অভিজিৎ রায় হত্যা : প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য
তারা ‘অল্পবয়সী’ কিন্তু ‘প্রশিক্ষিত’
দুই ‘অল্পবয়সী’ কিন্তু ‘প্রশিক্ষিত’ দুর্বৃত্তের হামলায় খুন হন লেখক ও মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা অভিজিৎ রায়। ওই হামলায় গুরুতর আহত হন অভিজিতের স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যা (৩০)। প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছে থেকে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
এদিকে পুলিশ বলছে, ওই হামলার সঙ্গে একাধিক দুর্বৃত্ত জড়িত। তারা খুবই প্রশিক্ষিত। কারণ ঘটনা সংঘটিত করে কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই তারা স্থান ত্যাগ করে।
ঘটনাস্থলের পাশে ভ্রাম্যমাণ দোকানের মালিক এবং ওই হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শী এমন দুজন কাছে অজ্ঞাত দুই দুর্বৃত্তের বর্ণনা দেন। তারা অভিজিৎ ও রাফিদাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও নিয়ে যান।
তারা বলেন, অল্পবয়সী দু’জন এসে পেছন থেকে তাদের ওপর আক্রমণ চালায়। তাদের বয়স ২২ থেকে ২৪ বছরের মধ্যে হবে। তাদের একজনের কাঁধে একটি স্কুল ব্যাগ ছিল। ব্যাগ থেকে চাপাতি বের করে পেছন থেকে তাদের মাথায় আঘাত করে দ্রুত পালিয়ে যায়।
তারা আরও বলেন, কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই তারা স্থান ত্যাগ করে। তারা খুবই প্রশিক্ষিত এবং ঘটনাটি অত্যন্ত সুপরিকল্পিত। প্রশিক্ষণ না পেলে এভাবে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করে পালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।
পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, এটি সুপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। এর সঙ্গে একাধিক খুনী জড়িত। হত্যার ধরন দেখে মনে হচ্ছে, কোনো প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী ক্ষিপ্ত হয়ে পরিকল্পিতভাবে এটি ঘটিয়েছে। তারা ভিকটিমদের গতিবিধি পর্যালোচনা করেছে। ভিকটিমরা কখন কোথায় যায়, কি করে এবং কখন ফেরে ইত্যাদি বিষয় নিয়ে ছক তৈরি করে চূড়ান্ত লক্ষ্য স্থির করে। এ কারণে অত্যন্ত জনসমাগম থাকা সত্ত্বেও ভিকটিমদের চিহ্নিত করা হত্যাকারীদের জন্য কোনো ব্যাপার ছিল না। তারা অপরাধ সংঘটনে তেমন সময় নেয়নি এবং ভয়ও পায়নি।
লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির পর শাহবাগ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সুব্রত গোলদার বলেন, অভিজিৎ রায়ের মাথায় (ঘাড়ের উপরে) তিনটি গুরুতর জখম, অন্যপাশে আরও দুটি এবং পিঠে একটি জখমের চিহ্ন রয়েছে। জখমগুলো সমান্তরাল, যেন প্রশিক্ষিত হাতে কোপ দেওয়া হয়েছে।
ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, অভিজিতের মাথায় যে তিনটি আঘাত হয়েছে, তাতে চামড়া ও হাড় ভেদ করে মগজ পর্যন্ত কেটে গেছে। এ ছাড়া শরীরে জখমের আরও কয়েকটি চিহ্ন আছে। ঘটনার পর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, অভিজিতের মাথায় চাপাতি দিয়ে অন্তত ১০টি কোপ দেওয়া হয়েছে। তার স্ত্রীর রাফিদার মাথায় তিনটি কোপ লেগেছে। একপর্যায়ে বাম হাতের বুড়ো আঙ্গুলে কোপ লাগায় তা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) রমনা জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার শেখ মারুফ হাসান বলেন, হামলার বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। ঘটনাস্থল থেকে রক্তমাখা দুটি চাপাতি ও একটি স্কুলব্যাগ উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ রহস্য উদ্ঘাটনে মাঠে নেমেছে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে এসে শুক্রবার সকালে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য বিভাগের (দক্ষিণ) উপ-কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় বলেন, ডিবি পুলিশ মামলার তদন্ত করবে । ঘটনাস্থলের আশপাশে পুলিশ থাকা সত্ত্বেও তাদের গাফিলতি ছিল কীনা- তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ হত্যার পেছনে কারা আছে তাও তদন্ত করে বের করা হবে।
মন্তব্য চালু নেই