তবু তিনি যৌনকর্মী হননি, হয়েছেন দীপিকাদের ছায়া!
চেন্নাই এক্সপ্রেসে থাঙ্গাবলির হাত থেকে শাহরুখকে বাঁচাতে দীপিকা পাডুকোনের পালানোর দৃশ্য। কিংবা উড়তা পঞ্জাবে আলিয়া ভাটের ক্লাইম্যাক্স দৃশ্য। নায়িকার বেশে যিনি মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ শট দিয়ে এ ধরনের দৃশ্যগুলোকে জীবন্ত করে তুলেছেন, তিনি গীতা ট্যান্ডন। তিনিই এখন বলিউডের নাম করা স্টান্টওম্যান। তবে তার আজকের এ সাফল্যের পথটা কিন্তু পাহাড়ি রাস্তার থেকেও বেশি বন্ধুর।
দশ বছরে মাকে হারিয়েছিলেন গীতা। বিয়ে হয় মাত্র ১৫ বছর বয়সে। চোখে রঙিন স্বপ্ন নিয়ে সংসার পাতে ছোট্ট মেয়েটি। কিন্তু পাত্র এক মাতাল। তারপর থেকে প্রতি রাতে…‚ গালিগালাজ ছিল কিশোরীর শয্যাসঙ্গী। না করলেই দেয়ালে মাথা ঠুকে দিত মাতাল স্বামী। বিয়ের পাঁচ বছর পরে তখন নির্যাতিতা তরুণীর কোলে দুই সন্তান।
প্রতি রাতে চিৎকার করতেন গীতা। কেউ আসেনি বাঁচাতে। একদিন আর পারলেন না। দুই সন্তানকে নিয়ে ঘর ছাড়লেন বছর কুড়ির তরুণী। মাথার উপর ছাদ বা পায়ের নিচে মাটি কোনোটাই তখন নেই। সন্তান দুটির হাত ধরে ঘুরেছেন রাস্তায় রাস্তায়।
তিন পেটের ডাল-রুটির জন্য কী না করেছেন তিনি! মেসে রান্না করেছেন। ভাঙড়া দলে নেচেছেন। শেষে তো জীবনের দুর্বিপাকে হয়ে যাচ্ছিলেন যৌনকর্মী। প্রতারিত হতে হতে কোনোমতে বেঁচেছেন।
তবে একদিন একটা ভালো সুযোগ এলো। অবশ্য যা করতে হবে‚ তা বলতে গেলে ছেলেদের কাজ। সেটা হলো নায়িকাদের বডি ডাবলিংয়ের কাজ, অ্যাকশন সিকোয়েন্সে। রাজি হয়ে গেলেন গীতা। খড়কুটোর মতো ওটাই আঁকড়ে ধরলেন তিনি।
গাড়ি চালিয়ে আগুনে ঢুকে যাওয়া‚ উপর থেকে লাফ দেয়া‚ বাইক চালিয়ে হু হু করে বাতাস কেটে এগিয়ে যাওয়া এখন গীতার কাছে নস্য। সাজগোজে কখনো তিনি চেন্নাই এক্সপ্রেসের দীপিকা পাড়ুকোন‚ কখনো অন্য সিনেমায় আলিয়া ভাট‚ করিনা কাপুর বা পরিনীতি চোপড়া। বলিউডে স্টান্টওম্যান হিসেবে এখন তার বেশ নামডাক। থাকেন মুম্বাইয়ের অভিজাত জায়গায় দামি ফ্ল্যাট।
এই দুঃসাহসিনীকে নিয়ে তথ্যচিত্র বানিয়েছেন জয়না মুখার্জি। সেখানে গীতা বলেছেন‚ তিনি একদিন হতে চান দেশের প্রথম নারী অ্যাকশন ডিরেক্টর। সেইসঙ্গে তার বার্তা‚ ছোট্ট জীবনটা আসলে খুব সুন্দর। শুধু পালিয়ে যেও না। জীবনের দিকে ঘুরে লড়াই করো। দেখবে‚ জীবনও তোমাকে খালি হাতে ফেরাবে না। মূল্য দেবে যুদ্ধের।
মন্তব্য চালু নেই