তারেককে ফেরাতে ব্যস্ত তিন মন্ত্রণালয়
বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে লন্ডন থেকে দেশে ফেরত আনার ক্ষেত্রে তৃতীয় ধাপে কাজ করবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে কাজ করবে যথাক্রমে স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়। এই দুটি মন্ত্রণালয় তারেক রহমানকে দেশে ফেরত আনার ব্যাপারে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে। তারা এ ব্যাপারে ফাইল ওয়ার্কও শুরু করেছে।
গত ২৩ জুলাই বুধবার সকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনের আন্ডার সেক্রেটারি হার্বে লেকসুসের সঙ্গে বৈঠক শেষে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এ তথ্য জানান।
তারেক রহমানকে দেশে ফেরানোর ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এ সম্পর্কে বলার কিছু নেই। তিনি ধর্মীয় কাজে মক্কা গেছেন। তাকে দেশে ফেরত আনার ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয় উদ্যোগ নিলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সহযোগিতা করবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তৃতীয় ধাপে কাজ করবে।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘তারেক রহমানকে দেশে ফেরত আনার ব্যাপারে আইন মন্ত্রণালয় অত্যন্ত গোপনে কাজ করে যাচ্ছে।’ এ আর বিস্তারিত তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বড় ছেলে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান বর্তমানে লন্ডনে ফেরারি জীবন যাপন করছেন। প্রায় ৫ বছর যাবৎ চিকিৎসার অজুহাতে সেখানে থাকছেন তিনি। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাসহ বেশক’টি মামলায় ২০০৮ সালে সপরিবারে যুক্তরাজ্য পাড়ি দেন তারেক রহমান। সম্প্রতি তিনি রাজনীতিতেও সক্রিয় হয়েছেন।
আইন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দুটি সূত্র বাংলামেইলকে নিশ্চিত করেছে, খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে দুদকের ২৫টি দুর্নীতি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ৫টি, তারেকের বিরুদ্ধে ১৪টি তার স্ত্রী ডা. জোবায়দার বিরুদ্ধে ১টি এবং খালেদার ছোট জেলে আরাফাত রহমান কোকোর বিরুদ্ধে ৫টি মামলা রয়েছে। ২০০৭ সালে এসব মামলা দায়ের করা হয়। ২০০৯ সালে একটি মামলা প্রত্যাহার করা হয়। ৪টি মামলা উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত হয়েছে।
জীবনে আর রাজনীতি করবেন না এমন মুচলেকা দিয়ে তারেক রহমান চিকিৎসার জন্য প্যারোলে মুক্তি পান। ২০০৮ সালের ১২ সেপ্টেম্বর চিকিৎসার জন্য লন্ডন যান তারেক। লন্ডনের ওয়েলিংটন হসপিটালে চিকিৎসা নেন তিনি।
এদিকে বিভিন্ন মামলার শুনানিতে তারেক রহমান উপস্থিত না হওয়ার কারণে নিম্ন আদালত তাকে পলাতক বিবেচনা করে জামিন আবেদন বাতিল করে দেন। বর্তমানে তিনি বিধি মোতাবেক পলাতক আসামি (ফেরারি)।
উল্লেখ্য, প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যখন কিছু বিদ্রোহী সেনার গুলিতে ১৯৮১ সালের ৩০ মে নিহত হন তখন তারেক রহমান স্কুলের ছাত্র। বাবার মৃত্যু পরে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি তাদের ক্যান্টনমেন্টে একটি বাড়ি দেন। তখন তিনি আদমজী ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভর্তি হন। এরপর ১৯৯১ সালে তার মা বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হন। এই সুবাদে তারেকেরও রাজনীতিতে আসা সহজ হয়।
২০০১ সালে আবারো বিএনপি ক্ষমতায় এলে তারেক রহমান অত্যন্ত ক্ষমতাবান হয়ে ওঠেন বলে বলা হয়। অভিযোগ রয়েছে, রাজনীতি ও প্রশাসন যন্ত্রকে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে বনানীর বহুল বিতর্কিত হাওয়া ভবনের জন্ম দেন তিনি। ২০০১-২০০৬ পর্যন্ত বিএনপির শাসনামলে দেশে জঙ্গিদের উত্থানে তিনিসহ বিএনপির তৎকালীন মন্ত্রিসভার বেশক’জন সদস্যের পৃষ্ঠপোষকতা ছিল বলেও অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া হাওয়া ভবনে হরকাতুল জিহাদের নেতা আব্দুল হান্নান এবং ইয়াহিয়ার সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক এবং ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শেখ হাসিনার সভা চলাকালীন গ্রেনেড হামলার সঙ্গেও তার সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে।
মন্তব্য চালু নেই