তরুণেরা বিপথে : ইসলামের দৃষ্টিতে কারণ ও প্রতিকার
মো: ইয়াছিন মজুমদার : সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ বিশ্বশান্তির জন্য হুমকি। জঙ্গিবাদ উত্থানের পেছনে মূলত আমেরিকা ও তার মিত্র এবং পশ্চিমাদের ভুল নীতি দায়ী। মুসলিম রাষ্ট্র ফিলিস্তিনের অংশবিশেষ দখল করে তৈরি করা হয়েছে ইসরাইল নামক ইহুদি রাষ্ট্র। রাষ্ট্রটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর গায়ের জোরে ও পশ্চিমাদের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ সহযোগিতায় অজগরের মতো ফিলিস্তিনের বাকি ভূমির অধিকাংশ দখল করে নিয়েছে। দখলদারিত্ব আজো চলছে।
পবিত্র রমজান মাসে ফিলিস্তিনিদের পানি সরবরাহ বন্ধ করে দেয়া এমনকি পানিতে বিষ মিশিয়ে দেয়ার হুমকিও দেয়া হয়েছে। ইসরাইল রাষ্ট্র একের পর এক পারমাণবিক অস্ত্রের মজুদ গড়ে তুললেও পশ্চিমা বিশ্ব এ নিয়ে টুঁ শব্দটি করছে না। অপর দিকে সম্পূর্ণ মিথ্যা অজুহাতে সমৃদ্ধ মুসলিম রাষ্ট্র ইরাককে ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে।
সেখানকার অনেক নারী আজ অভাবের তাড়নায় পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রে দেহব্যবসায় লিপ্ত হচ্ছে বলেও শোনা যাচ্ছে। ইরাক আজ ব্যর্থ রাষ্ট্র। জাতিসঙ্ঘ বা বিশবিবেক এর ক্ষতিপূরণ আদায় বা বিচারের বিষয়ে টুঁ শব্দটি করছে না। আমেরিকার টুইন টাওয়ারে হামলার দিন প্রায় চার হাজার ইসরাইলি ইহুদির কেউ কাজে যায়নি। সে বিষয়ে সঠিক তদন্ত না করে আফগানিস্তানে অবস্থানরত ওসামা বিন লাদেন ও তার আলকায়েদা গ্রুপকে দায়ী করে সেই সাথে আফগানিস্তানে তালেবান সরকারকে ওসামা বিন লাদেনকে আশ্রয় দানকারী হিসেবে ঘোষণা দিয়ে হামলা করে ধ্বংস করে ফেলা হয়।
প্রহসনের নির্বাচন দিয়ে সেখানে বসানো হয়েছে আমেরিকার তল্পিবাহক পুতুল সরকার। সেখানে নির্বাচনে জনমতের প্রতিফলন হচ্ছে না। সমৃদ্ধ মুসলিম রাষ্ট্র লিবিয়া পশ্চিমাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে আজ ধ্বংসপ্রায় ও একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র। মিসরের জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকারকে এক বছর পূর্তি হওয়ার আগেই সেনাবাহিনী কর্তৃক উৎখাত করা হলো। নির্বাচিত সরকারকে উৎখাতের কারণে জনগণ আন্দোলন করল।
প্রহসনের বিচারে আন্দোলনকারীদের জেল-জুলুম ও ফাঁসি দেয়া হচ্ছে। গণতন্ত্রের মুখোশধারী আমেরিকা ও তার মিত্ররা সে বিষয়ে টুঁ শব্দটি করছে না বরং তাদের তল্পিবাহক সৌদি আরব সেনাশাসককে সহযোগিতা করছে। বিভিন্ন অজুহাতে মুসলিম রাষ্ট্র ইরানের ওপর হুমকি ও অবরোধ আরোপ করা হয়েছে। মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলমানরা নিজ মাটি থেকে বিতাড়িত হয়ে সাগরে ভাসছে, সলিল সমাধি হচ্ছে। ভারতে বাবরি মসজিদ ধ্বংস করা, গরুর গোশত ভক্ষণকারী সন্দেহে হত্যা করা, কাশ্মির-চেচনিয়া-বসনিয়ায় মুসলিম নির্যাতনে পশ্চিমা বিশ্বের কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ না নেয়া। বিভিন্ন দেশে শিয়া, সুন্নি প্রভৃতি গোত্রীয় বিভেদ সৃষ্টি করে নিজেদের স্বার্থে একটি গ্রুপকে ক্ষমতায় বসানোর চেষ্টায় আত্মঘাতী হামলাসহ অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করা হচ্ছে। এভাবে একের পর এক ইহুদি, খ্রিষ্টান, সাম্রাজ্যবাদী ও ইসলামবিরোধী চক্র মুসলিম স্বার্থের ওপর আঘাত হেনেই যাচ্ছে।
ফলে এক শ্রেণীর মুসলিম যুবকের মধ্যে তাদের প্রতিবিদ্বেষ সৃষ্টি হচ্ছে। এ বিদ্বেষ থেকে জন্ম নিচ্ছে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের। তাই তো বেশির ভাগ হামলা হচ্ছে আমেরিকা ও ইউরোপের নাগরিকদের ওপর। আবার মুসলিম দেশ হয়েও নিজেদের রাজতন্ত্র ও ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য যারা আমেরিকার তল্পিবাহক হয়ে রয়েছে; মধ্যপ্রাচ্যের সেসব মুসলিম দেশেও জঙ্গি হামলা হচ্ছে। অপর দিকে মুসলিম কতিপয় যুবকের এই সেন্টিমেন্টকে কাজে লাগিয়ে ইসলামবিরোধী ইহুদি খ্রিষ্টান চক্র মুসলিম যুবকদের ব্রেইন ওয়াশ করে কৌশলে অস্ত্র ও অর্থ সহযোগিতা দিয়ে ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার নামে মুসলমানদের বিরুদ্ধেই তাদের ব্যবহার করছে। আবার অনেক ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বাজার দখলের জন্য, কোনো দেশ থেকে বিনিয়োগকারীদের নিজ দেশের দিকে ধাবিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট দেশে পরিকল্পিত সন্ত্রাস সৃষ্টি করে সে দেশকে অস্থিতিশীল করে রাখছে। অস্ত্রবিক্রেতা রাষ্ট্রগুলো নিজেদের উৎপাদিত অস্ত্র বিক্রি চালু রাখতে পরিকল্পিত সন্ত্রাস সৃষ্টি করছে।
বিশ্বে অমুসলিমদের ইসলাম গ্রহণের হার তুলনামূলক বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাই ইসলামবিরোধী চক্র মুসলমানদের সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করার জন্য মুসলিম যুবকদের সন্ত্রাসী বানাচ্ছে। বাংলাদেশেও বর্তমানে জঙ্গি হামলা হচ্ছে। এ সন্ত্রাস ও জঙ্গি হামলা
প্রতিরোধে নিন্মোক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।
১. পারিবারিক বন্ধন দৃঢ়করণ ও ইসলামের সঠিক শিক্ষা সম্পর্কে ধারণাদান : বেশির ভাগ বিত্তশালী পরিবার যেখানে স্বামী-স্ত্রী দু’জনে চাকরিজীবী, তাদের সন্তানরা শিশুকালে আয়া-বুয়াদের হাতে মানুষ হয়। শৈশব-কৈশোরে ড্রাইভার, দারোয়ান, কাজের লোকের মাধ্যমে শিক্ষালয়ে আসা-যাওয়া, প্রাইভেট টিউটর-নির্ভর পড়ালেখাÑ এভাবে গড়ে ওঠে। ফলে পরিবারের প্রতি তাদের বন্ধন দৃঢ় হয় না। অপর দিকে মধ্যবিত্ত সন্তানরা মক্তবে, প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সরকার নির্ধারিত ইসলাম শিক্ষা থেকে ইসলাম সম্পর্কে কিছুটা হলেও জ্ঞান লাভ করে। কিন্তু বিত্তশালীদের সন্তানরা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে লেখাপড়া করার কারণে ইসলামের প্রাথমিক জ্ঞান অর্জন থেকে বঞ্চিত হয়। অ্যাডভেঞ্চার ও ভায়োলেন্সের বয়সে পৌঁছলে ধর্ম সম্পর্কে জ্ঞান না থাকার কারণে সন্ত্রাসীরা তাদের ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে বিপথগামী করার সুযোগ পায়।
২. ইসলাম সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ সমর্থন করে না এ তথ্যটির ব্যাপকভাবে প্রচার করা : ইসলাম শান্তির ধর্ম। মানুষ মেরে বা জোর করে ইসলাম প্রচার ইসলামে নিষিদ্ধ। সন্ত্রাসের ভয়াবহ শাস্তি সম্পর্কে কুরআন ও হাদিসের বাণী ব্যাপকভাবে প্রচার করতে হবে। এ বিষয়ে ইমাম, আলেম ওলামা, শিক্ষক, জনপ্রতিনিধিদের কাজে লাগাতে হবে।
৩. জঙ্গিবাদকে নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো পরস্পর কাদা ছোড়াছুড়ি না করা : বাংলাভাই ও শেখ আবদুর রহমানের উত্থান বিএনপি জামায়াতের আমলে হয়। তাই আওয়ামী লীগ দলীয় নেতাদের বক্তব্য হলো বিএনপি-জামায়াতের আমল জঙ্গিবাদের উত্থানের আমল। অপর দিকে জঙ্গিদের কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতৃস্থানীয়দের সন্তান হিসেবে পরিচয় পাওয়ার পর বিএনপি জঙ্গিবাদের সাথে আওয়ামী লীগকে জড়িত করে বক্তব্য দিচ্ছে। এভাবে সরকারি দল বিরোধী দলকে, বিরোধী দল সরকারি দলকে দোষারোপ না করে চিন্তা করতে হবে ‘সন্ত্রাসীরা কোনো দলের নয়’। তারা শুধুই সন্ত্রাসী। সরকারি ও বিরোধী দলসহ সবাইকে তা প্রতিরোধে ভূমিকা রাখতে হবে।
৪. সমস্যা চিহ্নিত করা ও অন্য খাতে প্রবাহিত না করা : সমস্যার মূলে না গিয়ে, উৎস খুঁজে বের না করে মাদরাসাবিদ্বেষী কেউ কেউ বলে বেড়ালেন মাদরাসাগুলো জঙ্গি প্রজনন কেন্দ্র। ফলে জঙ্গি সন্দেহ করা হয় মাদরাসায় পড়ুয়াদের। দৃষ্টি যখন জঙ্গি উৎসের দিকে না হয়ে মাদরাসার দিকে, তখন জঙ্গিরা শক্তি অর্জনের সুযোগ পায়। তাই সমস্যার গভীরে প্রবেশ করতে হবে।
৫. আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের দলীয় কর্মীর মতো বক্তব্য না দেয়া : প্রথমে দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে। সে ঘটনাগুলোয় এবং পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী হত্যার ঘটনায় কোনো কোনো পুলিশ কর্মকর্তা ঘোষণা করলেন যারা হরতাল অবরোধে মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে এ ঘটনা তারাই ঘটিয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের এ ধরনের বক্তব্যে তদন্তের দৃষ্টি সে দিকে ধাবিত হয়। ফলে তদন্ত প্রভাবিত হয়। তাই পুলিশকে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ, প্রভাবমুক্ত থেকে কাজ করতে হবে। আবার কেউ ধরা পড়লে সে আগে কোন দল করত সে বিষয়টি প্রাধান্য পায়। বুঝতে হবে প্রায় সব দলেই দলবদলকৃত লোক আছে, তাই এই বিষয়টি প্রাধান্য দেয়া ঠিক নয়। ১১ জুলাই সীতাকুণ্ডে ধরা পড়া মুসআব মূলত হিন্দু ছিল। তার বাবা পটিয়ার ছনহরা ইউপির অরুণকান্তি দাস। তাই সন্ত্রাসীরা আগে কোন ধর্মের কোন দলের ছিল তা মুখ্য বিষয় নয়।
৬. সাক্ষী ও ধরা পড়াদের যথাযথ হেফাজতের ব্যবস্থা করা : মাদারীপুর সরকারি কলেজের শিক্ষক রিপন চক্রবর্তীকে হত্যাচেষ্টাকারী ফাহিমকে জনগণ হাতেনাতে ধরে পুলিশে দেয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে হয়তো মূল হোতাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করা যেত। কিন্তু ফাহিম কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী হত্যার মূল হোতা মুছার স্ত্রী বলছেন, পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে নিয়ে গেছে। পুলিশ বলছে, তারা কিছুই জানে না। অপর দিকে হত্যাকারী নবী ও রাশেদকে ক্রসফায়ারে হত্যা করা হয়েছে। এ অবস্থা হলে ঘটনার মূলে পৌঁছা কিভাবে সম্ভব হবে? তাই সাক্ষী ও ধরা পড়া আসামিদের যথাযথ হেফাজতের ব্যবস্থা করতে হবে এবং ক্রসফায়ারের ঘটনা নিরপেক্ষ ও যথাযথ তদন্ত করতে হবে।
৭. গার্মেন্ট বাজার দখল করার প্রতিযোগিতা ও দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্তের চেষ্টা কি না তাও খতিয়ে দেখতে হবে : বর্তমান সরকারের আমলে অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ প্রায় সব ক্ষেত্রে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা অর্থাৎ হরতাল-অবরোধ নেই। এ অবস্থা বিরাজমান থাকলে দেশ আরো এগিয়ে যাবে। এতে করে বাংলাদেশের উন্নয়ন যারা চায় না তারা এসব সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাতে পারে। অপর দিকে গুলশানের নিহতদের নয়জন ইতালির নাগরিক। তারা গার্মেন্টের ক্রেতা ও সংশ্লিষ্ট। বাংলাদেশের গার্মেন্টের বাজারকে অন্য কোনো রাষ্ট্রের দিকে ধাবিত করার জন্য সন্ত্রাসী প্রচেষ্টা কি না তা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে এবং বিদেশীদের বাংলাদেশে অবস্থানকালীন নির্দিষ্ট হোটেলে রেখে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা দিতে হবে।
৮. গণতন্ত্রকে আরো সুসংহত করার ব্যবস্থা করা : সরকার, প্রশাসন ও নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ, গ্রামাঞ্চলে আপনাদের অনেক আত্মীয়স্বজন থাকে। তাদের কাছে একটু খোঁজখবর নিন, বিগত কয়েকটি নির্বাচন কিভাবে হয়েছে? নির্বাচনে যদি জনমতের প্রতিফলন না হয় তবে বিরোধী দল এমনকি নিজ দলীয় পরাজিত বা বিদ্রোহী প্রার্থীদের থেকে আন্তরিক সহযোগিতা আশা করা যায় না। তাই অবাধ সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সরকারি ও বিরোধী দলকে একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানে পৌঁছাতে হবে যেন গণতন্ত্র সুসংহত হয়। ক্ষমতা নয় দেশ বড় এ মানসিকতাকে আরো উদার করতে হবে।
৯. বেকার সমস্যা সমাধান ও যুবসমাজকে হতাশা থেকে রক্ষা করা : বাংলাদেশে চাকরির বাজার সীমিত। মহিলা কোটা ও বিভিন্ন কোটার কারণে যুবকদের জন্য চাকরি পাওয়া কঠিন। বেকার যুবকেরা সন্ত্রাসের পথ বেছে নিতে পারে। অপর দিকে অশ্লীলতা ও মিডিয়ায় প্রচারিত নাটক সিনেমায় ভায়োলেন্সের প্রাধান্য থাকায় যুবসমাজ তাতে প্রভাবিত হয়। সরকারিভাবে দেশে-বিদেশে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা, মিডিয়ায় সুস্থ, নির্মল চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা করা। যুবকদের নেশাগ্রস্ত করে সন্ত্রাস চালানো হয় তাই মাদকবিরোধী অভিযান জোরদার করা প্রয়োজন। কোনো এলাকায় অচেনা যুবকদের যাতায়াত ও অবস্থান লক্ষ করা গেলে তাদের খোঁজখবর নিতে হবে এবং প্রয়োজন মনে করলে প্রশাসনকে অবগত করতে হবে।
১০. ধর্মীয় বিধান বাস্তবায়নে সরকারকে ভূমিকা রাখা : এ বিষয়ে প্রথমে একটি উদাহরণ দিচ্ছি ধরা যাক একজন মুসলমান তিন বিঘা জমি রেখে মারা গেল। তার এক ছেলে ও এক মেয়ে ছাড়া আর কোনো ওয়ারিশ নেই। অপর দিকে একজন হিন্দু একই রকম তিন বিঘা জমি রেখে মারা গেল। তারও এক ছেলে ও এক মেয়ে ছাড়া আর কোনো ওয়ারিশ নেই। যদি প্রশ্ন করা হয় কে কতটুকু সম্পদ পাবে? জবাব আসবে মুসলমানের ছেলে দুই বিঘা ও মেয়ে এক বিঘা জমি পাবে। অপর দিকে হিন্দু ব্যক্তির ছেলে তিন বিঘা অর্থাৎ সম্পূর্ণ জমি পাবে, মেয়ে কোনো সম্পদ পাবে না। উল্লিখিত সম্পদ বণ্টন মুসলিম শরিয়া আইন অনুযায়ী মুসলমানদের জন্য এবং হিন্দু ধর্মীয় আইন অনুযায়ী হিন্দুদের জন্য, রাষ্ট্র উভয় ধর্মের বিধান ঠিক রেখে এ আইনটি প্রণয়ন করেছে। ফলে কোনো ধর্মের বিধানের ওপর হস্তক্ষেপ হয়নি। এমনিভাবে রাষ্ট্রীয় সব আইন ধর্মীয় বিধানের সাথে সমন্বয় করে করা হলে শরিয়া আইন বাস্তবায়নের নামে যে সন্ত্রাস হচ্ছে সে পথ বন্ধ হবে। সবাই যার যার ধর্ম পরিপূর্ণ পালনের সুযোগ পাবে।
উল্লিখিত বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে সন্ত্রাসমুক্ত দেশ গড়তে সবাইকে সচেষ্ট হওয়া প্রয়োজন।
লেখক : অধ্যক্ষ, ফুলগাঁও ফাজিল মাদরাসা, লাকসাম, কুমিল্লা
মন্তব্য চালু নেই