এক অন্ধ বাউলের আত্মকথন :

তবুও ভিক্ষা করি না

প্রতিবন্ধী হলেও তিনি সমাজে কারো কাছে করুণার পাত্র হয়ে না থেকে নিজের চেষ্টায় নিজেকে তুলে ধরেছেন সমাজের কাছে । নিজের কুকিল কণ্ঠে আর দোতারা যন্ত্রের মাধ্যমে প্রতিটি এলাকায় গান গেয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন অন্ধ প্রতিবন্ধি শরিফুল ইসলাম।

গতকাল দুপুরে গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর কলোনী মোড়ে দেখা যায়, শতাধিক উৎসুক জনতা গোলবদ্ধ হয়ে দাড়িয়ে আছে। আর এসব জনতার মাঝখানে দোতরা বাজিয়ে “শুধু গান গেয়ে আমার পরিচয়” এই শিরোনামে মধুর সুরে গান পরিবেশন করেছেন অন্ধ বাউল শরিফুল। এসময় মাতিয়ে উঠেছিল সাদুল্যাপুর উপজেলার সংঙ্গীতপ্রিয় শ্রোতাবৃন্দ। এভাবে তার একাধিক গানে মনোমুগ্ধ হয়ে উঠেন আমজনতা। তার এই গানের উপহার হিসাবে তাকে অনেকেই দিয়েছেন টাকা।

এই শরিফুল ইসলামের বাড়ি গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ী উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়নের ঘোড়াবান্ধা গ্রামে। সে ওই গ্রামের দিনমজুর শাহজাহান মিয়ার ছেলে। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ সে। বয়স সবে মাত্র ৩০ এর কাছাকাছি। জন্মলগ্ন থেকে শরিফুল ইসলাম অন্ধত্ব জীবনের অভিশাপে দুর্বীসহ জীবনের ঘানি নিয়ে কোনমতে বেঁচে আছেন।

বিগত ৭ বৎসর পূর্বে গাইবান্ধা শহরের ডেভিট কোম্পানি পাড়ার ইউসুফ আলীর মেয়ে ইসরাত জাহান খাতুনকে বিয়ে করেন শরিফুল। তাদের দাম্পত্য জীবনে জন্ম নেয় দু’টি সন্তন। প্রথম সন্তান আখিঁ আক্তার (৫) ও রিয়াদ মিয়া (২)। চার সদস্যের এই পরিবারের ব্যয় বহনে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি শরিফুল ইসলাম। শত বেদনার মুখের ছাপ স্ত্রী, সন্তনদের মুখে দু’বেলা দু’মুঠো অন্ন জোগাতে সারাদিন পাঁয়ে হেঁটে বিভিন্ন শহর-বন্দরে গিয়ে নিজের কণ্ঠ আর দোতরা যন্ত্রের মাধ্যমে গান করেন তিনি।

তার এই দোতরা যন্ত্রের আওয়াজ ও কুকিল কণ্ঠের গানে সাড়া জাগিয়েছে শহর-বন্দর ও গ্রামাঞ্চলের মানুষের হৃদয়ে। সংঙ্গীতপ্রিয় মানুষ তাকে অন্ধ বাউল হিসাবে আখ্যায়িত করেছে। এখন সবাই তাকে অন্ধ বলে ডাকেন।

এদিকে চরম হতাসার ছাপ মুখে নিয়ে শরিফুল ইসলাম সাদুল্যাপুর উপজেলার কর্মরত কয়েকজন সাংবাদিককে জানান, আমার এই অন্ধত্ব প্রতিবন্ধী জীবনের ত্রিশ বৎসর অতিবাহিত হলেও কোন সরকারি কিংবা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে সাহায্যে- সহযোগিতা পাইনি। তিনি আরো বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান মাজেদুর রহমান দুলু ও মেম্বর শামসুজ্জোহার সহিত একাধিকবার যোগাযোগ করেও আজ অবধি কোন সহযোগিতা জোটেনি। তবুও কারো করুনার পাত্র না হয়ে গান গেয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন।



মন্তব্য চালু নেই