ৪৫০ মিটার দীর্ঘ উড়াল সেতু উদ্বোধন শেষে পিয়ার আলী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ মাঠে সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
বিএনপিপন্থি বুদ্ধিজীবীদের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের অনেক শিক্ষিত জন বিএনপির সঙ্গে সরকার উৎখাতে তাল মিলিয়েছে। যাদের মনুষ্যত্ববোধ আছে তারা অন্তত এ জোটের সঙ্গে মানুষ মারার পক্ষে থাকতে পারেন না। যাদের মনুষত্ব নেই তারাই তাদের সঙ্গে তাল মিলিয়েছে। জঙ্গীদের স্থান এ বাংলার মাটিতে হবে না।’
খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘ব্যর্থতার গ্লানি নিয়ে আদালতে তাকে হাজিরা দিতে হয়েছে। এতিমের টাকা মেরে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট করে আদালতে যাবেন না। ক্যাডার বাহিনী নিয়ে আদালতে গিয়েও তিনি ভয় দেখাতে চান। তার এদেশে রাজনীতি করা এবং মানুষের সামনে দাঁড়ানো অধিকার নেই।’
সরকারের উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সুদ আর ঋণের মধ্যেই দরিদ্র মানুষকে বেঁচে থাকতে হয়। একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প হাতে নিলাম। বর্তমানে আমরা একটি পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক করে দিয়েছি। আর এ কারণেই যেন এক ইঞ্চি জমি অনাবাদী না থাকে। উৎপাদনমুখী এবং উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করার পদক্ষেপ নিয়েছি। বর্গা চাষীদের বিনা জামানতে ঋণ দেয়া শুরু করেছি। বিনা জামানতে একজন যুবক দুই লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ নিতে পারবে।’
তিনি বলেন, ‘২০০৯ সালে দ্বিতীয় বারের মতো রাষ্ট্র পরিচালানার দায়িত্ব নিয়ে আমরা সারাদেশে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। এ পর্যন্ত বাস্তবায়িত উল্লেখ্যযোগ্য সেতু প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে কেরানীগঞ্জের শহীদ বুদ্দিজীবী সেতু, টঙ্গীতে শহীদ আহসান উল্ল্যাহ মাস্টার উড়াল সেতু, শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর সুলতানা কামাল সেতু, চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর ওপর হযরত শাহ আমানত (র.) সেতু, সাঙ্গু নদীর ওপর ২১৭.১৫ মিটার রোমা সেতু, ২১৬.৪৪ মিটার থানচি সেতু, রংপুরে তিস্তা নদীর ওপর ৭৫০ মিটার তিস্তা সেতু, করতোয়া নদীর ওপর ৩০৩.৩২ মিটার ওয়াজেদ মিয়া সেতু নির্মাণ করা হয়েছে।’
এছাড়া ঢাকায় ৮০৪ মিটার দীর্ঘ বনানী রেলওয়ে ওভারপাস, মিরপুর-এয়ারপোর্ট ১৭৯৩ মিটার রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান ফ্লাইওভার, পিরোজপুর গোপালগঞ্জ সড়ক উন্নয়ন এবং শেখ লুৎফর রহমান সেতু নির্মাণ করা শেষ হয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতুর মতো বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের মধ্যে দিয়ে আমরা যে আজ পরনির্ভশীল নই তা প্রমাণ করতে যাচ্ছি। ষড়যন্ত্রকারীরা ভেবেছিল বিশ্বব্যাংকের সহায়তা না পেলে পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন করা যাবে না। ইনাশাল্লাহ ২০১৮ সালের মধ্যে পদ্মা সেতু চালু হবে।’
বিগত বিএনপি সরকারের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে রাস্তাঘাটের উন্নয়নের কোনো পরিকল্পনা গ্রহণ করেনি। সময়মত পরিকল্পনা গ্রহণ করলে মানুষকে আজ ভোগান্তির শিকার হতে হতো না। একটা প্রকল্প গ্রহণ করে তা বাস্তবায়ন করতে সময়ের প্রয়োজন, ইনশাল্লাহ অদূর ভবিষ্যতে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে আর যানজট থাকবে না।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের সময়োপযোগী পদক্ষেপের ফলে প্রতিবছরই বাজেটের আকার বেড়েছে। ২০০৫-০৬ অর্থ বছরে বাজেটের আকার ছিল ৬১ হাজার ৫৭ কোটি টাকা। ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে বাজেটের আকার ২ লাখ ৫০ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে বাংলাদেশ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। দেশে পাঁচ হাজার ২৭৫টি ডিজিটাল সেন্টার চালু করা হয়েছে। ঠিক সে সময় বিএনপি-জামায়াত দেশের সম্পদ ধ্বংস করার কাজে লিপ্ত রয়েছে। আন্দোলনের নামে তারা গত তিন মাস ধরে সাধারণ মানুষের ওপর অমানুষিক নির্যাতন করেছে। পেট্রোলবোমা দিয়ে শতাধিক মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে। ওরা দেশ ও দেশের মানুষকে চায় না, চায় ক্ষমতা। ক্ষমতায় গিয়ে জনগণের সম্পদ লুণ্ঠন করার জন্য ওরা মরিয়া হয়ে উঠেছে। কিন্তু জনগণ তাদের প্রত্যাখান করেছে। কারণ জনগণ চাই উন্নয়ন ও শান্তি।’
বিরোধী রাজনীতিকদের হুঁশিয়ার করে তিনি বলেন, ‘আমি দৃঢ় প্রত্যয়ের সঙ্গে বলেতে চাই, জনগণের ভাগ্য নিয়ে আমরা কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেব না। জনবিরোধী কোনো কার্যকলাপ সহ্য করা হবে না। গঠনমূলক রাজনীতি করুন। মানুষ যদি আপনাদের ক্ষমতায় দেখতে চায় তাহলে অবশ্যই আপনারা ক্ষমতায় যাবেন। কিন্তু মানুষ না চাইলে ষড়যন্ত্র, সহিংসতা করে ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখা বন্ধ করুন।’
মন্তব্য চালু নেই